ভ্রামরী প্রানায়ম (Bhramari Pranayama) একটি নিয়ন্ত্রিত নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের অভ্যাস যা অনেক জায়গায় Humming Bee Breath নামেও পরিচিত । Humming Bee – এরকম নাম হওয়ার কারন, এই প্রানায়ম অভ্যাসের ক্ষেত্রে শ্বাস ছাড়ার সময় আমরা মুখ থেকে মৌমাছির গুনগুনানির মত একটা শব্দ তৈরী করি । মৌমাছির সঙ্গে এই সাদৃশ্যর কারনে এই প্রানায়মের নাম ‘ভ্রামরী’ । ‘ভ্রামরী’ একটি সংস্কৃত শব্দ, যা দেশী কালো মৌমাছিকে চিহ্নিত করে ।
খুব অল্প সময়ের মধ্যে মানসিক শান্তি পাওয়ার জন্য সবথেকে কার্যকারী উপায় হল ভ্রামরী প্রানায়ম (Bhramari Pranayama) । এছাড়া উৎকণ্ঠা, উত্তেজনা বা রাগের মত নেতিবাচক আবেগ নিয়ন্ত্রনের জন্য ভ্রামরী প্রানায়ম অভ্যাস সবথেকে ভালো এবং কার্যকরী উপায় । কর্মস্থল অথবা বাড়ি, যেকোনো জায়গাতেই কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতির কারনে আমাদের মধ্যে মানসিক অশান্তি বা চাপ সৃষ্টি হতে পারে । মস্তিষ্কের স্নায়ুকে শান্ত এবং প্রশমিত করে, নিমেষে নিজেকে চাপ মুক্ত করার জন্য এই প্রানায়ম কর্মস্থলে বা বাড়িতে অভ্যাস করা যেতে পারে ।
নাড়ি শোধন প্রানায়ম এবং কপালভাতি প্রানায়ম অভ্যাসের মত এই প্রানায়ম অভ্যাসের কিছু নির্দিস্ট নিয়ম এবং পদ্ধতি আছে, যা এই প্রানায়ম অভ্যাসের সুফল পেতে সাহায্য করে । তাহলে জেনে নিই সেই পদ্ধতিগুলি কি কি ।
Table of Contents
ভ্রামরী প্রানায়ম (Bhramari Pranayama) অভ্যাসের পদ্ধতি
যেকোনো প্রানায়ম অভ্যাসের বেলায় কিছু সাধারন বিষয় জেনে রাখা দরকার । যেমন প্রানায়ম অভ্যাসের আদর্শ সময় হল সকালবেলা অথবা সন্ধ্যার পরে, যদিও ভ্রামরী প্রানায়ম দিনের যেকোনো সময় অভ্যাস করা যেতে পারে । কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যাতে খাওয়ার পরে অন্তত ৪ ঘন্টা সময়ের তফাৎ থাকে । কারন যেকোনো প্রানায়ম অভ্যাস খালিপেটে অথবা খাওয়ার অন্তত ৪-৫ ঘন্টা পরে করা উচিৎ ।
একটা আরামদায়ক এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন স্থান বেছে নিন প্রানায়ম অভ্যাসের জন্য । মেঝেতে দুই পা ভাঁজ করে (সুখাসনে) অথবা পদ্মাসনে বসুন । বসার সুবিধার্থে কম্বল অথবা কুশন ব্যাবহার করা যেতে পারে । যাদের পক্ষে মেঝেতে বসায় অসুবিধা, তারা চেয়ারে সামনের দিকে এগিয়ে বসেও অভ্যাস করতে পারেন, তবে সেক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন, যাতে আপনার পায়ের পাতা দুটি মাটি স্পর্শ করে থাকে ।
মেরুদন্ড এবং ঘাড় সোজা রেখে বসে, চোখ বন্ধ করুন । এই অবস্থায় ১০-১৫ সেকেন্ড অনুভব করুন আপনি স্বচ্ছন্দবোধ করছেন কিনা । কারন আপনি স্বচ্ছন্দ হলে তবেই সঠিকভাবে প্রানায়ম অভ্যাস করতে পারবেন । ভ্রামরী প্রানায়ম অভ্যাস আমরা একেবারে সরল পদ্ধতিতে করব ।
এবারে তাহলে চলুন পদ্ধতিগুলি এক এক করে জেনে নিই ।
১) চোখ বন্ধ অবস্থায়, ঠোঁট দুটি আলতো করে বন্ধ করুন । এবার লক্ষ্য করুন যাতে মুখের ভিতরে দাঁতের পাটি দুটি একে অপরকে স্পর্শ না করে, এবং অভ্যাসের সময় চোয়ালের উপর যাতে কোনো চাপ না পড়ে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে ।
২) এবারে দুই হাতের তর্জনি, দুই কানের Cartilage বা তরুনাস্থির (গাল এবং কানের সংযোগস্থলের ক্ষুদ্র অস্থি) উপর এমনভাবে রাখুন, যাতে তরুনাস্থির উপর আলতো করে চাপ প্রয়োগ করা যায় । এরকম করার কারন আমরা বাইরের কোনো শব্দকে আমাদের কানের মধ্যে দিয়ে প্রবেশ প্রতিহত করবে ।
৩) নাক দিয়ে ধীরে ধীরে একটা গভীর শ্বাস ভিতরে টানুন । এবার মুখ দিয়ে আস্তে আস্তে নিঃশ্বাস ছাড়ার সময় গলা দিয়ে স্থিরভাবে নিচু স্বরে একটা ‘হুম (humm)’ আওয়াজ করুন । এই শব্দটা আপনার কানে খানিকটা মৌমাছির গুনগুনানির মত মনে হবে, যে কারনে এই প্রানায়মটির নাম ভ্রামরী প্রানায়ম ।
৪) চেষ্টা করবেন যতটা সম্ভব নিচু স্বরে, স্থির এবং অবিচলভাবে আওয়াজটি করার । ভ্রামরী প্রানায়ম কিছুদিন নিয়মিত অভ্যাস করলে, মস্তিষ্কে একটা অনুরণন অনুভব করা যায় । নিঃশ্বাস ছাড়ার সময় ‘হুম’ আওয়াজ করার ফলে জিহ্বার কম্পনের ফলে এর সৃষ্টি হয় ।
৫) এইভাবে ৫ থেকে ৭ বার অভ্যাসের পর হাতদুটিকে আরামদায়কভাবে নিজের কোলের উপর রেখে নিজের নিঃশ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক করার জন্য অন্তত ৫ মিনিট meditation অভ্যাস করুন, এবং এই সময় নিজের প্রতিক্রিয়া অনুভব করার চেষ্টা করুন । শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক হলে আস্তে আস্তে চোখ খুলে নিজের পরবর্তী কাজগুলো একটু মনে মনে গুছিয়ে নিয়ে উঠে পড়তে পারেন ।
ভ্রামরী প্রানায়মের (Bhramari Pranayama) উপকারীতা
নিয়মিত প্রানায়ম অভ্যাসের আমাদের মানসিক এবং শারীরিক বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ । ভ্রামরী প্রানায়ম এর ব্যাতিক্রম নয় । সংক্ষেপে জেনে নিই এর উপকারীতাগুলো কি কি ।
- নিয়মিত ভ্রামরী প্রানায়ম অভ্যাস মানসিক চাপ, উৎকণ্ঠা কমানোর একটি কার্যকরী উপায় । এর ফলে উচ্চরক্তচাপ থেকে যারা ভুগছেন, তাদের উপকার হয় ।
- নিমেষের মধ্যে টেনশন, রাগ, উত্তেজনা প্রশমন করার জন্য ভ্রামরী প্রানায়ম অভ্যাস খুবই ভালো ।
- স্নায়ুকে শান্ত করে, ফলে অযাচিত উত্তেজনা হয় না ।
- পিটুইটারি গ্রন্থিকে উদ্দীপ্ত করে, ফলে এটি সঠিকভাবে কাজ করে ।
- ইনসোমনিয়া (Insomnia) বা অনিদ্রা দূর করে । এছাড়াও ঘুমের মান ভালো করে ।
সতর্কতা
ভ্রামরী প্রানায়ম অভ্যাসের কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই । কিন্তু ভুল পদ্ধতিতে অভ্যাসের ফলে কিছু অসুবিধা দেখা দিতে পারে । সেক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী । কারন প্রানায়ম অভ্যাস করার উদ্দেশ্য নিজেদের উন্নতি করা । কিন্তু অসাবধানতার ফলে কোন ক্ষতি কোনোভাবেই কাম্য নয় ।
১) খেয়াল রাখবেন, হাতের তর্জনি Cartilage বা তরুনাস্থির বদলে যাতে কানের ভেতরে না প্রবেশ করে ।
২) তরুনাস্থির উপরে কখনোই বেশী চাপ দেওয়া উচিৎ না । আলতো করে তর্জনির সাহায্যে এর উপরে চাপ দেওয়াই যথেষ্ট ।
৩) একসঙ্গে ‘হুম’ শব্দ করার এবং নিঃশ্বাস ছাড়ার সময়, লক্ষ্য রাখবেন যাতে মুখের উপর বিশেষত চোয়ালের উপর চাপ না পড়ে ।
৪) ‘হুম’ শব্দ করার সময় ঠোঁটের উপর হাল্কা চাপ দিয়ে মুখ যাতে বন্ধ থাকে সেদিকে খেয়াল রাখবেন ।
৫) কানের কোনো সমস্যা থাকলে সেটা সেরে না ওঠা পর্যন্ত কখনোই ভ্রামরী প্রানায়ম অভ্যাস করবেন না ।
৬) প্রানায়ম অভ্যাস চলাকালীন ক্লান্তি বা কোনোরকম অস্বস্থি অনুভব করলে, তৎক্ষণাৎ প্রানায়ম অভ্যাস বন্ধ করুন । কিছুক্ষন বিশ্রাম নিন বা meditation করুন । তারপর আবারও চেষ্টা করুন ।
সারমর্ম
উপরে যে পদ্ধতিটি ধাপে ধাপে দেওয়া হয়েছে, এটা ভ্রামরী প্রানায়ম অভ্যাসের একটি সরল এবং সহজ পদ্ধতি । যারা প্রাথমিকভাবে শুরু করছেন, তারা এই প্রানায়ম অভ্যাসের ক্ষেত্রে কোনোরকম সমস্যা এড়ানোর জন্য, উপরের পদ্ধতিগুলি সঠিকভাবে অনুসরণ করুন অথবা কোনো অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অভ্যাস করুন ।
নিয়মিত ভ্রামরী প্রানায়ম অভ্যাস আমাদের জন্য খুবই উপকারী । তবে যারা দীর্ঘদিন ধরে কান, মাথা, স্নায়ু বা এইধরনের কোনো সমস্যায় ভুগছেন, তারা অবশ্যই শুরু করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নেবেন । প্রানায়ম সংক্রান্ত কোনো তথ্য জানার থাকলে প্রানায়মের ব্লগটি একবার অবশ্যই দেখে নেবেন । যদি কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানান । ইমেলের মাধ্যমেও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন । ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং অন্যদের সুস্থ থাকতে উৎসাহিত করুন ।
Five rounds are enough to get full benefits or not ? Pse suggest me.
During initial stage, five round is more than enough to get full benefit. In later stage you can increase the number.