how-to-meditate-at-beginning

মেডিটেশন অভ্যাসের প্রাথমিক পদ্ধতি (How to meditate)

মেডিটেশন অভ্যাসের অনেক লাভ আছে । মানসিক চাপ থেকে মুক্তি, মনোযোগ বৃদ্ধি, উত্তেজনা নিয়ন্ত্রনের ক্ষমতা এরকম আরও অনেক মানসিক এবং শারীরিক উপকারীতা নিয়মিত মেডিটেশন অভ্যাসের ফলে পাওয়া যেতে পারে । হয়তো আপনি মেডিটেশন শব্দটার সঙ্গে পরিচিত নয় অথবা শুধু শব্দটা শুনেছেন কিন্তু মেডিটেশন সম্পর্কে কোনো সম্যক ধারনা নেই । সেক্ষেত্রে সবার আগে আপনার জানা দরকার মেডিটেশন অভ্যাসের পদ্ধতি সম্পর্কে (how to meditate) ।

আপনারা যারা সবে মেডিটেশন শুরু করতে চলেছেন, অভ্যাসের পদ্ধতি (how to meditate) সম্পর্কে জানার আগে মেডিটেশন কি এবং অভ্যাসের ফলে কি ধরনের উপকার পাওয়া যেতে পারে সেটা জানা দরকার ।

মেডিটেশন কি?

এটি একধরনের অভ্যাস যার ফলে নিজের সচেতনতা বৃদ্ধি পায় এবং একটা সুস্থ দৃষ্টিভঙ্গি তৈরী হয় । মেডিটেশন অভ্যাসের অর্থ একজন নতুন মানুষ হিসেবে নিজেকে পাওয়া নয় বা একজন আলাদা মানুষে পরিনত হওয়া নয় । আবার অনেকে মনে করেন মেডিটেশন অভ্যাসের ফলে সমস্ত চিন্তা ভাবনা বা অনুভূতি থেকে দূরে সরে যাওয়া । প্রকৃতঅর্থে মেডিটেশন অভ্যাসের ফলে চিন্তা বা অনুভূতিগুলিকে কোনোরকম প্রতিক্রিয়া ছাড়া অনুভব করা সহজ হয় ।

মেডিটেশন অভ্যাসের পদ্ধতি (How to meditate)

প্রাথমিকভাবে মেডিটেশন শুরু করার ক্ষেত্রে সবথেকে সহজ পদ্ধতি হল নিজের শ্বাস প্রশ্বাসের উপর মনোযোগ দেওয়া, যা Mindfulness Meditation নামে পরিচিত । তাই আমরা এখানে যা আলোচনা করব সব mindfulness meditation এর উপর ভিত্তি করে ।

১) আপনার মেডিটেশন করার উদ্দেশ্য –

মেডিটেশন করার কারন যা খুশি হতে পারে । মানসিক শান্তি পাওয়া, সৃজনশীলতা বৃদ্ধি, আধ্যাত্মিক যোগ বৃদ্ধি বা অন্য কিছু আপনার উদ্দেশ্য যেকোনো একটা হতে পারে । অথবা শুধুমাত্র দিনের কয়েকটা মুহুর্ত নিজের সঙ্গে কাটানো যদি আপনার উদ্দেশ্য হয় তাতেও কোনো সমস্যা নেই । একটা ব্যাপার মনে রাখবেন যে মেডিটেশন কোনো যাদু না । তাই হঠাৎ করেই কোনোকিছু পরিবর্তন হয়ে যাবে না । ধৈর্য নিয়ে মেডিটেশন অভ্যাস করতে পারলে আপনি আপনার উদ্দেশ্যে সফল হবেন ।

২) মেডিটেশন অভ্যাসের আদর্শ স্থান –

প্রাথমিকভাবে মেডিটেশন শুরু করার ক্ষেত্রে নিরিবিলি এবং শান্ত পরিবেশ কাম্য । কোনোরকম চেঁচামেচি বা শব্দ, মন বিক্ষিপ্ত করে তোলে যার ফলে সঠিকভাবে অভ্যাস করা সম্ভব হয় না । পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন স্থান মেডিটেশন অভ্যাসের জন্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ । এছাড়া খুব উজ্জ্বল আলো মেডিটেশন অভ্যাসের জন্য প্রতিকূল, তাই মেডিটেশনের স্থানে আলো কমিয়ে রাখাই উচিৎ ।

৩) কোন সময় অভ্যাস করা উচিৎ –

মেডিটেশন দিনের যেকোনো সময় অভ্যাস করা যেতে পারে । তবে প্রাথমিকভাবে সকাল অথবা সন্ধ্যা মেডিটেশনের জন্য বেছে নেওয়া উচিৎ । কারন প্রথম প্রথম অনেক ধরনের সমস্যা অনুভূত হবে মেডিটেশন অভ্যাসের সময়, তাই সবার আগে একটা নির্দিস্ট সময় ঠিক করা প্রয়োজন যাতে শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে সেই সময়ে অভ্যাস করা যেতে পারে । এছাড়া খালিপেটে অথবা খাওয়ার বেশ খানিকটা পরেই মেডিটেশন অভ্যাস করা উচিৎ, এবং সেইদিক থেকে সকাল বা সন্ধ্যা উপযুক্ত সময় ।

৪) মেডিটেশন বসে অথবা শুয়ে অভ্যাস করা যায় –

অনেকসময় শুনে থাকবেন যে শুয়েও মেডিটেশন অভ্যাস করা যায় এবং সেটা সর্বতভাবে ঠিক । তবে প্রাথমিকভাবে মেঝেতে অথবা চেয়ারে বসেই অভ্যাস করা উচিৎ । মেঝেতে বসার ক্ষেত্রে দুই পা ভাঁজ করে অর্থাৎ সুখাসনে বসা যেতে পারে । বসবার ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে মেরুদন্ড এবং ঘাড় সোজা অর্থাৎ একরেখায় থাকে । অনেকের মেঝেতে বসায় সমস্যা থাকে, সেক্ষেত্রে তারা চেয়ারেও বসতে পারেন । চেয়ারে বসার সময় একটু সামনের দিকে এগিয়ে বসবেন, যাতে পিঠ সোজা থাকে  এবং পায়ের পাতা দুটি মাটি স্পর্শ করে । মেঝেতে বসার ক্ষেত্রে নিজের সুবিধার জন্য কুশন ব্যাবহার করতে পারেন ।

RELATED : TYPES OF MEDITATION

৫) আরামদায়ক পোশাক ব্যাবহার করা উচিৎ –

মেডিটেশনের জন্য কোনো নির্দিস্ট ধরনের পোশাক পরার ব্যাপার নেই । যা খুশি পরে অভ্যাস করা যেতে পারে, শুধু একটা ব্যাপার খেয়াল রাখতে হবে যাতে নিজে সেই পোশাকে স্বচ্ছন্দ মনে করেন । আপনার পোশাক যেন মনোযোগ বিক্ষেপের কারন না হয়ে দাঁড়ায় সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন ।

৬) টাইমারের ব্যাবহার করুন –

যারা প্রথম প্রথম মেডিটেশন শুরু করবেন, তারা সময়ের হিসেব রাখার জন্য টাইমার বা স্টপ-ওয়াচ ব্যাবহার করতে পারেন । এতে বার বার মনোযোগ সময়ের দিকে যাবে না, এবং যতক্ষন সময় মেডিটেশন অভ্যাসের জন্য টার্গেট করেছেন সেই সময়টা আপনি মেডিটেশনে নিয়োগ করতে পারবেন কোনোরকম বিক্ষেপ ছাড়াই ।

৭) হাতদুটিকে আরামদায়কভাবে কোলের উপর রাখুন –

আমরা মেডিটেশনের কোনো ভিডিয়ো বা ছবি দেখি, তাতে দেখা যায় অভ্যাসকারী তার দুই হাত একটি বিশেষ মুদ্রায় দুই হাঁটুর উপর রেখে অভ্যাস করছেন । কিন্তু প্রাথমিকভাবে সেটার দরকার নেই । আপনি আরামদায়কভাবে নিজের কোলের উপর রেখেও অভ্যাস করতে পারেন অথবা দুই হাত দুই হাঁটুর উপর স্বাভাবিকভাবে রেখেও বসতে পারেন ।

৮) মাথা নীচের দিকে সামান্য ঝোকানো থাকবে –

চোখ খোলা বা বন্ধ যেটাতে আপনি স্বচ্ছন্দ সেভাবেই মেডিটেশন অভ্যাস করতে পারেন । তবে প্রাথমিকভাবে যারা অভ্যাস শুরু করবেন, তাদের জন্য চোখ বন্ধ রাখাটাই শ্রেয় । এর ফলে বাইরের কোনো কিছুর প্রতি দৃষ্টি যাবে না, তাই কোনোরকম বিক্ষেপ তৈরী হবে না । মাথাটা নীচের দিকে সামান্য ঝুকিয়ে বসুন কিন্তু খেয়াল রাখবেন যাতে ঘাড় মেরুদন্ডের সঙ্গে সরলরেখায় থাকে ।

৯) নিজের নিশ্বাসের উপর মনোযোগ দিন –

এতক্ষণ পর্যন্ত আমরা বাহ্যিক বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করলাম । এবার আমরা জানব যেসব পদ্ধতিতে মেডিটেশন করা যায় সেগুলি । মেডিটেশনের অর্থ চিন্তাশূন্য হওয়া না, বরং কোনো একটা নির্দিস্ট বস্তু বা প্রক্রিয়ার উপর নিজের মনোযোগ নিবদ্ধ করা । মেডিটেশন অভ্যাসের অনেক রকম পদ্ধতি আছে । প্রাথমিকভাবে যারা শুরু করতে চলেছেন তাদের জন্য সবথেকে সহজ পদ্ধতি হল নিজের শ্বাস – প্রশ্বাসের উপর মনোযোগ স্থাপন করা । এর ফলে আপনি নিজের প্রতিটা শ্বাস – প্রশ্বাস কে অনুভব করতে পারবেন । নিশ্বাসের উপর মনোযোগ স্থাপনের অনেক রকম পদ্ধতি আছে, তার মধ্যে থেকে আপনাকে বেছে নিতে হবে যেটাতে আপনি স্বচ্ছন্দ মনে করবেন । যেসব সহজ পদ্ধতিতে নিশ্বাসের উপর মনোযোগ দেওয়া যায় সেগুলি হল –

  • ফুসফুসের সংকোচন এবং প্রসারনের উপর মনোযোগ স্থাপন ।
  • নাসারন্ধ্রের মধ্যে দিয়ে যখন বায়ু চলাচল করে সেটাকে অনুভব করা ।
  • নিশ্বাসের শব্দকেও মাধ্যম হিসেবে বেছে নিতে পারেন ।

১০) অনুভব করুন, কিন্তু প্রতিক্রিয়া বা বিশ্লেষনের প্রয়োজন নেই –

মেডিটেশন অভ্যাসের সময় চোখ বন্ধ করে, কান বন্ধ করে আপনি বাইরের বাধাবিঘ্ন আটকাতে পারেন, কিন্তু আমাদের মস্তিষ্কে সবসময় বিভিন্ন রকম চিন্তা-ভাবনা ঘুরে বেড়ায় সেগুলো বন্ধ করার কোনো উপায় নেই । আপনি যখন মেডিটেশন করবেন, তখনও নানারকম চিন্তা-ভাবনা আপনার মাথায় আসবে এবং এটা খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার । প্রাথমিকভাবে যারা শুরু করেন তারা অনেকসময় বিরক্ত হয়ে পড়েন বা উত্তেজিত হয়ে পড়েন যেটা হওয়া উচিৎ না । চেষ্টা করবেন যেসকল ভাবনা মাথায় আসছে সেগুলোকে বোঝার কিন্তু তাতে কোনো প্রতিক্রিয়া দেওয়ার দরকার নেই, বরং চেষ্টা করুন নিজের সমগ্র চিন্তাকে নিজের নিশ্বাসের উপর নিবদ্ধ করার ।

উপরের পদ্ধতিতে প্রাথমিকভাবে প্রতিদিন অন্তত ৫ থেকে ৭ মিনিট চুপচাপ একটা অপেক্ষাকৃত শান্ত জায়গায় বসে নিজের শ্বাসপ্রশ্বাস অনুভব করার চেষ্টা করুন । মনে রাখবেন মেডিটেশন অভ্যাস যথেষ্ট ধৈর্যের ব্যাপার, তাই মাঝপথে বিরক্ত হয়ে বন্ধ করে দেবেন না । ধৈর্য নিয়ে কিছুদিন অভ্যাসের ফলে আপনার নিজের মানসিক পরিবর্তন আপনি নিজেই অনুভব করতে পারবেন । ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে উঠলে সময় বাড়াতে পারেন, তবে সেটা একান্তই নিজস্ব ব্যাপার ।

মেডিটেশনের ক্ষেত্রে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল নিজে স্বচ্ছন্দ অনুভব করা । তাই বসার সময় বা শ্বাস নেওয়ার সময় অথবা অভ্যাসের সময় আপনি যদি কোনোরকম সমস্যা অনুভব করেন তাহলে তখনি বন্ধ করে একটু বিশ্রাম নিয়ে নিন ।

আশা করি, প্রাথমিকভাবে যারা মেডিটেশন শুরু করতে চান, অভ্যাসের পদ্ধতিগুলি (how to meditate) কিছুটা হলেও ব্যাপারটা সহজ করে তুলতে পেরেছি । যারা প্রাথমিকভাবে মেডিটেশন শুরু করতে চলেছেন তাদের জন্য সবটাই এক নতুন ধরনের অভিজ্ঞতা, তাই প্রশ্নও অনেক । যদি কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাতে পারেন । এছাড়া ইমেল বা মেসেজের মাধ্যমেও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন ।

সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন এবং অন্যদের সুস্থ থাকতে উৎসাহিত করুন ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

Tell us how we can improve this post?

Leave a Reply

Scroll to Top