মেডিটেশন অভ্যাসের সুফল অনেক এবং একজন মেডিটেশন অভ্যাসকারী নিয়মিত অভ্যাসের ফলে মানসিক এবং শারীরিক দিক থেকে নানারকম উপকারীতা পেয়ে থাকেন যার মধ্যে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রন (stress management) একটি অন্যতম উপকারীতা ।
মানসিক চাপ সামলানোর (stress management) সবথেকে সহজ এবং কার্যকরী উপায় হল নিয়মিত মেডিটেশন অভ্যাস । প্রাথমিকভাবে নিয়মিত মেডিটেশন অভ্যাস অনেক সময় কঠিন মনে হয় কিন্তু অভ্যস্ত হয়ে উঠলে এবং নিজের মানসিক উন্নতিগুলি অনুভব করলে আপনি নিজের থেকেই নিয়মিত অভ্যাস করার উৎসাহ পাবেন এবং স্বাভাবিকভাবেই অনেক সহজ বলে মনে হবে ।
মেডিটেশন অভ্যাসের অনেক প্রকারভেদ আছে, যেগুলির মধ্যে কিছু কিছু মেডিটেশন অভ্যাসের জন্য একজন অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের নির্দেশনার প্রয়োজন পড়ে । আমরা এখানে সবথেকে সহজ পদ্ধতি নিয়েই আলোচনা করব যা আপনি প্রশিক্ষকের নির্দেশনা ছাড়াও অভ্যাস করতে পারেন । এই পদ্ধতি নিয়মিত কয়েক মিনিট অভ্যাসের ফলে আপনি মানসিক শান্তি অনুভব করতে পারেন যা মানসিক চাপ সামলানো ছাড়াও আপনার মনোসংযোগ বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে ।
এই অভ্যাসের আরও একটা ভালো দিক হল, যেকোনো স্থানে এবং সময়ে অভ্যাস করা যেতে পারে । আপনি আপনার সুবিধামত মেডিটেশন অভ্যাসের স্থান এবং সময় ঠিক করে নিতে পারেন, কারন এর জন্য কোনো বিশেষ ধরনের সরঞ্জামের প্রয়োজন হয় না । তবে প্রাথমিকভাবে যারা শুরু করতে চলেছেন তাদের ক্ষেত্রে দিনের কোনো একটা নির্দিস্ট সময় ঠিক করে প্রতিদিন সেই সময়ে অভ্যাস করার পরামর্শ আমরা দেব । ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে গেলে তারপরে নিজের মত করে নিজের সময় নির্ধারীত করে নিতে পারেন ।
Table of Contents
আমরা অনেক সময় প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হই যা আমাদের মানসিক ভাবে পীড়িত এবং উত্তেজিত করে তোলে যার ফলে মানসিক শান্তি বিঘ্নিত হয় । মাইন্ডফুল অভ্যাসের ফলে আমাদের মধ্যে একটা সহজাত স্বভাব তৈরী হয় যা আমাদের কোনো একটা সময়ে একটা নির্দিস্ট বস্তু বা পরিস্থিতি নিয়ে ভাবতে সাহায্য করে । ফলে আমাদের মস্তিষ্ক ছন্নছাড়া ভাবে নানারকম ঘটনা বা পরিস্থিতি নিয়ে একই সময়ে ব্যাস্ত থাকে না । তাই খুব সহজেই আমরা কোনো একটা পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারি, অর্থাৎ ঐ পরিস্থিতিতে আমাদের প্রতিক্রিয়া কিরকম হওয়া উচিৎ সে বিষয়ে একটা স্পষ্ট ধারনা আমাদের তৈরী হয় ।
যেকোনো ধরনের মেডিটেশন অভ্যাসের মূল উদ্দেশ্য এবং অন্যতম একটি দিক হল আমাদের বর্তমান সময়ে যা হচ্ছে তার সম্পর্কে সম্পুর্ণ ভাবে অবগত থাকা, অর্থাৎ আমাদের চিন্তা-ভাবনা কোনোভাবেই অতীত বা ভবিষ্যতে ঘোরা ফেরা করবে না । এর ফলে আমরা অনেক বেশী সচেতন থাকতে পারি বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ।
অতীত বা ভবিষ্যতের চিন্তা-ভাবনা অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের মানসিক পীড়ার কারন হয়ে দাড়ায় । কোন একটা অপূর্ণ ইচ্ছা বা অবাঞ্ছনীয় ঘটনা অথবা ভবিষ্যতের কোনো কাজ যার ফলাফল নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে, সেইসকল ব্যাপার আমাদের মধ্যে একটা আতঙ্ক অথবা হতাশার সৃষ্টি করে, যা ক্রমান্বয়ে মানসিক পীড়ন বা চাপ হিসেবে প্রকাশিত হয় ।
মাইন্ডফুল মেডিটেশন একটি সহজ এবং সরল পদ্ধতি যা কোনো প্রশিক্ষকের পরামর্শ ছাড়াও অভ্যাস করা যেতে পারে । এই মেডিটেশন অভ্যাসের ক্ষেত্রে মনোযোগের বিষয়বস্তু হিসেবে নিজের শ্বাস প্রশ্বাস, কোনো নির্দিস্ট বস্তু বা কোনো শব্দ ব্যাবহৃত হয় । তবে সবথেকে সুবিধাজনক পদ্ধতি হল নিজের শ্বাস প্রশ্বাসের প্রতি মনোযোগ । এই পদ্ধতিতে নিজের প্রতিটা শ্বাস টানা এবং ছাড়া অনুভব করতে হয় ।
প্রাথমিকভাবে পুরো বিষয়টি একটু কঠিন মনে হতে পারে, তাই নিজেকে সময় দিতে হবে । কোনোভাবেই বিরক্ত হলে চলবে না বা কয়েকদিন অভ্যাসের পরে বন্ধ করে দিলে চলবে না । কিছুদিন ধৈর্যসহকারে অভ্যাসের পরে এই পদ্ধতিটি অনেক বেশী আকর্ষনীয় বলে মনে হবে ।
অনবরত মানসিক চাপ বা পীড়ন শুধু মানসিকভাবে অবক্ষয়ের পথে নিয়ে যায় এমন নয় । অনেক সময় আমরা দীর্ঘদিন ধরে মানসিক পীড়ন শারীরিকভাবেও দুর্বল করে তোলে, যা ক্রমাগত বিভিন্নরকম শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করে । মেডিটেশন অভ্যাস আমাদের মস্তিষ্ককে যেকোনো পরিস্থিতিতে শান্ত রাখতে সাহায্য করে, ফলে কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে খুব সহজেই ঠিক-ভুল বুঝে সেই অনুরূপ প্রতিক্রিয়া দিতে পারে ।
নিয়মিত মেডিটেশন অভ্যাসের আরও একটি ভালো দিক হল – মানসিক চাপ প্রতিরোধ করা । যখন কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হই, তখন শান্ত মস্তিষ্কে আমরা সেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে নিই এবং এর ফলে মানসিক কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয় না ।
গবেষনায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত মেডিটেশন অভ্যাসের ফলে মানসিক পরিবর্তন অনুভব করবেন, যার প্রভাব মানসিক পীড়ন নিয়ন্ত্রনের (stress management) ক্ষেত্রেও বোঝা যায় । এছাড়া চাপযুক্ত পরিস্থিতি থেকে সহজে বেরিয়ে আসা বা কোনো পরিস্থিতিতে কম চাপ অনুভব করাও নিয়মিত মেডিটেশন অভ্যাসের একটি সুফল ।
মেডিটেশন অভ্যাসের সবথেকে ভালো দিক হল ভুল পদ্ধতি বলে মেডিটেশন অভ্যাসে কিছু নেই এবং অভ্যাসের প্রথমদিন থেকেই এর সুফল অনুভব করা যায় । মেডিটেশনের সুফল শুধুমাত্র মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দেওয়া বা মনোযোগ বৃদ্ধি না । নিয়মিত মেডিটেশন অভ্যাসের ফলে মস্তিষ্কের পরিকাঠামোর পরিবর্তন ঘটে, নিজের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব তৈরী হয় যা যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে অন্যদের থেকে পৃথক করে তোলে ।
যদি আপনিও কোনোকারনে মানসিক অবষাদে ভুগছেন, টেনশন করছেন এবং ধীরে ধীরে নিজেকে পিছনের সারিতে চলে যাওয়া একজন বলে মনে করছেন, অন্তত কয়েকদিনের জন্য মেডিটেশন অভ্যাস চেষ্টা করে দেখুন । অভিজ্ঞতা থেকে বলছি সামান্য হলেও নিজের মানসিকতার পরিবর্তন বুঝতে পারবেন ।
মেডিটেশন সংক্রান্ত কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে নীচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাতে পারেন এছাড়া ইমেল বা মেসেজের মাধ্যমেও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন ।
সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন এবং অন্যদের সুস্থ থাকতে উৎসাহিত করুন ।
আমরা সাধারনত একটা কথা বলে থাকি যে কোনোকিছুই অতিরিক্ত ভালো না । এই একই কথা…
শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক উন্নতিসাধনের জন্য প্রাচীনকাল থেকেই একটি বহুল প্রচলিত অভ্যাসের নাম হল “যোগ”…
‘স্বাস্থ্য’ কথাটা শুনলে আমরা সাধারনভাবে শুধু শরীরের কথাই ভেবেথাকি, ঠিক পদ্ধতিতে জীবনযাপনের ক্ষেত্রে শারীরিক স্বাস্থ্যের…
প্রাচীনকাল থেকে যেসকল কৃষিজ শষ্য মানবজাতির কাছে খাদ্যবস্তু হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে তার মধ্যে ডাল (Lens…
সূচনা (Introduction) প্রোটিন (Protein) একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাক্রোনিইট্রিয়েন্ট (Macronutrient) যার উৎস (protein sources) আমাদের প্রতিদিনের গ্রহন…
যোগাভ্যাসের বিভিন্ন ধরনের আসন, যা আমাদের দেহের নীচের অংশ যেমন পা, কোমর পেট এবং পিঠ…