শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য মানবদেহে দুটি নাসারন্ধ্র আছে, যৌগিক মতে যাদের ‘নাড়ি’ বলা হয় । ডান নাসারন্ধ্রকে ‘পিঙ্গলা’ নাড়ি এবং বাম নাসারন্ধ্রকে ‘ইড়া’ নাড়ি নামে চিহ্নিত করা হয় । হটযোগ প্রদীপিকা এবং ঘেরান্ডা সংহিতা এই দুই পুস্তিকায় পিঙ্গলা নাড়ি কে সুর্য্যের সহযোগী এবং ইড়া নাড়ি কে চন্দ্রের সহযোগী বলা হয়েছে । চন্দ্র-ভেদী প্রানায়ম (Chandra bhedi pranayama) অভ্যাসের মাধ্যমে ইড়া নাড়ি বা পরোক্ষভাবে চন্দ্রকে উদ্দীপিত করা হয় ।
যেকোনো ধরনের প্রানায়ম একটি নিয়ন্ত্রিত শ্বাসকার্য, এবং চন্দ্র-ভেদী প্রানায়ম তার ব্যাতিক্রম নয় । প্রতিটা প্রানায়মের নিজস্ব কিছু পদ্ধতি থাকে এবং নিয়মিত অভ্যাসের ফলে সেগুলি থেকে আমরা কিছু উপকার পেতে পারি । চন্দ্র-ভেদী প্রানায়ম অভ্যাসের সময় আমরা বাম নাক বা নাসারন্ধ্র দিয়ে নিঃশ্বাস নিয়ে, ডান নাক বা নাসারন্ধ্র দিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়ি ।
চন্দ্র-ভেদী প্রানায়ম (Chandra bhedi pranayama) একটি সহজ এবং কার্যকরী শ্বাস প্রশ্বাসের প্রক্রিয়া । যৌগিক মতে চাঁদ শীতলতার প্রতীক, ফলে এই প্রানায়ম অভ্যাসের ফলে আমরা আমাদের শরীরে শীতলতা অনুভব করি । নিজেকে ঠান্ডা করার জন্য সবথেকে ভালো এবং সহজ পদ্ধতি হল এই প্রানায়ম অভ্যাস ।
Table of Contents
চন্দ্র-ভেদী প্রানায়ম (Chandra Bhedi Pranayama) অভ্যাসের পদ্ধতি
যেকোনো ধরনের যৌগিক অভ্যাসের জন্য একটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং খোলামেলা পরিবেশ প্রয়োজন এবং এই প্রানায়ম অভ্যাসের ক্ষেত্রেও তার ব্যাতিক্রম নেই । সকালে অথবা সন্ধ্যা প্রানায়ম অভ্যাসের সবথেকে ভালো সময়, তবে যেকোনো সময় অভ্যাস করা যেতে পারে । সকালে খালিপেটে অভ্যাস করার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু দিনের অন্য সময় অভ্যাস করলে খেয়াল রাখবেন যাতে খাওয়ার পরে অন্তত ৩ থেকে ৪ ঘন্টা গ্যাপ থাকে ।
আরামদায়কভাবে মেঝেতে অথবা চেয়ারে যেখানে স্বচ্ছন্দ সেখানে বসে প্রানায়ম অভ্যাস করা যায় । মেঝেতে দুই পা ভাজ করে অর্থাৎ সুখাসন, পদ্মাসন বা সিদ্ধাসন যার যেভাবে সুবিধা সেভাবে পিঠ এবং ঘার সোজা রেখে বসে অভ্যাস করা যেতে পারে । যাদের পক্ষে মেঝেতে বসে অভ্যাস করা সম্ভব না, তারা চেয়ারে বসে অভ্যাস করতে পারেন, তবে সেক্ষেত্রে চেয়ারের সামনের দিকে একটু এগিয়ে বসতে হবে যাতে পিঠ এবং ঘার সোজা থাকে এবং খেয়াল রাখতে হবে যাতে পায়ের পাতা দুটি মেঝে স্পর্শ করে থাকে ।
মেঝেতে বসার সময় যোগাম্যাট বা কুশন ব্যাবহার করা যেতে পারে
আরামদায়কভাবে বসার পরে বাম হাত জ্ঞান-মুদ্রায় বাম হাটুঁর উপরে থাকবে এবং ডান হাত বিষ্ণু-মুদ্রায় রাখতে হবে । যারা বাম হাতে স্বচ্ছন্দ তারা উল্টোটাও করতে পারে অর্থাৎ ডান হাত জ্ঞান-মুদ্রায় ডান হাটুঁর উপর রেখে বাম হাত বিষ্ণু-মুদ্রায় রাখতে হবে ।
আমরা আগেই বলেছি যে চন্দ্র-ভেদী প্রানায়ম অভ্যাসের সময় বাম নাক দিয়ে শ্বাস টেনে ডান নাক দিয়ে শ্বাস ছাড়তে হবে অর্থাৎ শ্বাস টানার সময় ডান নাক বা নাসারন্ধ্র ডান হাতের (বিষ্ণু-মুদ্রায়) বৃদ্ধাঙ্গুষ্ট বা বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে অল্প চাপ দিয়ে বন্ধ করে রাখতে হবে । আবার শ্বাস ছাড়ার সময় ডান হাতের (বিষ্ণু-মুদ্রায়) অনামিকা এবং কনিষ্ঠার সাহায্যে বাম নাক বা নাসারন্ধ্র বন্ধ করে দিতে হবে । শ্বাস টানার সময় খুব আস্তে আস্তে কিন্তু বড় করে নিশ্বাস টানতে হবে, যাতে ফুসফুস প্রসারিত হয় । আবার শ্বাস ছাড়ার সময় আস্তে আস্তে নিশ্বাস ছাড়ুন । শ্বাস টানা বা ছাড়ার সময় খেয়াল রাখবেন যাতে কোনোরকম জোর প্রয়োগ না করতে হয় । যতটা সম্ভব আরামদায়কভাবে প্রানায়ম অভ্যাস করা উচিত ।
RELATED : SURYA BHEDI PRANAYAMA
বাম নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়ার পরে কিছুক্ষণ শ্বাস ধরে রেখে তারপরে আস্তে আস্তে ডান নাক দিয়ে শ্বাস ছাড়তে হবে । শ্বাস নেওয়া, ধরা এবং ছাড়ার সময়সীমা প্রাথমিকভাবে ১ সেকেন্ড, ৪ সেকেন্ড এবং ২ সেকেন্ড দিয়ে শুরু করা যেতে পারে । ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে গেলে একই অনুপাতে সময় বাড়ানো যেতে পারে, অর্থাৎ শ্বাস নেওয়ার সময় বাড়িয়ে ২ সেকেন্ড করলে, ধরার সময় ৮ সেকেন্ড এবং ছাড়ার সময় ৪ সেকেন্ড হতে হবে ।
যেকোনো প্রানায়ম অভ্যাসের সময় অস্বস্তি অনুভব করলে তৎক্ষণাৎ বন্ধ দিতে হবে
এটি একটি সহজ এবং কার্যকরী প্রানায়ম, তাই যাদের প্রানায়ম অভ্যাসের কোনো পুর্ব অভিজ্ঞতা নেই তারা এই প্রানায়ম অভ্যাস দিয়ে শুরু করতে পারে । সেক্ষেত্রে শ্বাস নেওয়ার পরে ধরে রাখার কোনো প্রয়োজন নেই অর্থাৎ বাম নাক দিয়ে শ্বাস টেনে সঙ্গে সঙ্গেই ডান নাক দিয়ে শ্বাস ছাড়তে পারেন । বেশকিছুদিন অভ্যাসের পরে অভ্যস্ত হয়ে গেলে শ্বাস ধরে রাখার অভ্যাস করা যেতে পারে তবে সেক্ষেত্রে সময় মেপে করার প্রয়োজন নেই ।
যারা প্রাথমিক স্তরের অভ্যাস কারী তারা প্রথম প্রথম প্রতিদিন ৫-১০ বার অভ্যাস করতে পারে, তবে অভ্যাস হয়ে গেলে সময় নিজে থেকে বাড়াতে হবে । যাদের প্রানায়ম অভ্যাসে অভিজ্ঞ কিন্তু চন্দ্র-ভেদী প্রানায়ম অভ্যাসের ক্ষেত্রে প্রাথমিক তারা সহজেই ১০ থেকে ১৫ মিনিট অভ্যাস করতে পারে ।
অভ্যাসের পদ্ধতি বা সময় সম্পর্কে যাই বলা হোক না কেনো, নিজের সামর্থ বুঝে অভ্যাস করা উচিৎ । যতক্ষণ সময় নিয়ে অভ্যাস করায় স্বচ্ছন্দ ততক্ষণই অভ্যাস করা উচিৎ । কখনোই জোর করে অভ্যাস করা উচিৎ না, এতে হীতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় ।
চন্দ্র-ভেদী প্রানায়মের (Chandra Bhedi Pranayama) উপকারীতা
- শরীরের তাপ কমায়
- মানসিক্ শান্তি পাওয়া যায় ।
- পিত্তের প্রবাহ কমায় ।
- যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের জন্য লাভজনক ।
- খিদে বাড়ায় ।
সতর্কতা
চন্দ্র-ভেদী প্রানায়ম অভ্যাসের ফলে শরীরের তাপমাত্রা হ্রাস পায়, তাই প্রচন্ড ঠান্ডায় এই প্রানায়ম অভ্যাস করা উচিৎ না । এছাড়া যাদের নিম্ন রক্তচাপ, অ্যাস্থমা বা নিয়মিত সর্দি-কাশির সমস্যা আছে তাদের এই প্রানায়ম অভ্যাস ঠিক না আবার যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তারা এই প্রানায়ম অভ্যাস করতে পারে কিন্তু শ্বাস ধরে রাখার দরকার নেই । সুর্য্য-ভেদী এবং চন্দ্র-ভেদী প্রানায়ম কখনোই একদিনে অভ্যাস করা যাবে না ।
সারমর্ম
চন্দ্র-ভেদী প্রানায়ম একটি সহজ এবং কার্যকরী অভ্যাস, কিছু ব্যাতিক্রম বাদ দিলে যা মোটামুটি সবাই করতে পারে । এই প্রানায়ম অভ্যাসের ক্ষেত্রে তেমন কোনো বিধি-নিষেধ নেই তবে যেকোনো প্রানায়ম অভ্যাসের ক্ষেত্রে সময়কাল এবং নিজের শারীরিক পরিস্থিতির দিকে নজর দিতে হয় । একটা কথা মনে রাখবেন নিজের শারীরিক কোনো অসুবিধা করে কোনো ধরনের প্রানায়ম অভ্যাস উচিৎ না ।
চন্দ্র-ভেদী প্রানায়ম সংক্রান্ত কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে নীচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাতে পারেন । ইমেল বা মেসেজের মাধ্যমেও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন ।
সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন এবং অন্যদের সুস্থ থাকতে উতসাহিত করুন ।