আমাদের প্রত্যেকেরই প্রতিদিনের একটা নির্দিস্ট রুটিন থাকে যেখানে কেউ ছাত্র, কেউ কোনো স্থানে কর্মরত, কেউ ব্যবসায়ী আবার কেউ একজন গৃহকর্মে নিযুক্ত । কেমন হয়, যদি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে ৫ মিনিটের একটা অভ্যাসের ফলে, আমরা অনেক বেশী কর্মশক্তিপূর্ণ অনুভব করতে পারি এবং নিয়মিত অভ্যাসের ফলে আমাদের দৈনন্দিন ক্লান্তি দূর করতে পারি ? প্রতিদিন সকালে অন্তত ৫ মিনিট মেডিটেশন অভ্যাসের ফলে আমরা প্রচুর উপকার পেতে পারি (Benefits of Morning Meditation), যা আমাদের প্রতিটা দিন সফলভাবে কাটাতে সাহায্য করবে ।
ক্লান্তি দূর, মনোযোগ বৃদ্ধি বা অবসাদ দূর করার মত বেশ কিছু উপকারীতা আমরা নিয়মিত মেডিটেশন অভ্যাসের মাধ্যমে পেতে পারি । মেডিটেশন অভ্যাসের কোনো নির্দিস্ট নিয়ম বা বিধিনিষেধ নেই, অর্থাৎ দিনের যেকোনো সময়েই আমরা মেডিটেশন অভ্যাস করতে পারি । এক্ষেত্রে যে প্রশ্নটা আমাদের মনে হতেই পারে তা হল – ‘সকালে মেডিটেশন অভ্যাসের অতিরিক্ত গুরুত্ব কোথায়’ বা ‘আমরা সকালে মেডিটেশন কেন করব’ ।
Table of Contents
সকালে মেডিটেশন অভ্যাস কেন করব (Morning Meditation Practice – Reason)
আমরা আমাদের দিন কিভাবে শুরু করি তার উপর নির্ভর করে আমাদের সারাদিনের সমস্ত কার্যকলাপ । বেশ কিছু গবেষণার মাধ্যমে এটা প্রায় প্রমানিত যে সকল ব্যক্তির সকালের প্রথম কাজ হল কিছুটা সময় মেডিটেশন অভ্যাস করা, তারা তুলনামূলক অনেক বেশী মনোযোগী, ফোকাসড এবং তুলনামূলক কম অবসাদগ্রস্থ দিনযাপন করে থাকেন ।
প্রতিদিন সকালে মেডিটেশন অভ্যাসের মাধ্যমে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির পাশাপাশি শারীরিক স্বাস্থ্যেরও বেশ কিছু লাভ হয় । এছাড়াও নিয়মিত মেডিটেশন অভ্যাস একজন মানুষকে অনেকবেশী শৃঙ্খলাপরায়ন করে তোলে, যা কোথাও না কোথাও সেই মানুষটির সার্বিক উন্নতিতে সাহায্য করে ।
যেসকল কারনে আমদের সকালে মেডিটেশন করা উচিৎ (Morning meditation practice – Reason) সেগুলি হল –
সকালের শান্ত পরিবেশ মেডিটেশনের উপযোগী
ঘুম থেকে ওঠার পরে আমরা দেখে থাকি সাধারনত আমাদের বাড়ির এবং চারপাশের পরিবেশ শান্ত ও কোলাহলমুক্ত থাকে, যা মেডিটেশন অভ্যাসের জন্য উপযোগী । বিশেষত প্রাথমিক স্তরের অভ্যাসকারীর জন্য এই সময়ে মেডিটেশন অভ্যাস করা অনেক বেশী সহজ হয়, কারন আশপাশের কোনো আওয়াজ বা কোলাহল মেডিটেশনে বিঘ্ন ঘটায় না ।
তাছাড়া সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে বেশ কিছুক্ষণ আমাদের মস্তিষ্ক দিনের অন্যান্য সময়ের তুলনায় কম সক্রিয় থাকে । তাই সকালে মেডিটেশন অভ্যাস করলে সেই সময় অন্য কোনোরকম চিন্তা দ্বারা মেডিটেশনে ব্যাঘাত ঘটার সম্ভাবনা অনেক কম ।
অনেক বেশী এনার্জেটিক অনুভব করা যায়
পুরুষদের ক্ষেত্রে মেডিটেশন অভ্যাসের সময় টেস্টোস্টেরনের স্তর বৃদ্ধি পায় যার ফলে অনেক বেশী এনার্জেটিক অনুভব করতে পারে । কর্টিসল হরমোনের স্তর হ্রাস পায়, যা আমাদের শারীরিক এবং মানসিকভাবে সাহায্য করে থাকে । যেকোনো কাজ বিশেষত যারা শরীরচর্চা করে থাকেন, তাদের জন্য সকালে মেডিটেশন বিশেষভাবে উপযোগী ।
স্ট্রেস এবং উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করে
অনেক সময় দেখা যায় সকালে উঠেই আমরা সারাদিনের কাজ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ি বা উত্তেজনা অনুভব করি । আমাদের কর্মব্যস্ত জীবনে নানারকম কাজ নিয়ে চাপ থাকে এবং সেগুলো সঠিকভাবে করার জন্য একটা মানসিক অস্থিরতা থাকে । এই অস্থিরতা বা উত্তেজনা অনেকসময় আমাদের সারাদিনের কাজকর্মের উপরে প্রভাব ফেলতে পারে । যার ফলাফল হিসেবে অনেক সময় আমাদের কাজের গুনমান খারাপ হয় আবার কিছু ক্ষেত্রে শারীরিক সমস্যাও সৃষ্টি হয় ।
এরকম ক্ষেত্রে চিন্তা বা মানসিক উত্তেজনা কমাতে এবং সঠিক পদ্ধতিতে কাজ সম্পাদন করতে যে পদ্ধতিটি সবথেকে বেশী কার্যকর, তা হল নিয়মিত মেডিটেশন অভ্যাস । সকালে ঘুম থেকে উঠে মেডিটেশন অভ্যাসের ফলে চাপ বা উত্তেজনা হ্রাস পায়, যা আমাদের যেকোনো কাজের প্রতি মনোযোগ দিতে সাহায্য করে ।
একাগ্রতা এবং ফোকাস বাড়াতে সাহায্য করে
সকালে মেডিটেশন অভ্যাস আমাদের সারাদিন ফোকাসড থাকার জন্য এক অত্যন্ত কার্যকরী উপায় । নিয়মিত সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে মেডিটেশনের অভ্যাস আমাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করে, এর ফলে ঠিক-বেঠিক বিচার করা আমাদের জন্য খুব সহজ হয়ে ওঠে । ফলে সহজে চিত্তবিক্ষেপ বা distraction দূরে সরিয়ে নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ কাজের প্রতি মনোযোগ এবং একাগ্রতা দিতে পারি ।
উপরে উদ্ধৃত লাভের পাশাপাশি আরও বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারীতা মেডিটেশন অভ্যাসের মাধ্যমে পাওয়া যায়, যার জন্য মেডিটেশন কোনো নির্দিস্ট সময়ে করার প্রয়োজন পড়ে না । একজন অভ্যাসকারী তার নিজের সুবিধামত এবং স্বাচ্ছন্দ্য অনুযায়ী মেডিটেশন অভ্যাস করতে পারে ।
আমাদের মস্তিষ্ক অনবরত চিন্তা করতে থাকে, যার কোনো নির্দিস্ট ধরন থাকে না । এইপ্রকারের চিন্তা-ভাবনা বুদ্ধধর্ম অনুযায়ী ‘মাঙ্কি-মাইন্ড (Monkey-Mind)’ নামে চিহ্নিত । নিয়মিত মেডিটেশন অভ্যাস আমাদের মনকে শান্ত করে, যার ফলে আমাদের সৃজনশীলতা (creativity), উৎপাদনশীলতা (productivity) বৃদ্ধি পায় । এছাড়া আমাদের শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক সম্পর্কের উন্নতি সাধনেও মেডিটেশন সাহায্য করে ।
সকালে মেডিটেশন অভ্যাসের ক্ষেত্রে সাধারন সমস্যা (Problem Practicing Morning Meditation)
সাধারনভাবে যেধরনের সমস্যাগুলি সকালে বা ভোরে মেডিটেশন অভ্যাসের ক্ষেত্রে দেখা যায় ।
- ভোরে ওঠার অভ্যাস না থাকায় মেডিটেশন করার সময়ে প্রচন্ড ঘুম পায়, এমনকি অনেকে ঘুমিয়েও পড়েন ।
- শরীরে জড়তা এবং আড়ষ্ঠতা থাকে, যা মেডিটেশন অভ্যাসের জন্য স্বচ্ছন্দ হতে বাধা দেয় ।
সাধারন টিপস
আমাদের মধ্যে অনেকেরই ভোরে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস থাকে না, এমনকি আমারও ছিল না । এই পরিস্থিতিতে মেডিটেশন করতে বসা খুব সমস্যাদায়ক বলেই মনে হয় । তবে কিছুদিন অভ্যাসের ফলে এই সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়া যায় । কিন্তু ঘুম পাচ্ছে বা অস্বাভাবিক হাই উঠছে বলে মেডিটেশন বন্ধ করলে চলবে না । কিছুদিন অভ্যাস করুন, দেখবেন এটা আপনার অভ্যাসে পরিনত হয়ে গেছে ।
ঘুম থেকে ওঠার পরে শরীরে জড়তা থাকে, যা কাটানোর জন্য খুব সামান্য স্ট্রেচিং করা যেতে পারে । এর ফলে হাতে পায়ের জড়তা কাটবে ও একই সঙ্গে সামান্য শরীরচর্চার সূত্রপাত হবে ।
সারমর্ম
মেডিটেশন আমাদের সকলের জন্য সমানভাবে লাভজনক । সময়ের কারনেই হোক বা জীবনযাপনের ধারার কারনেই হোক সবার পক্ষে সকালে মেডিটেশন অভ্যাস করা সম্ভব হয়ে ওঠে না । যদি আপনি সকালে মেডিটেশন (Morning Meditation) অভ্যাস করে এর লাভ পেতে চান, তাহলে কোনোরকম চিন্তা-ভাবনা না করে শুরু করুন ।
সকালে মেডিটেশন অভ্যাসের ফলে আপনি কি ধরনের সমস্যায় পড়েছেন বা কি কি উপকার পেয়েছেন, নীচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের অবশ্যই জানান । এছাড়াও যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে আমাদের জানাতে পারেন । আমরা চেষ্টা করব যথাসাধ্য সঠিক উত্তর দিয়ে আপনাকে সাহায্য করার ।
সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন এবং অন্যদের সুস্থ থাকতে উৎসাহিত করুন ।
Very very good 👍
Thank you….