Table of Contents
সূচনা (Introduction)
প্রোটিন (Protein) একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাক্রোনিইট্রিয়েন্ট (Macronutrient) যার উৎস (protein sources) আমাদের প্রতিদিনের গ্রহন করা খাদ্য । প্রোটিন সাধারনত শরীরের মাংশপেশীর গঠন এবং রক্ষণাবেক্ষণে সাহায্য করে । এছাড়াও বিভিন্ন শারীরিক গঠনমূলক কাজে প্রোটিন সাহায্য করে । প্রোটিন, অ্যামিনো অ্যাসিড নামক একটি জৈব রাসায়নিক যৌগ দ্বারা গঠিত আবার অ্যামিনো অ্যাসিড যা কার্বন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন এবং সালফারের সমন্বয়ে গঠিত ।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ (ICMR) এর রেকমেন্ডেড ডায়েটারি অ্যালায়েন্স (RDA) অনুযায়ী একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রোটিনের চাহিদা তার ওজনের .০.৮ থেকে ১.০ গ্রাম হওয়া উচিৎ । অর্থাৎ কোনো ব্যাক্তির ওজন ৭৫ কিলোগ্রাম হলে তার জন্য দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় প্রোটিনের পরিমান ৬০ – ৭৫ গ্রাম ।
একজন ব্যাক্তির প্রোটিন বা যেকোনো খাদ্যোপাদানের চাহিদা নির্ভর করে তার বয়স, কায়িক শ্রমের পরিমান, সামগ্রিক শারীরিক অবস্থা এসবের উপরে । যারা শরীরচর্চার সঙ্গে যুক্ত বা কায়িক শ্রম অনেক বেশী, তাদের ক্ষেত্রে প্রোটিনের চাহিদা অন্যদের তুলনায় বেশী ।
নিরামিষাশীদের জন্য প্রোটিন বিকল্প (Veg Protein Sources options)
যখনই প্রোটিনের (Protein) নাম শুনি, আমাদের চোখের সামনে দুধ, ডিম আর মাংসের চিত্র ভেসে ওঠে । কারন, প্রোটিনের উৎস (Protein Sources) বলতে আমরা সাধারনত এগুলির নাম শুনে থাকি । এর পাশাপাশি স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন মানুষেরা ছোলাকে প্রোটিনের অন্যতম উৎস হিসেবে গ্রহন করে থাকেন ।
সমগ্র বিশ্বে বিশেষত ভারতবর্ষে একটা বিশাল সংখ্যক মানুষ নিরামিষাশী এবং তার মধ্যেও আবার বিভিন্নতা দেখা যায় । কেউ শাক-সবজির পাশাপাশি ডিম এবং দুধ খায় । আবার অনেকে শাক-সবজি এবং দুধ খাদ্য হিসেবে গ্রহন করে । আবার অনেকে শুধু শাক-সবজি তাদের খাদ্যতালিকায় রাখেন ।
নিরামিষ খাদ্যাভ্যাস – সুবিধা এবং অসুবিধা (Pros and Cons – Vegetarian)
নিরামিষ খাদ্যাভ্যাস খুবই স্বাস্থ্যকর কারন চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে সঠিক পদ্ধতিতে তৈরী শাক-সবজি সহজপাচ্য হয় এবং এর ফলে পাকস্থলীর উপরে কম চাপ পড়ে । এরকম পরিস্থিতিতে শাক-সবজি, ডাল, ভাত, রুটি, ঘি, মাখন এইসকল খাদ্যবস্তুর মাধ্যমে পুষ্টিগত উপাদান অর্থাৎ কার্বহাইড্রেট, ফ্যাট এগুলির ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হলেও অনেকসময় কিছু মিনারেলস বা প্রোটিনের ঘাটতি দেখা যায় ।
প্রোটিনের ঘাটতি দেখা যায় তার মানে এই নয় যে নিরানিষ খাদ্যাবস্তুতে প্রোটিন কম পরিমানে পাওয়া যায় বা পাওয়া যায় না । বরং বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজিতে ভিটামিন-মিনারেলস এর পাশাপাশি প্রোটিনের প্রাচুর্য দেখা যায় । কিন্তু সঠিক ধরনের খাওয়ার সঠিক পদ্ধতিতে না খেলে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমান প্রোটিনের ঘাটতি দেখা যায় ।
প্রোটিন সমৃদ্ধ যে সকল খাওয়ার (Veg Protein Sources) সহজেই পাওয়া যায় সেগুলি একনজরে দেখে নিই ।
ডাল (Lentils)
ডাল আমাদের খাদ্যতালিকার একটি গুরুত্পূর্ণ অঙ্গ । প্রায় প্রতিটা বাড়িতে ডাল একটা পদ হিসেবে গন্য করা হয় । ডাল ভার বা রুটি যেকোনো কিছুর সঙ্গেই খাওয়া যেতে পারে আবার অনেকে শুধু ডাল স্যুপ হিসেবেও খেয়ে থাকেন । সাধারনত এক কাপ ডাল থেকে ১৮ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়, যদিও তা ডালের প্রকারভেদের উপরে নির্ভর করে ।
প্রোটিনের পাশাপাশি ডালের থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্যোপাদান যেমন ফাইবার, কার্বস, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফোলেট ইত্যাদি পাওয়া যায় । দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় প্রোটিনের ঘাটতি মেটানোর জন্য ডাল (মুগ, মসুর, অড়হর ইত্যাদি) একটি সহজলভ্য এবং স্বল্পব্যায়ী বিকল্প । যদি কারোর লিভারে সমস্যা থাকে, তাহলে তাদের ডালের পরিমান সীমিত রাখা উচিৎ, কারন ডালে ফাইবার থাকে যা সহজপাচ্য নয় ।
ছোলা (Black Chana)
ছোলা এমন একধরনের যা সেদ্ধ, ভিজানো, ভাজা, ডাল অথবা অন্য কোনো সবজির সঙ্গে মিশিয়ে আমরা খেয়ে থাকি । নিরামিষাশীদের জন্য প্রোটিনের উৎস হিসেবে ছোলা বেশ ভালো একটি বিকল্প । সাধারনত ১০০ গ্রাম ছোলা থেকে ২০-২২ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায় । প্রাচীন সময় থেকেই ব্যায়ামবীর এবং খেলোয়ারদের কাছে ছোলা একটা গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যবস্তু । ছোলা থেকে প্রোটিনের পাশাপাশি ফাইবার, আয়রন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন – বি ইত্যাদি পাওয়া যায় ।
আমরা নানারকম ভাবে ছোলা আমাদের খাদ্যতালিকায় যুক্ত করতে পারি । সিদ্ধ ছোলা, স্যালাড, ভিজানো বা অঙ্কুরিত ছোলা (Sprout), ভাজা অথবা পছন্দ অনুযায়ী সবজি বানিয়ে । তবে মাথায় রাখতে হবে কোনোকিছুই অতিরিক্ত ভালো না । বিশেষত যাদের কায়িক পরিশ্রম কম, তাদের ক্ষেত্রে একটা সীমিত পরিমানে ছোলা খাওয়া উচিৎ ।
সয়াবিন (Soyabeans)
নিরামিষ খাদ্যতালিকায় সয়াবিন এমন একটি খাদ্যবস্তু যা শুধু প্রোটিনের গ্যাপ পূরণ করতে সাহায্য করে এমন নয় । সয়াবিন থেকে ভিটামিন – সি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়ামের মত গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যোপাদান আমরা পেয়ে থাকি । ১০০ গ্রাম সয়াবিন থেকে প্রায় ৩৫-৪০ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায় ।
সয়াবিন ছাড়া সয়া প্রোডাক্ট হিসেবে আমরা টোফু, সয়া মিল্ক এগুলো খাদ্যবস্তু হিসেবে গ্রহন করতে পারি । এগুলিও আমাদের প্রয়োজনীয় প্রোটিনের উৎস হিসেবে কাজ করে । সয়া প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্যবস্তু গ্রহনের ফলে পুরুষদের মধ্যে ইস্ট্রোজেন (Estrogen or Female Hormone) এর প্রভাব বৃদ্ধি পায়, এই কারনে অনেকেই সয়া প্রোটিন গ্রহন করেন না । যদিও এটি সম্পূর্ণভাবে ভুল বা প্রমানিত সত্য – কোনোটাই জোর দিয়ে বলা যাবে না । তবে দেখা গেছে সীমিত পরিমানে সয়া প্রোটিন গ্রহন কোনো সমস্যার সৃষ্টি করে না ।