ঘুমের সমস্যার ক্ষেত্রে meditation (meditation for sleep disorder) আমাদের কিভাবে উপকার করতে পারে বা কোন কোন ধরনের meditation আমরা ঘুমানোর আগে অভ্যাস করতে পারি সেটাই আমাদের মূল আলোচ্য বিষয় । কিন্তু সমস্যার সমাধান জানার আগে একটু জেনে নেওয়া দরকার যে সাধারনভাবে আমাদের ঘুমের সমস্যা কেন হয় । কারন সমস্যাটা সঠিকভাবে জানলে তবেই না সমাধান সঠিকভাবে করতে পারব ।
খাদ্য, জল, অক্সিজেন এগুলোর মত ঘুম একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমাদের সুস্থ এবং ভালো থাকার জন্য । আমরা সবসময় শুনে থাকি একজন মানুষের প্রতিদিন ৭-৮ ঘন্টা ভালো ঘুমের দরকার পুরোদিনের কর্মক্ষমতা বজায় রাখার জন্য । কিন্তু বিভিন্ন কারনে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে । যেমন মানসিক পীড়ন, নানারকম দুশ্চিন্তা, কোনোরকম অসুস্থতা, উত্তেজনা, ঘুমের কোনো নির্দিস্ট সময় না থাকা, খাওয়া দাওয়ার সমস্যা ইত্যাদি । আর একটা গুরুত্বপূর্ণ কারন হল ঘুমের আগে মোবাইল ফোনের ব্যাবহার বা TV দেখা ।
National Institute of Mental Health and Neurosciences (NIMHANS) পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে শোয়ার সময় মোবাইল ব্যাবহারের ফলে ঘুমের মান নষ্ট হয় এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে । সেক্ষেত্রে অনেকেই পরামর্শ দিয়ে থাকেন শুতে যাওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট আগে থেকে মোবাইল ফোন বা যেকোনো ধরনের গ্যাজেটের ব্যাবহার না করার জন্য ।
Table of Contents
সঠিক পরিমানে এবং সঠিক মানের ঘুম আমাদের সকলের একান্ত প্রয়োজন । কিন্তু যেকোনো কারনেই হোক, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেটা হয়ে ওঠে না । যার ফলে সারাদিন ক্লান্ত, কাজে অনিহা, উৎসাহের অভাব এইধরনের সমস্যা দেখা যায় । দীর্ঘসময় ধরে অনিয়মিত ঘুমের ফলে স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা, হৃদরোগের সম্ভাবনা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে ।
যদি আপনার ঘুমের সমস্যার কারন মানসিক চাপ, অবসাদ, উদ্বেগ বা উত্তেজনা হয়, সেক্ষেত্রে meditation আপনার ঘুমের (meditation for sleep) সহায়ক হতে পারে । নিয়মিত meditation অভ্যাস আপনার মানসিক চাপ, অবসাদ, উদ্বেগ বা উত্তেজনা কমিয়ে অনেকবেশী শান্ত করবে, যার ফলে আপনার ঘুমের মান উন্নত হবে ।
অত্যাধিক উত্তেজনা বা চাপ আমাদের শরীরের স্ট্রেস হরমোন অর্থাৎ অ্যাড্রেনালিন এবং কর্টিসোল এর ক্ষরণ বৃদ্ধি করে এবং তার ফলে আমাদের ঘুমের বিঘ্ন ঘটে । নিয়মিত meditation অভ্যাস স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরন কমাতে সাহায্য করে ।
Meditation এমন একটি অভ্যাস যা যেকোনো স্থানে বা যেকোনো সময়ে অভ্যাস করা যেতে পারে এবং এর জন্য কোনো নির্দিস্ট পরিস্থিতির প্রয়োজন নেই । দিনের যেকোনো সময়ে কয়েক মিনিট অভ্যাস করলেই চলে । তবে নিয়মিত meditation অভ্যাস একটা ধৈর্যের বিষয় । কারন প্রাথমিকভাবে যারা শুরু করবেন, তাদের কাছে কিছুটা একঘেয়েমি লাগবে । তাই ধৈর্যসহকারে কিছুদিন অভ্যাস করলে এবং এর উপকারীতা বুঝতে শুরু করলে, তখন নিজে থেকেই উৎসাহ পাবেন নিয়মিত অভ্যাসের জন্য ।
যে পদ্ধতিতে meditation অভ্যাস শুরু করতে পারেন সেগুলি সংক্ষেপে নিচে দেওয়া হল-
১) একটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং শান্ত জায়গা meditation অভ্যাসের ক্ষেত্রে আদর্শ ।
২) Meditation অভ্যাসের আদর্শ সময় সকালবেলা, অর্থাৎ ঘুম থেকে ওঠার পরে খালিপেটে । কিন্তু আপনার ঘুমের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ঘুমাতে যাওয়ার আগে বিছানাতে বসে বা শুয়ে অভ্যাস করা যেতে পারে ।
৩) চোখ বন্ধ করে নিজের প্রতিটা শ্বাস প্রশ্বাস কে অনুভব করার চেষ্টা করুন ।
৪) নানারকম চিন্তা ভাবনা মাথায় আসবে । কিন্তু সেগুলো নিয়ে বিরক্ত বা উদ্বিগ্ন হবেন না । বরং যেসব চিন্তা মাথায় আসছে সেগুলোকে ভালো করে লক্ষ্য করুন । তারপরে চেষ্টা করুন নিজের মনোযোগ আবারও নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের প্রতি ফিরিয়ে আনার ।
প্রথমদিকে ধৈর্য সহকারে ৪ থেকে ৫ মিনিট অভ্যাস করুন । আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে উঠলে নিজের সুবিধামত সেটাকে ১৫ থেকে ২০ মিনিট করতে পারেন ।
যা সাধারনত guided meditation হিসেবে পরিচিত । কিন্তু কিছু meditation form আপনি নিজেই করতে পারেন । আবার অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের সাহায্য নিয়ে অভ্যাস করা যেতে পারে । কয়েক প্রকারের meditation form যা আপনি নিজেই অভ্যাস করতে পারেন ।
Meditation অভ্যাস শুরু করার সবথেকে সহজ এবং ভালো উপায়গুলির মধ্যে এটি একটি । এক্ষেত্রে সম্পুর্ন মনোযোগ থাকে নিজের শ্বাস প্রশ্বাসের প্রতি । সবার আগে একটা শান্ত পরিবেশ বেছে নিন । পারতপক্ষে নিজের মোবাইল ফোন থেকেও দূরে থাকুন । বসে অথবা শুয়ে চোখ বন্ধ করে, নিজের প্রতিটা নিঃশ্বাস প্রশ্বাস অনুভব করার চেষ্টা করুন ।
প্রথম প্রথম মনোযোগ একভাবে শ্বাস প্রশ্বাসের উপর নিবদ্ধ রাখার ক্ষেত্রে অসুবিধা হতে পারে । বিভিন্ন রকম চিন্তা ভাবনা মাথায় আসবে, কিন্তু সেগুলো নিয়ে কোনোভাবে উত্তেজিত বা উদ্বিগ্ন না হয়ে সেগুলো ভালোভাবে লক্ষ্য করুন । এবং আস্তে আস্তে নিজের মনোযোগ নিজের শ্বাস প্রশ্বাসের উপর ফিরিয়ে আনুন ।
প্রতিদিন কিছুক্ষন mindfulness অভ্যাস নিজেকে মানসিক দিক থেকে শান্ত করে, যার ফলে ভালো ঘুম হয় ।
RELATED : DIFFERENT TYPES OF MEDITATION
যখন অন্য কোন ব্যক্তি আপনাকে meditation অভ্যাসের পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত করে, বা উপদেষ্টা হিসেবে সাহায্য করেন এটি guided meditation হিসেবে পরিচিত । অনেক পদ্ধতিতেই এটা অভ্যাস করা যেতে পারে, তবে যিনি আপনাকে guide করছেন সবটাই নির্ভর করছে তার উপরে । তবে যাদের ক্ষেত্রে কোনো প্রশিক্ষকের কাছে শেখা সম্ভব না, তারা অন্য পন্থা অবলম্বন করতে পারেন ।
Meditation সংক্রান্ত Mobile Application, Youtube ভিডিয়ো বা রেকর্ডিং আপনার guide হিসেবে ব্যাবহার করতে পারেন । এতে meditation অভ্যাসের পদ্ধতি ধাপে ধাপে সহজভাবে উল্লেখ করা থাকে, যা আপনাকে সাহায্য করবে সঠিকভাবে meditation অভ্যাস করার জন্য ।
সাধারনত meditation অভ্যাসে সেরকম কোনো ঝুকির ব্যাপার থাকে না । কিছু ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে অভ্যাস কখনোই উচিৎ নয় । যেমন কারোর যদি মানসিক সমস্যা থাকে, সেক্ষেত্রে meditation অভ্যাস সেই প্রবনতা বাড়িয়ে দিতে পারে ।
রাতের ভালো ঘুম, একজন মানুষের সারাদিনের কাজ করার ক্ষমতা যোগান দেয় । এখানে একটা বিষয় বুঝতে হবে যে প্রতিটা মানুষের ঘুমের ধরন ভিন্ন এবং ঘুমের সমস্যার কারন ভিন্ন । তাই আপনাকে আগে নিজের সমস্যা বুঝতে হবে, এবং সেইমত ব্যাবস্থা নিতে হবে ।
Meditation অভ্যাস আপনাকে মানসিকভাবে শান্ত করে ঘুমের মান উন্নত করবে, কিন্তু পাশাপাশি কিছু ব্যাপার আপনাকেও মেনে চলতে হবে ঘুমের সমস্যা দূর করার জন্য । ঘুমানোর স্থান অর্থাৎ শোবার ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, যেকোনো ধরনের গ্যাজেট যেমন মোবাইল, TV এইসব থেকে দূরে থাকা, ঘুমানোর একটা নির্দিস্ট সময় তৈরী করা, শান্ত পরিবেশ এবং অল্প আলোয় ঘুমানোর অভ্যাস করা ইত্যাদি ।
যদি আপনার ঘুমের সমস্যা থাকে, তাহলে চেষ্টা করুন এইসকল অভ্যাস রপ্ত করার । আশা করি আপনার ঘুমের সমস্যা মিটবে । ঘুমের সমস্যা আমাদের অনেকের কাছেই একটা সাধারন ব্যাপার । আশা করি আমাদের এই লেখাটি কিছুটা হলেও আপনাদের এই সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়ার পথ দেখাবে । যদি এই বিষয়ে কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের অবশ্যই জানান । এছাড়া মেসেজ বা ইমেলের মাধ্যমেও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন ।
সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন এবং অন্যদের সুস্থ থাকতে উৎসাহিত করুন ।
আমরা সাধারনত একটা কথা বলে থাকি যে কোনোকিছুই অতিরিক্ত ভালো না । এই একই কথা…
শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক উন্নতিসাধনের জন্য প্রাচীনকাল থেকেই একটি বহুল প্রচলিত অভ্যাসের নাম হল “যোগ”…
‘স্বাস্থ্য’ কথাটা শুনলে আমরা সাধারনভাবে শুধু শরীরের কথাই ভেবেথাকি, ঠিক পদ্ধতিতে জীবনযাপনের ক্ষেত্রে শারীরিক স্বাস্থ্যের…
প্রাচীনকাল থেকে যেসকল কৃষিজ শষ্য মানবজাতির কাছে খাদ্যবস্তু হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে তার মধ্যে ডাল (Lens…
সূচনা (Introduction) প্রোটিন (Protein) একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাক্রোনিইট্রিয়েন্ট (Macronutrient) যার উৎস (protein sources) আমাদের প্রতিদিনের গ্রহন…
যোগাভ্যাসের বিভিন্ন ধরনের আসন, যা আমাদের দেহের নীচের অংশ যেমন পা, কোমর পেট এবং পিঠ…
View Comments
I must say u r improving day by day..all the best for ur future blogs..
Thank you for your kind support.