গর্ভাবস্থায় meditation (meditation during pregnancy) নিয়ে কথা শুরু করার আগে একটা কথা বলা দরকার । মা হওয়া প্রতিটি নারীর কাছে এক গর্বের বিষয় এবং গর্ভধারনকাল প্রতিটা নারীর জন্য এক অতুলনীয় এবং সমান্তরালভাবে একটা কঠিন সময় । প্রতিটা মা জানেন কিভাবে তার আসন্ন সন্তান এবং নিজের প্রতি যত্ন নিতে হয় । তবুও বেশকিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় তারা এই সুন্দর মূহুর্তগুলো হারিয়ে ফেলেন ঐ সময়ের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক এবং মানসিক সমস্যার জন্য ।
নিজের শরীরে বাড়তে থাকা শিশুটির জন্য প্রতি মূহুর্তে চিন্তা থেকে মানসিক চাপ, নানারকম ভয়, উদ্বেগ, অপ্রয়োজনীয় উত্তেজনা এই ধরনের মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হয় । এছাড়াও অতিরিক্ত মানসিক চাপ থেকে উচ্চরক্তচাপের মত সমস্যা দেখা দিতে পারে । এই সময়ে মহিলাদের শারীরিক পরিবর্তন, হঠাৎ হঠাৎ মেজাজের পরিবর্তন এধরনের হাজারটা সমস্যার কারনে নিজের শরীরে একটা প্রাণের সৃষ্টি থেকে তার বেড়ে ওঠা, তাকে অনুভব করা, তার সঙ্গে নিজেকে জুড়ে নেওয়ার মত সুন্দর মুহুর্তগুলো উপভোগ করতে পারে না ।
সাধারণত চিকিৎসকেরা অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের একটা উপদেশ দিয়ে থাকেন – “নিজেকে শুনুন (listen yourself)”, কিন্তু প্রশ্ন হল কিভাবে নিজেকে শুনবেন ।
এটি একটি সহজ সরল পদ্ধতি, যেটা অভ্যাসের মাধ্যমে নিজের সঙ্গে, নিজের শরীরের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ে, নিজেকে অনুভব করতে সুবিধা হয় । গর্ভাবস্থার কারনে সৃষ্টি হওয়া সমস্যার থেকে মুক্তি পেয়ে নিজের এই সুন্দর মূহুর্তগূলো উপভোগ করতে পারে ।
Table of Contents
Meditation কি
কোন নির্দিস্ট সংজ্ঞার মাধ্যমে meditation কে বিবৃত করা সম্ভব নয় । কারন বহু প্রচলিত পন্থার মাধ্যমে meditation অভ্যাস করা যায় । যে পদ্ধতিতে আমরা স্বচ্ছন্দ সেভাবেই অভ্যাস করা উচিৎ, তাহলে প্রতিদিন অভ্যাসের জন্য একঘেয়েমি আসে না এবং রোজ নতুনভাবে উৎসাহ পাওয়া যায় । পদ্ধতি যাই হোক, meditation করার মূল উদ্দেশ্য মনোসংযোগ বৃদ্ধি, নিজেকে অনেক বেশী সচেতন করা তোলা ।
খুব সহজভাবে গর্ভাবস্থায় meditation (meditation during pregnancy) এর অর্থ প্রতিটা অঙ্গপ্রত্যঙ্গর মাধ্যমে গভীরভাবে নিজের শ্বাস-প্রশ্বাস অনুভব করা, যাতে আপনি প্রতিটা মুহুর্তে আপনার ভেতরে বেড়ে ওঠা শিশুটিকে অনুভব করতে পারেন ।
উপকারীতাগুলি কি কি
শুরুতেই হয়তো আপনি কিছু পরিবর্তন টের পাবেন না, কিন্তু নিয়মিত অভ্যাসের ফলে কিছু শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তন আসে, যা আপনাকে গর্ভাবস্থায় কঠিন পরিস্থিতি সামলাতে সাহায্য করবে । লক্ষণীয় কিছু ভালো পরিবর্তনগুলি নিজে তালিকা আকারে দেওয়া হল ।
- মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ নিয়ন্ত্রনে থাকে, যার ফলে রক্তচাপ (Blood Pressure) নিয়ন্ত্রনে থাকে এবং Cortisol hormone বা stress hormone এর স্তর নামে ।
- এই সময় হঠাৎ হঠাত উত্তেজিত হয়ে পড়া বিভিন্ন রকম সমস্যা সৃষ্টি করে । নিয়মিত meditation অভ্যাসের ফলে নিজের উপর নিয়ন্ত্রন বাড়ে, তাই উত্তেজনার মুহুর্তেও নিজেকে সামলে নিতে অসুবিধা হয় না ।
- মন যত বেশী অশান্ত হবে, উত্তেজনা বাড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় । Meditation মনকে শান্ত করে অতিরিক্ত উত্তেজিত হওয়া রোধ করে ।
- পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুম খুব প্রয়োজন নিজের এবং শিশুটির সুস্থ থাকার জন্য । প্রতিনিয়ত অভ্যাসের ফলে ঘুম ভালো হয়, এবং এতে দুজনের সুস্থ থাকতে পারে ।
- এইসময় বিভিন্ন রকম উদ্ভট চিন্তা মাথায় আসে এবং যার ফলে অনেক রকম শারীরিক সমস্যা হতে পারে । Mindfulness এর অভ্যাসের মাধ্যমে আমরা এমনভাবে অভ্যস্ত হয়ে উঠি, যাতে যেকোনো চিন্তা ভাবনাকে আমরা বিচার বিবেচনা করে তবেই সেটাতে প্রতিক্রিয়া দিই । ফলে অপ্রয়োজনীয় দুশ্চিন্তা হলেও সেটাতে হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে নিজেকে অসুস্থ করার প্রবনতা কমে যায় ।
- নিজের শারীরিক পরিবর্তনগুলিকে সঠিকভাবে বোঝা এবং কি কি করণীয় সে বিষয়ে নিজে সচেতন থাকা খুব প্রয়োজন । প্রতিদিন meditation অভ্যাস অনেক বেশী সচেতন করে তোলে, তাই এইসময় আকস্মিক সমস্যা কিছুটা হলেও এড়ানো যায় ।
এছাড়াও meditation এর মাধ্যমে নিজেকে মানসিকভাবে তৈরী রাখা যায় যাতে আকস্মিক এবং অযাচিত কোন পরিস্থিতিতে সহসা নিজের উপর নিয়ন্ত্রন না হারায় । প্রসবকালীন সমস্ত পরিস্থিতির জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখা যায় ।
গর্ভাবস্থায় meditation (Meditation during pregnancy)
শুধু meditation এর উপকারীতা জেনে বা বুঝে আপনি উপকার পাবেন না । নিজের এবং নিজের সন্তানের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে meditation কে নিজের দৈনন্দিন জীবনে অন্তর্ভুক্ত করা খুব প্রয়োজন । অভ্যাসের পদ্ধতি বা কোনভাবে করা উচিৎ, এসব নিয়ে বিশেষ কোনো সতর্কতা অবলম্বনের দরকার নেই । কারন meditation অভ্যাস করার মূল উদ্দেশ্য কঠিন সময়ে আপনার স্বচ্ছন্দ জীবনযাপন । তবুও এই বিষয়ে বিশদে জানার থাকলে Meditation সংক্রান্ত ব্লগটি পড়ে নিতে পারেন । তবে নিজের অভ্যাসের ক্ষেত্রে নিজের আরাম এবং সুবিধা এগুলিকে প্রাধান্য দেওয়া জরুরি ।
কোন ধরনের Meditation করা উচিৎ
নিজেকে মানসিক এবং শারীরিকভাবে আরও উন্নত করে তোলার জন্য প্রতিদিন meditation অভ্যাস করা প্রয়োজন । সকাল অথবা সন্ধ্যায় নিজের সুবিধামত সময়ে আরামদায়ক জায়গা বেছে নিয়ে স্বচ্ছন্দভাবে বসে অভ্যাস করা উচিৎ । তবে মূল প্রশ্ন কোন ধরনের meditation অভ্যাস করা উচিৎ ।
এখানে একটা কথা জেনে রাখা দরকার । প্রতিটা মানুষের নিজস্ব পছন্দ বা চাহিদা থাকে এবং meditation form বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রেও সেটা মাথায় রাখতে হবে । তবে প্রাথমিকভাবে যে meditation form গুলি কোনো প্রশিক্ষকের সাহায্য ছাড়া অভ্যাস করতে পারেন সেগুলি হল – Mindfulness, Focused এবং Mantra Meditation ।
নিজের পছন্দ অনুযায়ী meditation বেছে নেওয়ার জন্য সব form অভ্যাস করলে বুঝতে সুবিধা হবে । যে meditation form এ নিজেকে স্বচ্ছন্দ মনে হবে সেটা নিজের জন্য বেছে নেওয়া যেতে পারে । যদি বিভিন্ন ধরনের meditation form সম্পর্কে আপনার জানার আগ্রহ থাকে, তাহলে বিভিন্ন ধরনের meditation সংক্রান্ত ব্লগটি একবার দেখে নিতে পারেন ।
সতর্কতা
সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, meditation, যোগব্যায়াম বা যেকোনো ধরনের শরীরচর্চা শুরু করার আগে অবশ্যই নিজের চিকিৎসক অথবা কোন অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের পরামর্শ নেওয়া খুব প্রয়োজন, কারন আপনাকে নিজের এবং নিজের আসন্ন সন্তানের প্রতি সতর্ক থাকা আপনার কর্তব্য । কোনো দীর্ঘকালীন অসুস্থতা বা কোনরকম মানসিক আঘাত জনিত সমস্যা থাকলেও অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে গর্ভাবস্থায় meditation (meditation during pregnancy) শুরু করার কথা ভাবা উচিৎ ।
আশা করি এই ব্লগটি কিছুটা হলেও আপনাদের সাহায্য করবে একটা সুন্দর সময়কে উপভোগ করতে । আপনার যদি কোনো মতামত থাকে, কোনো প্রশ্ন থাকে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানান । ইমেল এর মাধ্যমেও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন । ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং অন্যদের সুস্থ থাকতে উৎসাহিত করুন ।