flame-focus

বিভিন্ন ধরনের meditation গুলি হল (Types of meditation)

Meditation একটি প্রাচীন প্রথা যা বর্তমানে সমগ্র পৃথিবীর চর্চার বিষয় । মানসিক শান্তি, অনিদ্রা বা আধ্যাত্মিক জ্ঞানার্জন এরকম ক্ষেত্রে এটি আমাদের প্রভুত সাহায্য করে থাকে । আমরা এখানে বিভিন্ন ধরনের meditation (different types of meditation) নিয়ে আলোচনা করব, তবে তার আগে কিছু কথা জানা দরকার ।    

পৃথিবীর অনেকাংশেই মূলত প্রাচ্যভাগে meditation কে একটি ধর্মীয় আচার হিসেবে পালন করা হয় । কিন্তু প্রকৃতঅর্থে এটি কোন ভক্তিমূল্‌ক রীতি নয় । বরং একটি মাধ্যম নিজেকে জানার, সচেতন হওয়ার এবং মানসিক শান্তি খুঁজে পাওয়ার ।

কিন্তু এক্ষেত্রে একটা প্রশ্ন থেকে যায় । Meditation কি এবং কেন করব? Meditation সম্পর্কে বিশদে জানতে আমাদের Meditation কি এবং এর উপকারীতা লেখাটি পড়ে নিন । আশা করি এর সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন । এখন মনে হতেই পারে যে সবাই কি একই meditation করবে, যেখানে এত ধরনের meditation এর ব্যাপারে আমরা শুনতে পাই । আমরা একজন মানুষ অন্যজনের থেকে সম্পুর্ণ আলাদা, চাহিদা বা স্বভাবও আলাদা । তাই সবার ক্ষেত্রে একরকম meditation অভ্যাস প্রযোজ্য হবে না । অনেক ধরনের মধ্যে থেকে ৬টি meditation এর ব্যাপারে জানব ।

যে ৬ ধরনের meditation নিয়ে আমরা আলোচনা করব সেগুলি হল –

Mindfulness Meditation

এক ব্যাক্তি তার বাড়ির দোতলা থেকে একতলায় নামার সময় হঠাৎ সিঁড়ির একটা ধাপ ছেড়ে পরের ধাপে পা দেন, এবং পায়ে আঘাত পান । এই ধরনের ঘটনা খুবই সাধারন । অনেকসময় এরকম ঘটে থাকে আর আমরা ছোট দুর্ঘটনা ভেবে ছেড়ে দিই । তাই তো ?

এটি একটি উদাহরণ মাত্র । কিন্তু প্রকৃতঅর্থে ঐরকম সময় কি হয়? আমরা অতীতের বা ভবিষ্যতের কোন ঘটনা নিয়ে ভাবতে থাকি আবার কখনো দুশ্চিন্তা করি যার ফলে আমাদের মনোযোগ বর্তমান থেকে সরে যায় এবং এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে । এই ধরনের মানসিক স্থিতিকে বলে “Mindlessness” ।

mindfulness-meditation-written
Mindfulness

এর অভ্যাসের ফলে আমাদের মনোযোগ বাড়ে, নিজের প্রতি এবং চারপাশে যা ঘটছে সে সর্ম্পকে অনেক বেশী সচেতন করে । মানুষের স্বভাব নানারক্‌ম চিন্তা ভাবনা করা সবসময় যার ফলে আমরা কোন একটা কাজ করার সময় অন্য চিন্তা করতে শুরু করি । যেমন এই লেখাটি পরার সময় যদি আপনি অন্য চিন্তা করেন তাহলে পরা হয়ে গেলেও মনে রাখতে পারবেন না ।

Mindfulness meditation যারা নিয়মিত চর্চা করে থাকেন তারা যেকোন কঠিন পরিস্থীতি মাথা ঠান্ডা রেখে সামলে নিতে পারেন । এছাড়াও এর অন্য কিছু উপকারীতা হল মানসিক অবষাদ, অপ্রয়োজনীয় উত্তেজনা, অনিদ্রা এসব থেকে মুক্তি ।

এই meditation টি কাদের জন্য প্রযোজ্য – যারা নিজেরা meditation করতে চান অথবা কোন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যাওয়া সম্ভব না । একারনে এটিকে unguided meditation ও বলা যায় ।

Focused Meditation

মাল্টি-টাস্কিং (Multi Tasking) কথাটির সঙ্গে আমরা সকলেই কমবেশী পরিচিত । যার অর্থ একের বেশী কাজ একই সময়ে করা । কিন্তু আমরা যন্ত্র নই, তাই এক সময়ে আমরা একটা কাজ সঠিক ভাবে করতে পারি । যেমন চা খেতে খেতে টিভি দেখা খুব সাধারন ব্যাপার কিন্তু খেয়াল করলে দেখা যাবে টিভি দেখতে গিয়ে চায়ের স্বাদ অনুভব করতে পারিনি । অথবা চায়ের স্বাদ নিতে গিয়ে টিভিতে কি কথা চলছিল শোণা হয়নি । কারন আমরা একসঙ্গে দুটোতে মনোযোগ দিতে পারিনি ।

চা বা টিভি কোনোটাই সেই অর্থে গুরুত্বপূর্ণ নয়, কিন্তু এটা একটা উদাহরন মাত্র । প্রায় সবক্ষেত্রেই আমরা  কাজ করার সময় এরকম হয়ে থাকে । আমরা আমাদের focus একসময়ে কোন এক বিষয়ে রাখতে পারিনা । Focused Meditation – এর নিয়মিত অভ্যাস আমাদের কোন একটি বিষয়ে focus বাড়াতে বা রাখতে সাহায্য করে ।

আমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয় –র মধ্যে যে কোন একটি দিয়েই এই meditation টি চর্চা করা যায় ।যেমন নিজের নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের উপর মনোযোগ, মোম বাতির শিখার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা, কোন ঘন্টাধ্বনি শোনা অথবা পুতির মালার পুতি গোনা ।

                

focused-meditation-flame-stare
Woman practicing meditation

যারা প্রাথমিক meditation অনুশীলনকারী তাদের কাছে ব্যাপারটা খুব সহজ বলে মনে হতে পারে । কিন্তু প্রাথমিকভাবে ২-৩ মিনিটের বেশী মনোসংযোগ রাখা কঠিন মনে হবে । তবে অভ্যাসের ফলে আয়ত্ত করা সম্ভব ।

এই meditation টি কাদের জন্য প্রযোজ্য – যাদের ফোকাস করার ক্ষমতা খুব কম তাদের জন্য এটি খুবই ফলপ্রসূ meditation form । এছাড়াও focused meditation  এর মাধ্যমে প্রথমবার meditation শুরু করা যেতে পারে ।

Movement Meditation

Gym  এ একটা কথা খুব প্রচলিত, সেটা হল Mind-Muscle Connection । সহজ কথায় এর অর্থ যখন আমরা gym এ কোন একটি নির্দিস্ট মাংসপেশীর ব্যায়াম করি আমাদের মনোযোগ ঐ মাংসপেশীর উপর দিতে হবে । এতে সেই নির্দিস্ট মাংসপেশী গুলির বিকাশ তাড়াতাড়ি হয় । আমরা এটাকেও meditation বলতে পারি, তবে এটি অন্যান্য meditation এর থেকে আলাদা ।

যেখানে অন্য সব meditation form এ এক স্থানে স্থির ভাবে বসে চোখ বন্ধ রেখে অভ্যাস করতে হয়, movement meditation এম্‌ন একটি meditation form যা একজন মানুষ তার নড়াচড়ার মধ্য দিয়ে বা কোন একধরনের কাজের মধ্যে দিয়ে করতে পারে ।যেমন বাগানে পায়চারী করা, গাছের পরিচর্যা করা অথবা যোগব্যায়াম । যেকোন ধরনের শরীরচর্চাকেই এই ধারায় মেনে নেওয়া যায় কারন আমরা যখন শরীরচর্চা করি সাধারণত আমাদের পুরো মনোযোগ তাতেই সীমাবদ্ধ রাখতে পারি ।

চাইনীজ মার্শাল আর্ট তাই-চি্‌ (Tai – chi) movement meditation  এর একটি প্রকৃষ্ঠ উদাহরণ ।

Tai-chi by Pixabay

এই meditation টি কাদের জন্য প্রযোজ্য – যারা একজায়গায় বেশিক্ষণ স্থিরভাবে থাকতে পারে না বা যারা শরীরচর্চার মধ্যে নিজের মানসিক শান্তি খুঁজে পায় তাদের জন্য এই meditation টি উপকারী ।

Mantra Meditation

Mantra বা মন্ত্র একটি শব্দ বা বাক্য যা mantra meditation  এর সময় বারবার উচ্চারণ করা হয় । মন্ত্র উচ্চারণ জোরে বা আস্তে আওয়াজ করে অথবা একান্ত মনে মনে করা যায় এ ক্ষেত্রে কোন বাধা নিষেধ নেই । ‘মন্ত্র’ একটি সংস্কৃত শব্দ যার উৎস এবং অর্থ নিয়ে বহু ব্যাখ্যা আছে । তবে সবথেকে বেশী গৃহীত অর্থটি হল “চিন্তা-ভাবনা করা (to think)”

আমাদের শারীরিক ও মানসিক উন্নতির জন্য Mantra meditation যথেস্ট গুরুত্বপূর্ণ ।যেমন জোরে মন্ত্রোচ্চারণের সময় মন্ত্রের মাধ্যমে একটি কম্পন সৃষ্টি হয় যা আমাদের মধ্যে পজিটিভ শক্তি সঞ্চার করে । এছাড়াও জিভের কম্পনের মাধ্যামে আমরা যখন মন্ত্রোচ্চারণ করি তখন আমাদের এন্ডোক্রিন তন্ত্রের কিছু গ্রন্থিকে উদ্দীপনা দেয় যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন হরমোন পরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রন করে ।

Mantra Meditation করার আগে নিজেকে জানতে ও বুঝতে হবে এটি করার কারন । প্রতিটা মানুষের meditation করার কারন ভিন্ন । কেউ আধ্যাত্মিক অগ্রগতির জন্য meditation করে, কেউ শারীরিক উন্নতির জন্য, কেউ মানসিক শান্তির জন্য আবার কেউ focus বৃদ্ধির জন্য । নিজের meditation করার উদ্দেশ্য জেনে সেই অনুযায়ী মন্ত্র নির্বাচন করতে হয় । তবে সবথেকে প্রচলিত এবং জনপ্রিয় মন্ত্রটি হল ওম (Om) বা অউম (AUM) । এটি প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যে বহু প্রচলিত একটি মন্ত্র ।

om-symbol-orange
Aum or Om symbol

মন্ত্র উচ্চারণের সময় সমস্ত focus মন্ত্রের উপর নিবদ্ধ থাকে, যার ফলে আমাদের চিন্তাভাবনা সাধারণত ঐ মন্ত্রকে কেন্দ্রীভূত করে ঘুরতে থাকে । এবং এতে আমরা আমাদের চারপাশ সম্বন্ধে অনেক সচেতন হতে পারি । Mantra Meditation মূলত Mindfulness Meditation এর মত, শুধু নিজের শ্বাস প্রশ্বাসের বদলে নিজের ঠিক করা মন্ত্র উচ্চারনের উপর মনোযোগ দিতে হয় ।

এই meditation টি কাদের জন্য প্রযোজ্য – যারা নিজের শ্বাস-প্রশ্বাসের থেকে বারবার উচ্চারিত কোন শব্দের উপর ফোকাস করা সহজ মনে করে তাদের জন্য এই meditation টি প্রযোজ্য ।

Transcendental Meditation

Mantra Meditation এর ক্ষেত্রে মন্ত্র আমরা নিজেরা নির্বাচন করে থাকি আমাদের meditation করার উদ্দেশ্য অনুযায়ী ।কিন্তু transcendental meditation  এর বেলায় মন্ত্রটি প্রদত্ত । অর্থাৎ প্রতিটা অভ্যাসকারীর জন্য আলাদা আলাদা ভাবে নির্দিস্ট মন্ত্র দেওয়া হয় meditation বা ধ্যান করার জন্য । Transcendental Meditation  একটি Guided Meditation form, অর্থাৎ এটি করার জন্য একজন প্রশিক্ষক বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন । ঐ প্রশিক্ষক বা প্রতিষ্ঠান থেকেই অভ্যাসকারীকে মন্ত্র দেওয়া হয় ।

বর্তমানে এটি একটি বহুলপ্রচলিত এবং সবথেকে জনপ্রিয় meditation form । মহাঋষি মহেশ যোগী ১৯৫৫ সালে এটির প্রশিক্ষণের সূচনা করেন । পরবর্তীকালে দেশে বিদেশে বহু স্থানে বহু মানুষ কে তিনি Transcendental Meditation (TM) পদ্ধতি শেখান । এদের মধ্যে অনেকেই এখন TM পদ্ধতির প্রশিক্ষক হিসেবে যুক্ত । ১৯৬০ সালে সূচনা হয় মহাঋষি ইফেক্ট (Maharishi Effect) – এর এবং ১৯৭৬ সালে সূচনা করেন TM Sidhi কর্মসূচীর ।

maharishi-mahesh-yogi
মহাঋষি মহেশ যোগী (১৯১৮-২০০৮)

Transcendental meditation অভ্যাসকারীদের মনোযোগ, সচেতনতা, মানসিক শান্তি এসবের পাশাপাশি নতুন কিছু শেখার ক্ষমতা, কর্মক্ষমতা, ব্যক্তিত্বর উন্নতি ঘটে । এছাড়াও Maharishi Effect – এর মাধ্যমে অভ্যাসকারীর চারপাশের মানুষের চিন্তাভাবনার উন্নতি হয়, এবং পর্যবেক্ষন করে দেখা গেছে TM অভ্যাসকারীর আশেপাশের মানুষের অপরাধ করার প্রবণতা কমে যায় ।

এই meditation টি কাদের জন্য প্রযোজ্য – Meditation এর সম্পর্কে আগ্রহী এবং একান্ত ইচ্ছুক ব্যক্তি কোন TM শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই meditation টি শিখে অভ্যাস করতে পারেন ।

Spiritual Meditation

এই ধরনের Meditation  প্রাচ্যের কিছু ধর্মের রীতি হিসেবে প্রচলিত আছে,  যেমন হিন্দু ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম, ডাও ধর্ম ইত্যাদি ।  এছাড়াও খ্রীষ্টান ধর্মের কিছু মতেও spiritual meditation  এর রেওয়াজ আছে ।

spiritual-meditation
Spiritual Meditation

Spiritual Meditation  নিজের বাড়িতে অথবা আরাধনা স্থলে পা ভাঁজ করে অথবা হাঁটু মুড়ে বসে করা যায় । ঈশ্বরের সঙ্গে গভীরভাবে একাত্ম হওয়ার চিরাচরিত প্রথা ঈশ্বরের আরাধনা করা । Spiritual meditation অভ্যাসের মাধ্যমে ঈশ্বরের আরাধনা এক পুরাতন রীতি । এটি একটি অভিজ্ঞতা, নিজেকে গভীরভাবে জানার, নিজের সম্পর্কে অনেক বেশী সচেতন হওয়ার যার ফলে অভ্যাসকারীর গুণগত মান উন্নত হয় ।

এই meditation টি কাদের জন্য প্রযোজ্য – আধ্যাত্মিক পথে যারা এগোতে চান spiritual meditation তাদের সহায়ক হতে পারে ।

সারমর্ম

মানসিক চাপ অথবা অনিদ্রা থেকে মুক্তি, উদ্দেগ অথবা উত্তেজনা হ্রাস বা নিজেকে আধ্যাত্মিক জ্ঞ্যানে আলোকিত করা, আমাদের উদ্দেশ্য যেটাই হোক, meditation আমাদের সাহায্য করে । কিন্তু কোন meditation form টি আমাদের জন্য ঠিক? প্রকৃতঅর্থে এই প্রশ্নের কোন উত্তর হয় না ।তাই লেখা পড়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বদলে meditation অভ্যাস করতে শুরু করুন । আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন কোনটা আপনার জন্য সঠিক meditation form ।

Meditation শরীরকে বা মনকে কষ্ট দিয়ে করার দরকার নেই । তাতে বিরক্তি বা হতাশা আসে । জোর করে করলে কাজ বলে মনে হবে । ধীরেসুস্থে সঠিক meditation টি বেছে নিয়ে নিয়মিত অভ্যাসের ফলে  আকর্ষণীয় এবং ফলপ্রসূ হয়ে উঠবে ।

আশা করি, লেখাটি পড়ে আপনাদের ভালো লেগেছে । নীচে কমেন্টের মাধ্যমে আপনার মতামত আমাদের জানান । এছাড়া meditation কোন প্রশ্ন থাকলে কিংবা physical বা mental fitness এর কোন বিষয়ে জানার থাকলে, আমাদের জানাতে ভুলবেন না ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

Tell us how we can improve this post?

Leave a Reply

Scroll to Top