vitamin-a-sources

ভিটামিন – A (Vitamin – A) : প্রয়োজনীয়তা, অভাব এবং উৎস

ভিটামিন A (Vitamin A) একটি ফ্যাট দ্রবনীয় ভিটামিন যা আমাদের শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে । সাধারনত আমরা যেসকল খাওয়ার খাই সেসবের মাধ্যমে যথেষ্ট পরিমানে ভিটামিন – A পাই, কিন্তু অতিরিক্ত ঘাটতি ভিটামিন A পরিপূরকের (supplements) মাধ্যমে পূরন করা যায় ।

মানবদেহের বিভিন্ন শারীরিক প্রক্রিয়া যেমন দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখা, রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিক রাখা, বিভিন্ন অঙ্গের স্বাভাবিক বিকাশ এসবের জন্য এই ভিটামিন যথেষ্ট প্রয়োজনীয় ।

ভিটামিন A (Vitamin A) কি?

এটি একধরনের ফ্যাট দ্রবনীয় ভিটামিন যা সাধারনত যকৃতে সঞ্চিত হয় । সাধারনত ভিটামিন A একটি মৌলিক উপাদান হিসেবে পরিচিত, কিন্তু প্রকৃত অর্থে এটি রেটিনল, রেটিনাল এবং রেটিনিল নামক ফ্যাট-দ্রবনীয় উপাদানের সমন্বয় ।

ভিটামিন A দুই প্রকারে পাওয়া যায় – প্রবর্তিত (preformed) এবং প্রোভিটামিন (provitamin)

প্রবর্তিত (Preformed) ভিটামিন  A

রেটিনল এবং রেটিনিল – এই দুই ধরনের উপাদান প্রবর্তিত ভিটামিন যা সাধারনত প্রানীজ খাদ্য দ্রব্য যেমন দুগ্ধজাত পদার্থ, পাঠা বা ভেড়ার যকৃৎ, মাছ এসবে পাওয়া যায় ।

প্রোভিটামিন (Provitamin)

প্রোভিটামিন A (ক্যারোটিনয়েডস) উদ্ভিজ্জ খাদ্য দ্রব্য যেমন ফল, শাকসবজি এবং তেলে প্রচুর পরিমানে পাওয়া যায় । ক্যারোটিনয়েডস বা বিটা-ক্যারোটিন মানবদেহে বিক্রিয়ার মাধ্যমে ভিটামিন A তে রুপান্তরিত হয় ।  

প্রয়োজনীয়তা

ভিটামিন A  আমাদের স্বাস্থ্যের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় । কোষ গঠন এবং বিকাশ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, ভ্রূণের বিকাশ এবং দৃষ্টিশক্তি এসবের জন্য ভিটামিন A গুরুত্ব পূর্ণ ভুমিকা নেয় । মূলত দৃষ্টিশক্তি এবং চোখের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে এই ভিটামিনের যথেষ্ট অবদান থাকে ।

চোখের সবথেকে বাইরের আস্তরন অর্থাৎ অচ্ছেদাপটল বা কর্নিয়ার (cornea) এবং নেত্রবর্ত্মকলা বা কনজাঙ্কটিভা (conjunctiva) – চোখের উপরিস্থিত পাতলা পর্দা এগুলির সুরক্ষা এবং নিয়ন্ত্রনের জন্য ভিটামিন – A সাহায্য করে ।

RELATED ARTICLE : VITAMINS AND THEIR FUNCTIONS

ভিটামিন A ত্বক, অন্ত্র, ফুসফুস এইসকল অঙ্গের উপরিতলের কলার সুরক্ষায় সাহায্য করে । এছাড়া সুন্দর ত্বক, পুরুষ এবং মহিলার প্রজনন ক্ষমতা বজায় রাখতে এই ভিটামিন সহায়ক হিসেবে কাজ করে ।

দৃষ্টিশক্তি বজায় রাখার জন্য ভিটামিন A গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে । উপযুক্ত পরিমানে ভিটামিন A খাদ্যের মাধ্যমে বা পরিপূরকের মাধ্যমে গ্রহনের ফলে রাত-কানা রোগ প্রতিরোধ করা যায় । এছাড়া উপযুক্ত পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত ক্যারোটিন অর্থাৎ বিটা-ক্যারোটিন গ্রহনের ফলে বয়সের কারনে হওয়া ম্যাকুলার অবক্ষয় (Macular Degeneration) প্রতিরোধ করা যেতে পারে ।

হাড়ের গঠন বজায় রাখার জন্য এবং বিকাশের জন্য ভিটামিন A গুরুত্ব পূর্ণ ভুমিকা পালন করে । বেশকিছু গবেষণায় দেখা গেছে ভিটামিন A এর ঘাটতি থাকার ফলে হাড় ভেঙে যাওয়ার প্রবনতা বৃদ্ধি পায় ।

ঘাটতির ফল

উন্নত দেশগুলিতে ভিটামিন A ঘাটতি অত্যন্ত বিরল ঘটনা, কিন্তু উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত দেশগুলিতে এখনো ভিটামিন A ঘাটতির প্রভাব দেখা যায় । প্রায় সবরকম শাক-সবজিতেই এই ভিটামিন পাওয়া যায়, কিন্তু খাওয়ার অনিয়মের ফলে এবং জীবন-যাপনের উপর ভিত্তি করে ভিটামিন  A র অভাব দেখা যায় ।

WHO (World Health Organization) এর তথ্য অনুযায়ী সমগ্র বিশ্বে শিশুদের প্রতিরোধ্য অন্ধত্ব সাধারনত ভিটামিন A এর অভাবেই হয়ে থাকে । এছাড়া সংক্রামক রোগ যেমন হাম, ডাইরিয়া এগুলিও এই ভিটামিনের অভাবে হয় ।

ভ্রূণের বৃদ্ধি এবং বিকাশ প্রতিহত হওয়ার ক্ষেত্রে, গর্ভাবস্থায় রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া হওয়া এইধরনের সমস্যা ভিটামিন A এর ঘাটতির ফল ।  

ভিটামিন A সমৃদ্ধ খাওয়ার (Source of Vitamin A)

আমরা আগেই জেনেছি যে ভিটামিন A দুইপ্রকার অর্থাৎ প্রবর্তিত (preformed)এবং প্রোভিটামিন (provitamin) ।

যেসকল খাওয়ারের মাধ্যমে প্রচুর পরিমানে উন্নত রেটিনল বা প্রবর্তিত ভিটামিন A পাওয়া যায় সেগুলি হল –

  • কড লিভার তেল
  • ছাগল বা ভেড়ার যকৃৎ
  • ডিমের কুসুম
  • মাখন
  • পনির
  • চীজ
  • স্যালমন
  • ট্রাউট
  • ম্যাকরেল
প্রোভিটামিন A সমৃদ্ধ খাওয়ারের তালিকাটি হল –
  • গাজর
  • মিষ্টি আলু
  • পালং
  • লেটুস
  • পেঁপে
  • আম
  • ব্রোকলি
  • রেড বেল পেপার
  • কুমড়ো

প্রতিদিন কত পরিমান ভিটামিন A প্রয়োজন

ভিটামিন A (Vitamin A) এর ঘাটতির ফলে যেমন বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরী হতে পারে ঠিক তেমনই অতিরিক্ত পরিমানে গ্রহনের ফলেও নানারকম সমস্যা দেখা দিতে পারে । তাই বয়স এবং লিঙ্গ অনুপাতে সঠিক পরিমানে গ্রহন করা প্রয়োজন ।

ICMR এবং NIN এর ২০২০ সালের প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতিদিন গ্রহনের মাত্রা –

পুরুষ১৮-৬০ বছর১০০০ µg/প্রতিদিন
মহিলা১৮-৬০ বছর৮৪০ µg/প্রতিদিন
 গর্ভাবস্থায়৯০০ µg/প্রতিদিন
 স্তন্যদান পর্বে৯৫০ µg/প্রতিদিন
শিশু০-১২ মাস৩৫০ µg/প্রতিদিন
 ১-৩ বছর৩৯০ µg/প্রতিদিন
 ৪-৬ বছর৫১০ µg/প্রতিদিন
 ৭-৯ বছর৬৩০ µg/প্রতিদিন
ছেলে১০-১২ বছর৭৭০ µg/প্রতিদিন
 ১৩-১৫ বছর৯৩০ µg/প্রতিদিন
 ১৬-১৮ বছর১০০০ µg/প্রতিদিন
মেয়ে১০-১২ বছর৭৯০ µg/প্রতিদিন
 ১৩-১৫ বছর৮৯০ µg/প্রতিদিন
 ১৬-১৮ বছর৮৬০ µg/প্রতিদিন
RDA of Vitamin A

এছাড়া ৬০ বছরের উর্দ্ধে পুরুষের জন্য প্রতিদিন ১০০০ µg এবং মহিলার ক্ষেত্রে ৮৪০ µg ভিটামিন A প্রয়োজন ।

অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহনের ফল

ভিটামিন A (Vitamin A) একটি ফ্যাট-দ্রবনীয় ভিটামিন যা জলে দ্রবনীয় ভিটামিনের মত মুত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায় না, বরং শরীরে সঞ্চিত হয় যা সময়ের সাথে অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে । তাই অতিরিক্ত মাত্রায় ভিটামিন A গ্রহনের ফলেও নানারমক শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় ।

অতিরিক্ত মাত্রায় ভিটামিন A গ্রহনের (যা Hypervitaminosis A নামে পরিচিত) ফলে যে সমস্যাগুলি সাধারনত হয় –

  • চোখের সমস্যা
  • হাড়ে এবং জয়েন্টে ব্যাথা
  • চুল পড়া
  • মাথা ব্যাথা
  • খিদে কমে যাওয়া
  • ত্বকের সমস্যা

এছাড়াও কিছু সমস্যা যেমন যকৃতের সমস্যা, বৃদ্ধি প্রতিহত হওয়া এগুলির জন্যও পরোক্ষভাবে ভিটামিন A দায়ী ।

সারমর্ম

ভিটামিন A (Vitamin A) একটি অপরিহার্য nutrient যা আমাদের ভালো থাকার জন্য প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে দায়ী, কিন্তু এর ঘাটতির ফলে আমরা নানা রকমের সমস্যায় পড়তে পারি, আবার ঠিক তেমনই অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহনের ফলেও নানারকম সমস্যা আমাদের ভোগ করতে হয় । খাদ্যের মাধ্যমে পরিমাপ সঠিক রেখে ভিটামিন A গ্রহন করাটাই সবথেকে ভালো উপায় । এতে ভিটামিন গ্রহনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় আবার পরিপূরকের প্রয়োজন থাকে না ।

এই নিবন্ধটি সম্পর্কে কোনো মতামত বা প্রশ্ন থাকলে নীচে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন । ইমেল বা মেসেজের মাধ্যমেও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন ।

সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন এবং অন্যদের সুস্থ থাকতে উৎসাহিত করুন ।  

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

Tell us how we can improve this post?

Leave a Reply

Scroll to Top