নিরামিষ খাদ্যাভ্যাস (Vegetarian Diet) বলতে আমরা কি বুঝি সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারন নিরামিষের সংঞ্জা বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম । বেশ কিছু স্থানে শুধুমাত্র মাছ মাংস খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়াকেই নিরামিষ হিসেবে ধরা হয়, কিছুক্ষেত্রে মাছ মাংসের পাশাপাশি ডিম এমনকি দুধ অবধি খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয় । আপনি কি নিরামিষাশী বা সম্প্রতি নিজের খাদ্যাতালিকা থেকে মাছ মাংস বাদ দিয়েছেন? অথবা ভাবছেন নিজের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের কথা ? তাহলে নিরামিষ খাদ্যাভ্যাসের সুবিধা অসুবিধা (Pros and Cons of Vegetarian Diet) গুলি সম্পর্কে জেনে রাখা দরকার ।
বিশ্বের ৮ শতাংশ (8%) অর্থাৎ প্রায় ৬৩ কোটি মানুষ নিরামষাশী হিসেবে চিহ্নিত বা পরিচিত, যার মধ্যে প্রায় ৪৩ কোটি নিরামিষাশী মানুষ ভারতীয় যা মোট সংখ্যার প্রায় ৬৮ শতাংশ (68%) । বর্তমানে একটা বিশাল সংখ্যক আমিষাশী মানুষ স্বাস্থ্য কিংবা আধ্যাত্মিক অথবা নিজস্ব কোনো কারনে নিজেদের খাদ্যাভ্যাস নিরামিষে পরিবর্তন করেছেন অথবা করতে চাইছেন । কিন্তু সেক্ষেত্রে যে প্রশ্নটা এসে যায় – নিরামিষ খাদ্যাভ্যাসের সুবিধা বা অসুবিধা গুলি কি কি (Pros and Cons of Vegetarian Diet) এবং সবার ক্ষেত্রে নিরামিষ খাদ্যাভ্যাস প্রযোজ্য কিনা ।
Table of Contents
বর্তমান সময়ে বিভিন্ন কারনে মানুষ নিজেকে নিরামিষ খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত করে তুলছে বা নিজের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করছে । কারও মতে নিরামিষ খাওয়ার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী আবার কেউ কেউ ধার্মিক কারনে নিরামিষ খাওয়ার খেয়ে থাকেন ।কিছু পশুপ্রেমী মানুষ প্রাণীজ সম্পদ রক্ষার্থে নিরামিষ আহার করে থাকেন আবার কেউ কেউ পরিবেশ রক্ষার্থে নিরামিষ খেয়ে থাকেন ।
আপনিও যদি নিরামিষাশী হয়ে থাকেন বা আপনার খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের ব্যাপারে ভেবে থাকেন, সেক্ষেত্রে আপনার কাছে যথার্থ পরিকল্পনা থাকা উচিৎ আমিষের পরিপূরক হিসেবে খাদ্যগুনের অভাব পূরন করার জন্য । কারন আপনার জানা প্রয়োজন কোন ধরনের উদ্ভিজ্জ খাওয়ার কিভাবে আমাদের উপকারে লাগে বা কোন ধরনের খাওয়ার কি ধরনের খাদ্যগুন আছে ।
আমরা যেধরনের খাওয়ার খাই, যদি সেটা পরিকল্পনা অনুযায়ী না হয় তাহলে অনেক সময় আমাদের উপকারের পাশাপাশি ক্ষতিও করে । মাছ মাংস যেমন আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়, বিশেষত ক্রমবর্দ্ধমান শিশুদের বৃদ্ধিতে খুবই সাহায্য করে এছাড়া আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিনের খুব ভালো উৎস হিসেবেও পরিচিত । আবার অনেকের এই ধরনের খাওয়ার হরমোনের অসামঞ্জস্যতার মত সমস্যাও তৈরী করে ।
সঠিক পদ্ধতিতে নিরামিষ খাদ্যাভ্যাসের ফলে বেশ কিছু উপকারীতা পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু মনে রাখতে হবে খাদ্যগ্রহনের পদ্ধতি সঠিক হওয়া দরকার । অনেক সময় দেখা যায় একজন নিরামিষাশী ব্যক্তি ফল-শাকসবজির তুলনায় প্রক্রিয়াজাত বা অতিরিক্ত শর্করা যুক্ত খাওয়ারের ক্ষেত্রে বেশী আগ্রহী । এরকম ক্ষেত্রে নিরামিষ খাদ্যাভ্যাসের লাভের থেকে ক্ষতির পরিমান বেশী হয় ।
গবেষণায় দেখা গেছে আমিষাশীদের তুলনায় নিরামিষাশীদের মধ্যে অধিকমাত্রায় নিয়ন্ত্রিত কোলেস্টেরল থাকে, এছাড়াও উচ্চ রক্তচাপের সম্ভাবনাও কম দেখা যায় । এরফলে হৃদযন্ত্রে সমস্যার প্রবনতা অনেকটাই কমে যায় ।
আমরা জানি, আমিষ জাতীয় খাওয়ার যেমন মাংস বিশেষত লাল মাংস স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং কোলেস্টেরল সম্বলিত হয়, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক । অন্যদিকে উদ্ভিজ্জ পদার্থ যেমন ডাল, দানাশস্য, শাক, বাদাম এইধরনের খাদ্যবস্তু স্বাস্থ্য কর হিসেবে পরিচিত । এই ধরনের খাদ্যবস্তু শুধু ক্ষতিকারক উপাদানমুক্ত নয়, এর পাশাপাশি আমাদের অনেক জটিল রোগ থেকে মুক্ত থাকতেও সাহায্য করে ।
সঠিক পদ্ধতিতে নিরামিষ খাওয়ারের মাধ্যমে তুলনামূলক অনেক কম ক্যালরি গৃহীত হয়, ফলে স্থূলতা আসার সম্ভাবনা কমে যায় যা ওজন নিয়ন্ত্রন করতে সাহায্য করে ।
অনেক সময় দেখা যায় ভুল খাওয়ার বেছে নেওয়ার ফলস্বরূপ শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালরির অভাবে ওজন নিয়ন্ত্রনের বদলে দ্রুত ওজন কমতে থাকে, যা দীর্ঘকালিন চলতে থাকলে জটিল শারীরিক সমস্যার কারন হয়ে দাঁড়ায় ।
নিরামিষশীদের মধ্যে প্রায়শই বেশকিছু গুরুত্ব পূর্ণ নিউট্রিয়েন্টের অভাব দেখা যায়, যেমন জিঙ্ক, ভিটামিন B12, ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড ইত্যাদি । এইধরনের নিউট্রিয়েন্ট আমাদের ভালো স্বাস্থ্য এবং সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজনীয় । যারা দুধ বা দুগ্ধজাত পদার্থ খায় না, তাদের মধ্যে অনেকসময় ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা যায় ।
প্রাণীজ পদার্থ যেমন মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদি প্রোটিনের খুব ভালো উৎস । এইসব খাদ্যবস্তু তালিকা থেকে বাদ দিলে শরীরের প্রয়োজনীয় প্রোটিনের ঘাটতি মেটানোর জন্য ডাল, দানাশস্য, বাদাম, সোয়াবিন এইধরনের খাদ্যবস্তুর উপর নির্ভরশীল হতে হয় । এরকম ক্ষেত্রে দেখা যায় একজন নিরামিষাশী ব্যক্তির মধ্যে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় প্রোটিনের ঘাটতি থেকে যায় ।
RELATED : প্রোটিনের গুরুত্ব
সমগ্র বিশ্বে বিশেষত ভারতবর্ষে একটা কথা প্রচলিত আছে – নিরামিষাশীদের মধ্যে খাদ্যগুন মূলত প্রোটিনের অভাব দেখা যায় । কথাটি আংশিক সঠিক, কারন অধিকাংশ মানুষ কোনোরকম পরিকল্পনা ছাড়াই নিরামিষ খাদ্যাভ্যাসে নিজেকে অভ্যস্ত করে তোলে । সুতরাং নিজের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের আগে নিজের শরীর সম্পর্কে জেনে রাখা খুব প্রয়োজন, যা পরবর্তীকালে নিজেকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে ।
প্রোটিনের ঘাটতি মেটানোর জন্য যেমন ছোলা, বাদাম, ডাল, সোয়াবিন এগুলি প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখা যেতে পারে, আবার ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিডের অভাব মেটাতে সোয়াবিন (Soya seed), কুমড়ো (Pumkin seed), চিয়া (Chia seed) বা তিসির (Flax seed) দানা খাওয়া যেতে পারে । সুতরাং বুঝতেই পারছেন এমন নয় যে আপনি নিরামিষ খাচ্ছেন তার মানে আপনাকে স্বাস্থ্যের সঙ্গে কোনোরকম আপস করতে হবে ।
আপনার কারন যাই হোক না কেন, আপনি যদি ইতিমধ্যে নিরামিষ খাওয়া শুরু করেছেন বা শুরু করার কথা ভাবছেন, কিন্তু স্বাস্থ্যের কথা ভেবে পিছিয়ে পড়ছিলেন, আশা করব এই নিবন্ধটি পরার পরে আপনার সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে । আপনি কি ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন বা আপনার যদি অন্য কোনো প্রশ্ন থাকে, নীচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাতে পারেন । আমরা চেষ্টা করব আপনাকে যথাসাধ্য সাহায্য করার ।
সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন এবং অন্যদের সুস্থ থাকতে উৎসাহিত করুন ।
আমরা সাধারনত একটা কথা বলে থাকি যে কোনোকিছুই অতিরিক্ত ভালো না । এই একই কথা…
শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক উন্নতিসাধনের জন্য প্রাচীনকাল থেকেই একটি বহুল প্রচলিত অভ্যাসের নাম হল “যোগ”…
‘স্বাস্থ্য’ কথাটা শুনলে আমরা সাধারনভাবে শুধু শরীরের কথাই ভেবেথাকি, ঠিক পদ্ধতিতে জীবনযাপনের ক্ষেত্রে শারীরিক স্বাস্থ্যের…
প্রাচীনকাল থেকে যেসকল কৃষিজ শষ্য মানবজাতির কাছে খাদ্যবস্তু হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে তার মধ্যে ডাল (Lens…
সূচনা (Introduction) প্রোটিন (Protein) একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাক্রোনিইট্রিয়েন্ট (Macronutrient) যার উৎস (protein sources) আমাদের প্রতিদিনের গ্রহন…
যোগাভ্যাসের বিভিন্ন ধরনের আসন, যা আমাদের দেহের নীচের অংশ যেমন পা, কোমর পেট এবং পিঠ…