মানবদেহে ভিটামিন D (Vitamin D) এর প্রয়োজনীয়তা প্রচুর, যার মধ্যে হাড় ও দাঁতের গঠন এবং বিকাশ অন্যতম । এটি একটি ফ্যাট দ্রবনীয় ভিটামিন যা আমাদের শরীরে ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম শোষণে সহায়তা করে ।
অপরিহার্য এই micronutrient মানবদেহে উৎপন্ন বা সংশ্লেষিত হয় না, তাই বাহ্যিক উৎস থেকে এই ভিটামিন সংগ্রহ করতে হয় । কিছু ধরনের খাদ্যবস্তু আর সুর্যালোক হল ভিটামিন D এর প্রাকৃতিক উৎস । এছাড়া বিভিন্ন বানিজ্যিক পরিপূরকের মাধ্যমেও এই ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করা যেতে পারে ।
Table of Contents
ক্যালসিয়াম মানবদেহের হাড়ের মূল গঠনমূলক উপাদান যা মানবদেহে শোষনের জন্য সবথেকে প্রয়োজনীয় nutrient হল ভিটামিন D । ভিটামিন D বিভিন্ন প্রকৃতির হয় এবং সেগুলি সাধারনত ভিটামিন D1, D2, D3 বা D4 নামে পরিচিত, তবে মানবদেহের জন্য সবথেকে প্রয়োজনীয় উপাদানগুলি হল ভিটামিন D2 বা ergocalciferol ও ভিটামিন D3 বা cholecalciferol ।
এটি একধরনের ভিটামিন D যা সাধারনত খাদ্যের মাধ্যমে অথবা পরিপূরকের মাধ্যমে আমরা পেয়ে থাকি । পরিপূরক হিসেবে এটি মানবদেহের ভিটামিন D এর ঘাটতি পূরণ করার জন্য ব্যাবহার করা হয়ে থাকে ।
এই ধরনের ভিটামিন D সাধারনত সুর্যালোকের সংস্পর্শে আসার ফলে মানবদেহের ত্বকে সৃষ্টি হয় । এছাড়া কিছু কিছু খাদ্যবস্তুতেও এই ধরনের ভিটামিন D পাওয়া যায় । মানবদেহের ভিটামিন D এর ঘাটতি পূরণ করার জন্য এবং কিছু নির্দিস্ট রোগ যেমন রিকেট প্রতিরোধ করার জন্য এই ভিটামিন প্রয়োজন ।
মানবদেহের বিকাশের জন্য ভিটামিন D গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে, যেমন –
মানবদেহে রক্তে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসের স্তর নিয়ন্ত্রন করার ক্ষেত্রে ভিটামিন D গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা নেয় । ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস হাড়ের গঠন এবং বিকাশের জন্য অত্যাবশ্যকীয় দুটি উপাদান, যা ভিটামিন D এর সহায়তায় অন্ত্রে শোষিত হয় । এছাড়াও ভিটামিন D হাড় থেকে ক্যালসিয়ামের ক্ষয় রোধ করে ।
দাঁতের এনামেল গঠনের ক্ষেত্রে দুটি মূল উপাদান হল ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস, এবং আমরা ইতিমধ্যেই জেনে গেছি যে ভিটামিন D এর সহায়তায় খাদ্যের মাধ্যমে প্রাপ্ত ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস আমাদের দেহে শোষিত হয় এবং হাড় ও দাঁত গঠনে সাহায্য করে ।
২০১২ র একটি গবেষনা অনুযায়ী দীর্ঘকালীন ভিটামিন D এর ঘাটতি্র ফলে বিভিন্ন সংক্রামক রোগাক্রান্ত হওয়ার প্রবনতা বেড়ে যায় । এছাড়াও বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে ভিটামিন D এর ঘাটতির ফলে ঠান্ডা লাগা বা ইনফ্লুয়েঞ্জার মত সমস্যা সৃষ্টি করে ।
ভিটামিন D এর ঘাটতির ফলে অনেকসময় স্মৃতিভ্রংশের মত সমস্যা দেখা যায় । এছাড়াও বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে শরীরে ভিটামিন D এর অভাবের ফলে ঘুমের সমস্যাও দেখা যায় যা ক্রমান্বয়ে সচল চিন্তা ভাবনার সমস্যার সৃষ্টি করে ।
যদিও আমাদের শরীরেই ভিটামিন D তৈরী হয়, তাসত্ত্বেও কিছু কারনে অনেক সময় ভিটামিন D এর ঘাটতি দেখা যায় । যেমন –
দীর্ঘদিন ধরে ভিটামিন D এর অভাবে হৃদযন্ত্রের সমস্যা, অটোইমিউন (autoimmune) রোগ, স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা, গর্ভাবস্থায় জটিলতার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে ।
যদিও মানবদেহ এই ভিটামিন প্রস্তুতিতে সক্ষম, কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভিটামিন D এর ঘাটতির প্রবনতা দেখা যায় এবং সেই ঘাটতি পূরণের জন্য পরিপূরক ব্যাবহার একান্ত প্রয়োজনীয় । যাদের মধ্যে ভিটামিন D এর ঘাটতি দেখা যায় তারা হল –
সুর্যালোক ভিটামিন D এর সবথেকে ভালো উৎস, তাই দিনে অন্তত ১৫ মিনিট সুর্যালোকে থাকা যথেষ্ট ভিটামিন D এর ঘাটতি পূরণ করার জন্য । এছাড়া যেসকল খাওয়ারে ভিটামিন D থাকে সেগুলি হল-
এছাড়াও বিভিন্ন মাল্টিভিটামিন পরিপূরক ক্যাপসুল বা সিরাপ আকারে পাওয়া যায়, যা বেশিরভাগ সময় শিশু এবং বয়স্ক মানুষের জন্য ব্যাবহৃত হয় ।
যেকোনো ধরনের nutrient এর ঘাটতির ফলে যেমন সমস্যা দেখা যায় ঠিক তেমনই অতিরিক্ত পরিমানে গ্রহনের ফলেও নানারকম সমস্যা দেখা দিতে পারে । যদিও প্রচুর পরিমানে পরিপূরক গ্রহনের ফলেই একমাত্র শরীরে ভিটামিন D এর বাড়তি দেখা দিতে পারে, তাই প্রাকৃতিক উৎস সবথেকে নির্ভরযোগ্য এবং নিরাপদ ।
ICMR এবং NIN এর ২০২০ সালের প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতিদিন গ্রহনের মাত্রা –
পুরুষ | ১৮-৬০ বছর | ৬০০ IU/প্রতিদিন |
মহিলা | ১৮-৬০ বছর | ৬০০ IU/প্রতিদিন |
গর্ভাবস্থায় | ৬০০ IU/প্রতিদিন | |
স্তন্যদান পর্বে | ৬০০ IU/প্রতিদিন | |
শিশু | ০-১২ মাস | ৪০০ IU/প্রতিদিন |
১-৩ বছর | ৬০০ IU/প্রতিদিন | |
৪-৬ বছর | ৬০০ IU/প্রতিদিন | |
৭-৯ বছর | ৬০০ IU/প্রতিদিন | |
ছেলে | ১০-১২ বছর | ৬০০ IU/প্রতিদিন |
১৩-১৫ বছর | ৬০০ IU/প্রতিদিন | |
১৬-১৮ বছর | ৬০০ IU/প্রতিদিন | |
মেয়ে | ১০-১২ বছর | ৬০০ IU/প্রতিদিন |
১৩-১৫ বছর | ৬০০ IU/প্রতিদিন | |
১৬-১৮ বছর | ৬০০ IU/প্রতিদিন |
এছাড়া ৬০ বছরের উর্দ্ধে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় মাত্রা হল ৮০০ IU ।
ভিটামিন D (vitamin D) আমাদের হাড় এবং দাঁতের জন্য একটি অপরিহার্য উপাদান, এছাড়াও বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহন করে আমাদের শারীরিক কার্যকলাপ সঠিক রাখতে সাহায্য করে এবং এই ভিটামিন আমরা খুব সহজেই প্রাকৃতিক উৎস যেমন সুর্যালোকের মাধ্যমে পেতে পারি । এখানে একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে অতিরিক্ত সুর্যালোক আমাদের ত্বকের জন্য ক্ষতিকারক । তাই সপ্তাহে কয়েকদিন ১০ থেকে ১৫ মিনিট সুর্যালোক যথেষ্ট ।
খাদ্যের মাধ্যমেও ভিটামিন D এর ঘাটতি পূরণ করা যেতে পারে, তাই সুষম আহার একান্ত প্রয়োজনীয় । এরপরেও যদি ভিটামিন D এর ঘাটতি দেখা যায় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরিপূরক গ্রহন করা যেতে পারে । এই সংক্রান্ত কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে নীচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাতে পারেন । ইমেল বা মেসেজের মাধ্যমেও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন ।
সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন এবং অন্যদের সুস্থ থাকতে উৎসাহিত করুন ।
আমরা সাধারনত একটা কথা বলে থাকি যে কোনোকিছুই অতিরিক্ত ভালো না । এই একই কথা…
শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক উন্নতিসাধনের জন্য প্রাচীনকাল থেকেই একটি বহুল প্রচলিত অভ্যাসের নাম হল “যোগ”…
‘স্বাস্থ্য’ কথাটা শুনলে আমরা সাধারনভাবে শুধু শরীরের কথাই ভেবেথাকি, ঠিক পদ্ধতিতে জীবনযাপনের ক্ষেত্রে শারীরিক স্বাস্থ্যের…
প্রাচীনকাল থেকে যেসকল কৃষিজ শষ্য মানবজাতির কাছে খাদ্যবস্তু হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে তার মধ্যে ডাল (Lens…
সূচনা (Introduction) প্রোটিন (Protein) একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাক্রোনিইট্রিয়েন্ট (Macronutrient) যার উৎস (protein sources) আমাদের প্রতিদিনের গ্রহন…
যোগাভ্যাসের বিভিন্ন ধরনের আসন, যা আমাদের দেহের নীচের অংশ যেমন পা, কোমর পেট এবং পিঠ…