It is an efficient form of pranayama to get rid of excess heat from body Dimitri Houtteman/Pixabay.com
শীতলি প্রানায়ম (Sheetali Pranayama) বা শীতল শ্বাস একধরনের নিয়ন্ত্রিত শ্বাসকার্য যা অভ্যাসের ফলে শরীর ও মন ঠান্ডা এবং সতেজ অনুভূত হয় । শীতলি শব্দটি সংস্কৃত শব্দ ‘শীত’ থেকে উদ্ভূত যার অর্থ শীতল বা ঠান্ডা । এই প্রানায়ম অভ্যাসের ফলে শরীর থেকে অতিরিক্ত তাপ নির্গত হয়ে শরীর ঠান্ডা করে যার ফলে বিষন্নতা, ভীতি এবং উত্তেজনা প্রশমিত হয় ।
কিছু বিশেষ ক্ষেত্র বা পরিস্থিতিতে শীতলি প্রানায়ম অভ্যাস খুব কার্যকরী, যেমন গরমকাল, পরিশ্রমের ফলে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া, অনেকটা সময় রোদে কাটানো বা মানসিকভাবে উত্তেজিত থাকা । এছাড়া পিত্তের ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রেও এই প্রানায়ম কার্যকরী । বাত (vata) এবং কফ (kapha) প্রশমিত করার জন্য এই প্রানায়ম অভ্যাস করা যেতে পারে ।
Table of Contents
প্রানায়ম অভ্যাসের সবথেকে ভালো সময় সকালবেলা অথবা সন্ধ্যায় । খালিপেটে বা খাওয়ার অন্তত ৩-৪ ঘন্টা পরে যেকোনো ধরনের প্রানায়ম অভ্যাস করা উচিৎ । এছাড়া যেস্থানে প্রানায়ম অভ্যাস করবেন, খেয়াল রাখবেন সেইস্থানটি যেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং যথেষ্ট খোলামেলা হয় । পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রেও একটু সতর্ক হওয়া দরকার, কারন খুব বেশী চাপা পোশাক প্রানায়ম অভ্যাসের সময় অসুবিধা তৈরী করে । তাই আরামদায়ক পোশাক নির্বাচন করাই শ্রেয় ।
শীতলি প্রানায়ম অভ্যাসের ক্ষেত্রে দুইপা ভাঁজ করে অর্থাৎ সুখাসনে অথবা পদ্মাসনে বা সিদ্ধাসনে বসা যেতে পারে । দুইহাত স্বাভাবিকভাবে অথবা জ্ঞানমুদ্রায় দুই হাটুর উপর রেখে মেরুদন্ড এবং ঘার সোজা করে বসুন । তবে বসার ক্ষেত্রে বা হাতের অবস্থানের ক্ষেত্রে কোনো নির্দিস্ট পদ্ধতি অবলম্বন না করলেও চলে, কারন প্রানায়ম অভ্যাসের সময় নিজে স্বচ্ছন্দ অনুভব করা বেশী প্রয়োজনীয় । সুতরাং আপনি যেভাবে স্বচ্ছন্দ অনুভব করবেন সেভাবে বসেই প্রানায়ম অভ্যাস করতে পারেন ।
চোখ বন্ধ করে বসে কয়েকবার স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাস করুন যাতে প্রানায়ম অভ্যাসের ক্ষেত্রে আপনি স্বচ্ছন্দবোধ করতে পারেন । এবারে আরামদায়কভাবে বসে কয়েকবার শ্বাস টেনে ফুসফুস প্রসারিত করে আস্তে আস্তে শ্বাস ছাড়ুন (যৌগিক শ্বাস) এতে আপনার শরীর উদ্দীপিত হবে প্রানায়ম করার ক্ষেত্রে ।
শীতলি প্রানায়ম অভ্যাস দুইভাবে করা যায় – জিহ্বা গুটিয়ে অর্থাৎ রোল করে এবং জিহ্বা স্বাভাবিক রেখে । প্রাথমিকভাবে যারা শীতলি প্রানায়ম শুরু করবেন তাদের জন্য জিহ্বা রোল করে প্রানায়ম অভ্যাস সম্ভব না হলে জিহ্বা স্বাভাবিক রেখেও অভ্যাস করতে পারেন । জিহ্বা রোল করে প্রানায়ম অভ্যাস করার পদ্ধতি শীতলি প্রানায়ম (Sheetali Pranayama) নামে পরিচিত এবং জিহ্বা স্বাভাবিক রেখে প্রানায়ম অভ্যাসের পদ্ধতি শীতকারী প্রানায়ম (Shitkari Pranayama) নামে পরিচিত ।
শীতলি প্রানায়ম অভ্যাসের ক্ষেত্রে জিহ্বা যতটা আপনার পক্ষে সম্ভব ততটা বাইরের দিকে বের করে গোলাকৃতি (roll) করে নিন এবং দুই ঠোঁট দিয়ে জিহ্বা এমনভাবে বন্ধ করুন যাতে মুখের ভিতরে বাতাস যাওয়ার পথ শুধু গুটিয়ে রাখা জিহ্বার মধ্য দিয়েই থাকে । এবারে রোল করা জিহ্বার মাধ্যমে আস্তে আস্তে গভীর শ্বাস টানুন । নিশ্বাস টানার সময় আপনি জিহ্বার মধ্যে একটা ঠান্ডা স্পর্শ অনুভব করতে পারবেন । শ্বাস টানা হয়ে গেলে জিহ্বা মুখের ভিতরে ঢুকিয়ে নিয়ে মুখ বন্ধ করে দিন । সম্ভব হলে কয়েক সেকেন্ড শ্বাস ধরে রেখে তারপরে নাকের মাধ্যমে শ্বাস ছাড়ুন । শ্বাস ধরে রাখা যাদের পক্ষে সম্ভব নয়, তারা কখনোই জোর করে শ্বাস ধরে রাখার চেষ্টা করবেন না । এতে আপনার শরীরের উপরে চাপ পড়বে, যা একেবারেই অবাঞ্ছনীয় ।
একবার শ্বাস টেনে ছাড়ার পদ্ধতি সম্পুর্ন হলে এক রাউন্ড সম্পুর্ন হয় । প্রাথমিকভাবে ৯-১৫ বার অভ্যাস করতে পারেন, কিন্তু অভ্যস্ত হয়ে উঠলে ধীরে ধীরে শ্বাস টানার সময় এবং ছাড়ার সময় বাড়াতে পারেন । প্রানায়ম অভ্যাস শেষ করার পরে কয়েক সেকেন্ড স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাস করে নিজেকে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরিয়ে এনে স্থান পরিবর্তন করতে পারেন ।
শীতলি প্রানায়ম অভ্যাসের ফলে যেধরনের লাভ আপনি পেতে পারেন সেগুলি হল –
এছাড়াও এই প্রানায়ম বেশকিছুদিন নিয়মিত অভ্যাসের ফলে মানসিক উত্তেজনা, অবষাদ, বিষন্নতা এই ধরনের মানসিক স্থিতিগুলির উন্নতি ঘটে ।
অনেকের ক্ষেত্রে জিহ্বা রোল করে প্রানায়ম অভ্যাস করা সম্ভব হয় না জিহ্বার গঠনের কারনে । তারা জিহ্বা স্বাভাবিক রেখেও এই প্রানায়ম অভ্যাস করতে পারেন, যা সাধারনত শীতকারী প্রানায়ম নামে পরিচিত । শীতকারী প্রানায়ম অভ্যাসের ক্ষেত্রেও জিহ্বা বাইরের দিকে এনে দুই ঠোঁটের দ্বারা চেপে রেখে জিহ্বার দুই পাশের ফাঁক থেকে শ্বাস টানতে হবে । তারপরে জিহ্বা ভিতরে টেনে মুখ বন্ধ করে নাক দিয়ে শ্বাস ছাড়তে হবে । এইভাবে অভ্যাসের ক্ষেত্রেও শ্বাস ধরে রাখতে পারেন, তবে সেটা সম্পুর্ন নির্ভর করে আপনার নিজের সামর্থ্যের উপর ।
শীতলি বা শীতকারী প্রানায়ম অভ্যাসের ফলে বেশকিছু লাভ পাওয়া যায়, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে এই প্রানায়ম অভ্যাস একেবারেই উচিৎ নয় । যেসকল স্থানে বায়ুদূষণের পরিমান অত্যন্ত বেশী সেইসব জায়গায় এই প্রানায়ম না করাই ভালো, কারন এই প্রানায়ম অভ্যাসের সময় শ্বাস মুখ দিয়ে নিতে হয় যার ফলে গৃহীত বাতাস পরিশ্রুত হতে পারে না । এছাড়া যাদের নিম্ন রক্ত চাপ আছে বা সর্দি-কাশির প্রবনতা বেশী তাদের জন্য এই প্রানায়ম অভ্যাস উচিৎ নয় । প্রচন্ড শীতে বা ঠান্ডায় এই প্রানায়ম অভ্যাস ত্যাগ করা উচিৎ ।
এই নিবন্ধে শীতলি প্রানায়মের সাধারন পদ্ধতিগুলি আলোচনা করা হয়েছে, তবে আপনি নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী শীতলি অথবা শীতকারী প্রানায়ম অভ্যাস করতে পারেন । কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে নীচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাতে পারেন । ইমেল বা মেসেজের মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন ।
সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন এবং অন্যদের সুস্থ থাকতে উৎসাহিত করুন ।
আজ ৮ই মার্চ । বিশ্ব নারী দিবস (International Women's Day) ।প্রতিবছর এই দিনটি উদযাপিত হয়…
প্রতিদিন নিয়ম করে হাঁটা সকলের জন্য উপকারী (benefits of walk) এটা আমরা সবাই জানি। নিয়মিত…
আমরা সাধারনত একটা কথা বলে থাকি যে কোনোকিছুই অতিরিক্ত ভালো না । এই একই কথা…
শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক উন্নতিসাধনের জন্য প্রাচীনকাল থেকেই একটি বহুল প্রচলিত অভ্যাসের নাম হল “যোগ”…
‘স্বাস্থ্য’ কথাটা শুনলে আমরা সাধারনভাবে শুধু শরীরের কথাই ভেবেথাকি, ঠিক পদ্ধতিতে জীবনযাপনের ক্ষেত্রে শারীরিক স্বাস্থ্যের…
প্রাচীনকাল থেকে যেসকল কৃষিজ শষ্য মানবজাতির কাছে খাদ্যবস্তু হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে তার মধ্যে ডাল (Lens…