plank pose

প্ল্যাঙ্ক (Plank Pose) – পদ্ধতি, উপকারীতা

যোগাভ্যাসের বিভিন্ন ধরনের আসন, যা আমাদের দেহের নীচের অংশ যেমন পা, কোমর পেট এবং পিঠ সুদৃঢ় এবং মজবুত করতে সাহায্য করে, তার মধ্যে প্ল্যাঙ্ক (Plank Pose) একটি অন্যতম । এই আসন অভ্যাসের ফলে শরীরের নীচের অংশের পাশাপাশি সমগ্র শরীরের পেশী সুগঠিত করতে সাহায্য করে ।

যোগাসনের ভাষায় প্ল্যাঙ্ক (Plank Pose) কুম্ভকাসন বা হলাসন নামেও পরিচিত । সংস্কৃতে ‘কুম্ভক’ শব্দের অর্থ ‘শ্বাস ধরে রাখা’ এবং আসন শব্দের অর্থ ‘ভঙ্গী’ । এই আসন অভ্যাসের সময় শ্বাস প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ বাধ্যতামূলক । হাতের শক্তিবৃদ্ধি এবং ভারসাম্য রক্ষা করার ক্ষমতা বৃদ্ধিতে এই আসন খুবই উপযোগী, যে একজন প্রাথমিক স্তরের যোগাসন অভ্যাসকারীকে পরবর্তীকালে আরও কঠিন আসন অভ্যাসে সাহায্য করে ।

প্ল্যাঙ্ক (Plank Pose) অভ্যাসের পদ্ধতি

আপাতদৃষ্টিতে এই আসন সহজ মনে হলেও প্রাথমিক স্তরের অভ্যাসকারীর জন্য এই আসন যথেষ্ট শ্রমসাধ্য, কারন সমগ্র শরীরের ভার নির্ভর করে হাতের পাতা এবং পায়ের আঙ্গুলের উপর । এই আসন অভ্যাসের সময় যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, তার জন্য অভ্যাসের পদ্ধতিগুলি ধাপে ধাপে আলোচনা করা হয়েছে ।

প্ল্যাঙ্ক পোজ (Plank Pose) অভ্যাস করার জন্য অবশ্যই একটা যোগাম্যাট (Yoga Mat) অথবা কম্বল ব্যবহার করবেন, যাতে অযাচিত কোনো দুর্ঘটনা এড়ানো যায়, আর অভ্যাস করাও সহজ হয় ।

  • প্রথমে চার হাত-পায়ের সাহায্যে (হামাগুড়ি দেওয়ার মত করে) ম্যাট অথবা কম্বলের উপরে অবস্থান করতে হবে ।
  • এরপরে আস্তে আস্তে কাঁধের ভর দুই হাতের উপরে ন্যস্ত করুন, যাতে হাতের নীচের অংশে (Fore Arm)  এর উপরে সমগ্র শরীরের উপরিভাগের চাপ অনুভব করতে পারেন । এবারে আস্তে আস্তে পা দুটিকে পেছনদিকে নিয়ে সোজা করে, ছবির মত করে দুই পায়ের আঙ্গুলের উপর ভর দিতে হবে ।
Plank Pose
  • এইবার সমগ্র শরীরের ভর শুধু দুই হাতের পাতা এবং দুই পায়ের আঙ্গুলের উপরে রেখে চেষ্টা করতে হবে যাতে মাথা থেকে পা অবধি একরেখায় থাকে ।
  • ঘাড় এবং মাথার অবস্থান ঠিক রাখার জন্য সামনের দিকে কিছুটা দূরে মেঝেতে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতে হবে যাতে মাথা শরীরের বাকি অংশের সঙ্গে একরেখায় থেকে স্থির থাকে ।
  • এই অবস্থায় শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ১০-৩০ সেকেন্ড  আসনটি অভ্যাস করুন । এইভাবে এক সেট করার পরে ২০-৩০ সেকেন্ড বিশ্রাম নিয়ে পুনরায় অভ্যাস করুন । এইভাবে ৮-১০ সেট নিয়মিত অভ্যাস করলে আপনি নিজের মধ্যে পরিবর্তনগুলি বুঝতে পারবেন ।

সাধারন ভুল (Common Mistakes)

প্ল্যাঙ্ক (Plank Pose) অভ্যাসের সময় আমরা সাধারন কিছু ভুল করে থাকি, যেগুলোর ব্যাপারে সতর্ক না হলে প্ল্যাঙ্ক অভ্যাসের সম্পূর্ণ উপকারীতা পাওয়া যায় না।

  • মাথা আর পায়ের সঙ্গে পিঠ একরেখায় না থাকলে বা পিঠ উপরের দিকে বেঁকে থাকলে পিঠ বা পেটের পেশীতে প্রয়োজনীয় চাপ পরে না ।
  • থাই এবং নিতম্ব আলগা থাকলে সমগ্র শরীরের উপরে যথাযথ টান পরে না, এর ফলে মাথা থেকে পা অবধি একরেখায় রাখতে অসুবিধা হয় ।
  • প্রাথমিক স্তরের অভ্যাসকারীদের মধ্যে প্রবনতা দেখা যায় অভ্যাস চলাকালীন শ্বাস ধরে রাখা এবং মাথা উপরের দিকে করে রাখা । এক্ষেত্রে একটা ব্যাপার খেয়াল রাখতে হবে, যেকোনো আসন অভ্যাসের সময় শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে হয় । এবং মাথা সমগ্র শরীরের সঙ্গে একরেখায় থাকবে ।

উপকারীতা (Benefits of Plank Pose)

নিয়মিত প্রতিদিন কিছুটা সময় প্ল্যাঙ্ক অভ্যাস করলে আমরা যে ধরনের উপকারীতাগুলি পেতে পারি সেগুলি হল –

  • পেট এবং পিঠের পেশীর দৃঢতা বৃদ্ধি  – এই অভ্যাসের ফলে পেট এবং পিঠের পেশীর উপরে টান এবং চাপ প্র্যোগ হয়, যার ফলে পেট এবং পিঠের পেশীর দৃঢতা বৃদ্ধি হয় এবং পিঠের ব্যাথা থাকলে সেটা ধীরে ধীরে কমতে থাকে ।
  • পায়ের পেশীর শক্তিবৃদ্ধি – প্ল্যাঙ্ক অভ্যাসের সময় মাথা থেকে পা সম্পূর্ণ একরেখায় থাকার ফলে পেটের পেশীর পাশাপাশি পায়ের বিশেষত থাই এবং পায়ের গুলি এই পেশীগুলির শক্তিবৃদ্ধি হয় ।
  • শরীরের ভারসাম্য বৃদ্ধি – সমগ্র শরীরের ভার শুধু দুই হাতের পাতা এবং পায়ের আঙ্গুলের উপরে থাকে, এর ফলে শরীরের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রন করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ।

প্রাথমিক স্তরের অভ্যাসকারীর জন্য কিছু টিপস (Tips for Beginners)

অনেকসময় প্রথমদিকে প্ল্যাঙ্ক অভ্যাসের ক্ষেত্রে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে যায় এর পদ্ধতি । শুধুমাত্র হাতের পাতা এবং পায়ের আঙ্গুলের উপর নির্ভর করে অভ্যাস করতে অসুবিধা হলে সেক্ষেত্রে প্রথম কিছুদিন তুলনামূলক সহজ পদ্ধতিতেও অভ্যাস করা যেতে পারে । এক্ষেত্রে পাদুটিকে ভাঁজ করে শরীরের নিম্নাংশের ভার দুই হাঁটুর উপরে রাখলে অভ্যাস করা সহজ হয় ।

কতক্ষণ সময় নিয়ে অভ্যাস করতে হবে (Duration of Plank)

প্ল্যাঙ্ক (Plank Pose)অভ্যাসের ক্ষেত্রে কোনো নির্দিস্ট সময় বলা সম্ভব নয় । প্রতিটা মানুষের নিজস্ব শারীরিক ক্ষমতা বা সামর্থ্য আছে, যার উপরে নির্ভর করে সে কতক্ষণ সময় নিয়ে অভ্যাস করতে পারবে । তবে যারা প্রাথমিক স্তরের অভ্যাসকারী তাদের নিজেদের জন্য প্রথমে ১০-৩০ সেকেন্ড সময়ের একটা করে সেট (Set) অভ্যাস করতে পারে । এইভাবে প্রতিদিন ৮-১০ টা সেট অভ্যাস প্রথম দিকে যথেষ্ট নিজের শারীরিক ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য ।

সারমর্ম

আমরা এখানে প্ল্যাঙ্ক (Plank Pose) এর সাধারন অনুশীলন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেছি । দক্ষতা অনুযায়ী এবং সামর্থ্য অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকারের প্ল্যাঙ্ক যেমন ফোরয়ার্ম প্ল্যাঙ্ক (Forearm Plank), সাইড প্ল্যাঙ্ক (Side Plank) ইত্যাদি অভ্যাস করা যেতে পারে । যারা নিয়মিতভাবে যোগাসন বা অন্য কোনো শরীরচর্চার সঙ্গে যুক্ত তারা ইতিমধ্যে এই আসন বা অনুশীলনের সঙ্গে পরিচিত । কিন্তু যারা শরীরচর্চা শুরু করার কথা ভাবছেন কিন্তু কিভাবে শুরু করবেন সেটা বুঝতে পারছেন না, তাদের ক্ষেত্রে প্ল্যাঙ্ক একটা উপযোগী আসন হিসেবে কাজ করবে । এই আসন অভ্যাসের ফলে হাত, পা, পিঠ, পেট সমগ্র শরীরের পেশী ব্যবহৃত হয়, এতে পরবর্তীকালে অন্য আসন অভ্যাসের ক্ষেত্রেও সুবিধা হবে ।

শরীরচর্চা শুধু সুন্দর শরীর গঠনে সাহায্য করে তা নয়, এর পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য উন্নতির ক্ষেত্রেও সাহায্য করে । নিয়মিত শরীরচর্চা করে নিজেকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে আরও উন্নত করে তুলুন ।

সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন এবং অন্যদের সুস্থ থাকতে উৎসাহিত করুন ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

Tell us how we can improve this post?

Leave a Reply

Scroll to Top