আমরা সকলেই জানি যে জল আমাদের শরীরের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান, কারন জল শুধুমাত্র আমাদের তৃষ্ণা মেটাতে কাজে লাগে এমন নয় । সমস্ত শারীরিক কার্যকলাপ সঠিকভাবে হওয়ার জন্য এবং সুস্থ থাকার জন্যও জলের প্রয়োজন । মানবদেহের প্রায় প্রতিটা অঙ্গের সঠিক পরিচালনা এবং কাজ করার জন্য জলের প্রয়োজন । এই নিবন্ধে আমরা মানবদেহে জলের গুরুত্ব (importance of water) নিয়ে আলোচনা করেছি ।
আমাদের শারীরিক গঠনের উপাদানগুলির মধ্যে জল একটি অন্যতম উপাদান । একটি মানুষের শরীর গড় ৬০% জল দিয়ে তৈরী যদিও বয়স, লিঙ্গ এবং জল পান করার প্রবনতার উপর এর তারতম্য দেখা যায় । সদ্যজাত শিশুদের শরীরে জলের পরিমান বেশী থাকে, এবং যত বয়স বাড়তে থাকে শরীরের জলের পরিমান কমতে থাকে । শরীরে জলের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য প্রতিদিন পরিমান মত জল পান করা একান্ত প্রয়োজন ।
Table of Contents
- 1 জল পানের প্রয়োজনীয়তা (Importance of water intake)
- 1.0.1 ১) শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করতে সাহায্য করে
- 1.0.2 ২) দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করতে সাহায্য করে
- 1.0.3 ৩) দেহের বিভিন্ন কলা, গ্রন্থি, হাড়ের জয়েন্ট সতেজ রাখে
- 1.0.4 ৪) খাওয়ার হজমে সাহায্য করে
- 1.0.5 ৫) কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে
- 1.0.6 ৬) শরীরে nutrient শোষনে সাহায্য করে
- 1.0.7 ৭) সুস্থ ত্বকের জন্য জল পান করা প্রয়োজন
- 1.0.8 8) জলশূন্যতা বা dehydration প্রতিরোধ করে
- 1.0.9 শরীরে জলের ঘাটতি বোঝার উপায়
- 1.0.10 কত পরিমান জল পান করা উচিৎ
- 1.1 সারমর্ম
- 1.2 একই রকম কিছু বিষয়
জল পানের প্রয়োজনীয়তা (Importance of water intake)
সময়মত এবং পরিমানমত জল পান করার ফলে যেধরনের লাভ পাওয়া যেতে পারে সেগুলি হল –
১) শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করতে সাহায্য করে
যথাযথ পরিমানে জল পান করার ফলে আমাদের শরীরের বর্জ্য বা waste আমাদের শরীর থেকে মল, মূত্র এবং ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায় । কিডনির সাহায্যে বর্জ্য পদার্থ মূত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়, ফলে যথেষ্ট পরিমান জল কিডনির কার্যপ্রনালী নিয়ন্ত্রিত রাখতে সাহায্য করে এবং কিডনির উপর কম চাপ পড়ে ।
২) দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করতে সাহায্য করে
যথেষ্ট পরিমান জল পান করার ফলে দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকে । আমাদের শরীর থেকে ঘামের (শারীরিক পরিশ্রম এবং গরম আবহাওয়ার কারনে) মাধ্যমে প্রচুর পরিমানে জল বেরিয়ে যায় । ঘাম সাধারনত আমাদের শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে কিন্তু ঘাম বেরিয়ে যাওয়ার ফলে শরীরে জলের ঘাটতি হয়, জল পানের মাধ্যমে সেটা পূরণ করা সম্ভব ।
৩) দেহের বিভিন্ন কলা, গ্রন্থি, হাড়ের জয়েন্ট সতেজ রাখে
জল পানের ফলে শুধু তৃষ্ণা মেটে এমন নয় । জল পানের ফলে আমাদের চোখ, মুখ, নাকের কলার উপযুক্ত আদ্রতা বজায় থাকে ফলে এইসব সূক্ষ্ম অঙ্গগুলি সঠিকভাবে কাজ করতে পারে । এছাড়া হাড়ের জয়েন্ট পিচ্ছিল এবং সজীব রাখার জন্য জল পান একান্ত প্রয়োজন ।
৪) খাওয়ার হজমে সাহায্য করে
সঠিকভাবে খাওয়ার হজম করার জন্য আমাদের পরিপাকগ্রন্থি গুলির উপযুক্ত পরিমানে জলের প্রয়োজন হয় । আমরা যখন কোনো খাওয়ার খাই, সেগুলি মুখগহ্বরের বিভিন্ন গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত লালার সঙ্গে মিশে সেগুলিকে হজমের উপযোগী করে তোলে । লালা শুধু খাওয়ার হজম করতে সাহায্য করে না, মুখগহ্বরের বিভিন্ন অংশকে সুস্থ রাখতেও সাহায্য করে । এছাড়া খাওয়ারের nutrients আমাদের শরীরে শোষন করতে জলের সাহায্য লাগে । খাদ্যের মাধ্যমে প্রাপ্ত ফাইবার হজম করার জন্যও জলের প্রয়োজন হয় ।
৫) কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে
শুধুমাত্র ফাইবার জাতীয় খাওয়ার খেলেই কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করা যায় না । উপযুক্ত পরিমানে জল, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফাইবার একত্রে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে ।
৬) শরীরে nutrient শোষনে সাহায্য করে
বিভিন্ন গ্রন্থির সাহায্যে খাওয়ার ভেঙে ছোট উপাদান তৈরী করতে যেমন জলের প্রয়োজন ঠিক তেমনই খাদ্যের মাধ্যমে প্রাপ্ত বিভিন্ন মিনারেল, ভিটামিন এবং অন্যান্য nutrient আমাদের শরীরে শোষিত হতে জলের প্রয়োজন হয় ।
৭) সুস্থ ত্বকের জন্য জল পান করা প্রয়োজন
সুন্দর এবং সুস্থ ত্বকের জন্য প্রতিদিন যথেষ্ট পরিমানে জল পান করা প্রয়োজন । যথাযথ জল পানের ফলে ত্বকের গঠন এবং বর্ণের উন্নতি হয় বলে অনেকে মনে করেন । এছাড়া ত্বকের নমনীয়তা বাড়াতে, বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে ।
8) জলশূন্যতা বা dehydration প্রতিরোধ করে
সাধারনত যেসকল কারনে আমাদের শরীর থেকে জল বেরিয়ে যায় সেগুলি হল – পরিশ্রম বা গরমের ফলে ঘাম, কোনোরকম অসুস্থতা যেমন বমি হওয়া বা ডাইরিয়া । এরকম পরিস্থিতিতে প্রচুর পরিমানে জল পান করার প্রয়োজন শরীরে জলের ঘাটতি মেটানোর জন্য । নাহলে শরীরে জলের অভাবে dehydration দেখা দিতে পারে । দীর্ঘদিন ধরে dehydration এর ফলে বেশ কিছু জটিল সমস্যা যেমন মূত্রথলিতে সমস্যা, কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে ।
শরীরে জলের ঘাটতি বোঝার উপায়
জলের ঘাটতি বোঝার জন্য সাধারনত আমাদের কিছু করতে হয় না । আমাদের যখন তৃষ্ণা পায়, তখন বুঝতে হবে যে শরীরে জলের ঘাটতি হচ্ছে । আর একটি সহজ উপায় হল আমাদের মূত্রের রঙ যা স্বাভাবিকভাবে বর্ণহীন হয়, কিন্তু জলের ঘাটতির ফলে রঙের সামান্য পরিবর্তন দেখা যায় । এছাড়া অতাধিক শুষ্ক ত্বক, মুখের ভিতর শুকিয়ে যাওয়া, চোখ শুকিয়ে যাওয়া দীর্ঘদিন শরীরে জলের ঘাটতির ফলে হতে পারে ।
কত পরিমান জল পান করা উচিৎ
বিভিন্ন কারন যেমন ঘাম, মূত্র এইসবের মাধ্যমে আমাদের শরীর থেকে জল বেরিয়ে যায় । এছাড়াও বিভিন্ন শারীরিক প্রক্রিয়া যেমন খাওয়ার হজম করা, শ্বাস প্রশ্বাস এতেও শরীরের অন্তর্গত জল ব্যাবহার হয় । ফলে শরীরের জলের চাহিদা মেটানোর জন্য জল পান করা একান্ত প্রয়োজন (importance of water) । কত পরিমান জল পান করা উচিৎ সেটা সম্পুর্ন নির্ভর করে আবহাওয়া, কায়িক পরিশ্রম, অসুস্থতা এসবের উপর । ICMR & NIN এর ২০২০ প্রতিবেদন অনুযায়ী একজন গড় কায়িক পরিশ্রমী এবং সুস্থ সবল মানুষের প্রতিদিন গড়ে ৩-৪ লিটার জল পান করা প্রয়োজন ।
সারমর্ম
আমরা সাধারনত যেসকল খাওয়ার খাই সেগুলি থেকে আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় পরিমানের প্রায় ১৫%-২০% জল পেয়ে যাই । বাকি ৮০%-৮৫% জলের চাহিদা মেটানোর জন্য পানীয় জল বা অন্য কোনো পানীয়দ্রব্যর উপর নির্ভর করতে হয় । নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য নিয়ম করে পরিমানমত জল পান করার ব্যাপারে সতর্ক হওয়া দরকার । তৃষ্ণা নিবারন ছাড়াও যে জলের গুরুত্ব (importance of water) কতটা সেটা বোঝা খুব প্রয়োজন ।
RELATED : IMPORTANCE OF PROTEIN
যেখানেই যাবেন সঙ্গে একটা জলের বোতল নিয়ে যান, এতে জল পাওয়া নিয়ে সমস্যা মিটবে । নানারকম মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন পাওয়া যায় যেগুলির সাহায্যে জল পানের জন্য রিমাইন্ডার দিয়ে রাখতে পারেন । এছাড়া সকালে উঠেই এক গ্লাস জল পান স্বাস্থ্যের জন্য ভালো ।
এই সংক্রান্ত কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে নীচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাতে পারেন । ইমেল বা মেসেজের মাধ্যমেও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন । সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন এবং অন্যদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করুন ।
Darun lagche ami bujhte parchi
Valo likhechen
Valo likhechen