বর্তমান সময়ে একটা শিশুর জন্য meditation (meditation for children) খুবই গুরুত্বপূর্ণ । একজন শিশুর সুস্থ স্বাভাবিক বড় হওয়ার জন্য যেমন তার চারপাশের পরিবেশ সুস্থ হওয়া প্রয়োজন ঠিক তেমনই একটা শিশুর বর্তমান দিনগুলি সুস্থ এবং হাসিখুশি ভাবে চলা খুবই প্রয়োজন । কিন্তু পড়াশোনার চাপ যেভাবে উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে তেমন ভাবেই বেড়ে চলেছে বাবা মায়ের শিশুদের নিয়ে প্রত্যাশা । কারন এখন প্রতিযোগিতার যুগ, তাই শিশুকাল থেকেই সেই প্রতিযোগিতায় যোগ না দিলে পিছিয়ে পড়ার সম্ভাবনা থেকে যায়, এবং কোন অভিভাবক সেই ঝুঁকি নিতে চাইবেন না ।
এর পাশাপাশি আছে অন্যান্য বিষয় যেমন নাচ, গান, খেলাধূলা । কিন্তু সমস্যা হল এতো চাপের ফলে শিশুদের নিজেদের উপর আস্থা কমে যায় । এবং এতে ধীরে ধীরে অমনোযোগীতা, অবাধ্যতা এইধরনের লক্ষণ দেখা যায় আর পড়াশুনার মান কমে যায় । প্রতিযোগীতা থেকে দূরে সরে যায় যেটা অভিভাবকের কাছে কোনভাবেই কাম্য নয় ।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত meditation অভ্যাসের ফলে শিশুদের মধ্যে কিছু ইতিবাচক বৈশিষ্ঠ্য তৈরী হয়, যেমন আত্মনিয়ন্ত্রন, মনোযোগ বৃদ্ধি, সহমর্মিতা, অন্যদের প্রতি সম্মানজনক মনোভাব ইত্যাদি । এছাড়াও প্রতিদিন meditation অভ্যাসের ফলে শিশুদের মধ্যে কিছু স্বাভাবিক ক্ষমতা গঠন হয় যার ফলে তারা খুব সহজেই হতাশা, বিষন্নতা, অতিরিক্ত পড়াশুনার চাপ এই ধরনের সমস্যাগুলিকে সামলাতে পারে ।
Table of Contents
শিশুর সঙ্গে Meditation এর পরিচিতি
Meditation একটি শিশুর বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ উভয় ক্ষেত্রেই লাভদায়ক, সেক্ষেত্রে শৈশব থেকেই meditation এর অভ্যাস করানো ভালো । কিন্তু এই ব্যাপারে দায়িত্ব নিতে হবে বাবা মা, শিক্ষক-শিক্ষিকা অথবা যারা শিশুর দেখাশুণা করে তাদের, যারা শিশুটির প্রতি সহানুভূতিশীল এবং প্রকৃতঅর্থেই একটি শিশুটির ভালো চান । একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য যেমন প্রথম প্রথম meditation একটি একঘেয়েমি অভ্যাস মনে হয়, একটি শিশুর ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা ঠিক একইরকম । তাই কোনভাবে জোর করে meditation করানোর চেষ্টা করে কিছু লাভ হবে না । তাতে শিশুরা meditation (meditation for children) এর প্রতি বিরক্ত হয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে । বরং তাদের কে ধৈর্য নিয়ে meditation এর ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলতে হবে, যেমনভাবে আমরা নিজেদের ক্ষেত্রে করি ।
আমরা সকলেই জানি শিশুদের শেখার ক্ষমতা অনেক বেশী, কারন তাদের মধ্যে কৌতুহল অনেক বেশী ।
তাই ধৈর্য নিয়ে সঠিক পদ্ধতিতে একটি শিশুকে নিয়মিত meditation অভ্যাস করালে দীর্ঘ মেয়াদি সুফল পাওয়া যাবে । বর্তমানে অনেক শিশু তার অধিকাংশ অবসর সময় কাটায় মোবাইল বা ভিডিও গেম খেলে, যা পরবর্তী কালে তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায় । এবং ধীরে ধীরে এই মোবাইল বা ভিডিও গেম আসক্তি, শিশুদের বিক্ষিপ্ত মনোভাবের কারন হয়ে দাড়ায় । এমনকি World Health Organisation (WHO) তাদের International Classification of Diseases এর ১১ তম সংস্করনে (ICD-11) “গেমিং ডিসঅর্ডার (Gaming Disorder)” কে তাদের “আসক্তি মূলক মানসিক পরিস্থিতি” তালিকার অন্তর্ভুক্ত করেছে ।
Mindfulness Meditation এর মাধ্যমে একটি শিশুর স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ ও একাগ্রতা বৃদ্ধি পায় । ঠিক-ভুল বিচার করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় । এবং এর ফলে তারা নিজেরাই ঠিক করে নিতে পারে কোনটা তাদের জন্য সঠিক ।
Meditation এর উপকারীতা
এবার আসুন সংক্ষেপে জেনে নিই meditation এর উপকারীতা, যা আপনাকে কিছুটা হলেও আগ্রহী করে তুলবে আপনার শিশুটিকে meditation এর জগতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য ।
- উন্নত ফোকাস – যেসকল শিশুরা সাধারণত মোবাইল বা ভিডিও গেমে আসক্ত তাদের জন্য কোন একটি বিষয়ে ফোকাস করা বা মনোযোগ দেওয়া কঠিন হয় । Meditation শিশুদের ফোকাস বাড়িয়ে তাদের একটা সময়ে কোন একটি নির্দিস্ট বিষয়ে মনোযোগ দিতে সাহায্য করে ।
- সহানুভূতিশীল হতে শেখায় – Meditation অভ্যাসের ফলে একটি শিশুর মধ্যে সহমর্মিতার প্রকাশ পায়, যা তাকে অন্যদের সম্মান করতে শেখায় এবং সকলের সঙ্গে উন্নত সম্পর্ক বজায় থাকে ।
- সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম – নিয়মিত meditation অভ্যাস একটি শিশুকে মানসিক ভাবে দৃঢ় করে এবং ঠিক-ভুল বিচার করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে । এর ফলে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয় এবং যার ফলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে ।
শিশুদের জন্য meditation এর পদ্ধতি (Meditation for Children)
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য meditation অভ্যাস যতটা কঠিন, একটি শিশুর জন্য তার থেকে একটু বেশী কঠিন, কারন শিশুরা সাধারণত তুলনামূলক চঞ্চল মস্তিষ্ক হয় । তাছাড়া প্রাথমিকভাবে একটি শিশুর বসার ব্যাপারে কোনো জোর দেওয়ার দরকার নেই । শিশুকে meditation এর সঙ্গে পরিচিতি করানোর ক্ষেত্রে বড়দের অনেক বেশী ধৈর্যশীল হতে হবে । তাই সঠিক উপায় অবলম্বন না করলে সফলতা পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম । তা হলে জেনে নিই সহজ এবং কার্যকর কয়েকটি উপায় ।
- কোন একটি নির্দিস্ট বস্তুর উপর মনোযোগ দেওয়া ।এই পদ্ধতিতে meditation শুরু করার আগে শিশুদের সামনে একটা ছোট বস্তু যেমন পাথর, ফুল অথবা অন্য কোন দৃশ্যমান বস্তু রাখতে হবে । যা শিশুর জন্য focal point হিসেবে কাজ করবে । এবং শিশুকে খুব সহজ ভাবে বোঝাতে হবে যেন পরের কিছুটা সময় তার মনোযোগ ঐ বস্তুর উপর নিবদ্ধ থাকে ।কিন্তু কোনভাবেই তার উপর জোর করা যাবে না । এতে সে meditation এর প্রতি বিরক্ত হয়ে যাবে, যা তাকে meditation অভ্যাসে বিরত করবে ।
- নির্দিস্ট একটা শব্দের প্রতি মনোযোগ দেওয়া । যেমন একটি বস্তু focal point হতে পারে, ঠিক তেমনই কোন একটি নির্দিস্ট শব্দ যেমন ঘন্টাধ্বনি, উইন্ডচাইমের শব্দ অথবা ঘড়ির টিক টিক শব্দ focal point হিসেবে কাজ করে । শিশুর মনোযোগ ঐ শব্দের প্রতি নিবদ্ধ করতে সাহায্য করা এবং meditation পর্বের পরে শিশুর উপলব্ধি শোনা এক্ষেত্রে প্রশিক্ষকের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ । এতে শিশুর মধ্যে উৎসাহ বাড়বে meditation এর প্রতি ।
- নিশ্বাস-প্রশ্বাসের প্রতি মনোযোগ দেওয়া । শিশুদের ক্ষেত্রে তুলনামূলক কঠিন পদ্ধতি, কারন এতে শিশুকে নিজের শ্বাস- প্রশ্বাসের উপর মনোযোগ দিতে হয় । এই পদ্ধতি প্রয়োগের জন্য meditation অভ্যাসকারী কারোর সাহায্য নেওয়া বাঞ্ছনীয় । একজন অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক শিশুকে সহজভাবে তার মনোযোগ নিশ্বাসের প্রতি নিবদ্ধ করতে সাহায্য করবে, এবং meditation করার পরে শিশুটির অভিজ্ঞতা শোনা দরকার ।
প্রতিটি ক্ষেত্রেই শিশুর মনে কিছু প্রশ্ন তৈরী হবে এবং সেগুলোর উত্তব খুব যত্ন সহকারে প্রশিক্ষক বা অভিভাবক কে দিতে হবে, যাতে তারা নতুন করে উৎসাহ পায় পরের দিন meditation (meditation for children) অভ্যাস করার জন্য ।
শিশুকে meditation এর সঙ্গে পরিচিতি করানোর উপায়
একটি শিশু নিজে থেকে meditation সম্পর্কে উৎসাহ পাবে যখন সঠিক ভাবে তাকে meditation এর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় । পরিচিত করানোর কিছু সহজ সরল উপায় হল –
- শিশুকে meditation এর ব্যাপারে উৎসাহিত করার জন্য তার সামনে দৃষ্টান্ত তৈরী করা প্রয়োজন ।যখন একটি শিশু তার পরিচিত মানুষদের meditation করতে দেখে তখন তার মধ্যে কৌতুহল তৈরী হয়, এবং সে নিজে থেকেই চেষ্টা করে বড়দের অনুসরণ করার ।
- Meditation করার পরে শিশুর অভিজ্ঞতা এবং প্রতিক্রিয়া জানা । প্রাথমিকভাবে meditation করার পরে শিশুর মধ্যে অনেক প্রশ্ন তৈরী হবে, একটা অন্যরকম অনুভূতি তৈরী হবে । এবং তখন বড়দের দায়িত্ব সেগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনা, তার যথাযথ উত্তর দেওয়া ।
- শিশুর জন্য meditation কে মজাদার করে তুলতে হবে । শিশুর মানসিকতা অনুযায়ী পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে ।
- যতটা সম্ভব সহজ এবং আকর্ষক পদ্ধতিতে meditation অভ্যাস করাতে হবে । Meditation একটি অভ্যাস যেটা যেকোন বয়সের মানুষ করতে পারে । কিন্তু শিশুদের জন্য পদ্ধতি যতটা সহজ রাখা যায় ততটাই ভালো । যেমন নির্দিস্ট শব্দের প্রতি মনোযোগ একটা সহজ পদ্ধতি শিশুদের meditation এর জন্য ।
সারমর্ম
আপনি যখন এই লেখাটি পড়ছেন তাহলে বুঝতে হবে আপনি আপনার সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যর ব্যাপারে যথেস্ট যত্নশীল । তাহলে যতটা শীঘ্র সম্ভব আপনার শিশুটিকে meditation (meditation for children) এর জগতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া আপনার দায়িত্ব । এক্ষেত্রে আপনি নিজে meditation অভ্যাসকারী হলে আপনার জন্য সুবিধা হবে । কিন্তু যদি আপনি meditation সঙ্গে পরিচিত না থাকেন তাহলে অনুরোধ করব, আগে নিজে কিছুদিন অভ্যাস করুন । আপনার অভিজ্ঞতা সাহায্য করবে আপনার শিশুর meditation অভ্যাসের সফলতায় ।
যদি এই লেখাটি আপনাকে কিছুটা সাহায্য করে আপনার শিশুটিকে একটা সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য, তাহলে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানান । আপনার মতামত আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ন । আপনার শিশুর অভিজ্ঞতা আমাদের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না । ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং অন্যকে সুস্থ থাকতে উৎসাহিত করুন ।