মিনারেলস একধরনের nutrient যা আমাদের সুস্থ থাকার জন্য খুবই প্রয়োজন । বিভিন্ন রকম শারীরিক কার্যকলাপ সঠিকভাবে সম্পন্ন হওয়ার জন্য দুই প্রকারের nutrients অর্থাৎ macronutrients এবং micronutrients প্রয়োজন । Micronutrients অর্থাৎ ভিটামিন এবং মিনারেল এর প্রয়োজন খুব অল্প পরিমানে হয়, যেকারনে এগুলি micronutrients (micro অর্থাৎ ক্ষুদ্র) নামে পরিচিত । আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে কাজ করার জন্য মিনারেলসের যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ (importance of minerals) ভূমিকা নেয় ।
সাধারনত দুই প্রকারের মিনারেল আমরা খাদ্যের মাধ্যমে পেয়ে থাকি – ম্যাক্রোমিনারেল (macro minerals) এবং ট্রেস মিনারেল (Trace minerals) । ক্যালসিয়াম (calcium), ফসফরাস (phosphorus), ম্যাগনেসিয়াম (magnesium), সোডিয়াম (sodium), পটাসিয়াম (potassium), ক্লোরাইড (chloride) এবং সালফার (sulfur) এই মিনারেলগুলি, ম্যাক্রোমিনারেল হিসেবে আমরা খাদ্যের মাধ্যমে পেয়ে থাকি । ট্রেস মিনারেলগুলি হল আয়রন (iron), ম্যাঙ্গানিজ (manganese), কপার (copper), আয়োডিন (iodine), জিঙ্ক (zinc), ফ্লোরাইড (phlouride) এবং সেলেনিয়াম (selenium) ।
এই নিবন্ধে আমরা দুই ধরনের মিনারেল সম্পর্কে অর্থাৎ প্রয়োজনীয়তা, ঘাটতির ফল এবং উৎস কি কি সেগুলো জানব ।
অন্যান্য nutrients এর তুলনায় মিনারেলস কম পরিমানে প্রয়োজন হয় । পরিমানের উপর ভিত্তি করে মিনারেলকে দুই ভাগে ভাগ করা হয় – ম্যাক্রোমিনারেল এবং ট্রেস মিনারেল ।
Table of Contents
ম্যাক্রোমিনারেল (Macro Minerals)
মিনারেলের নাম | কার্যকারীতা | ঘাটতির ফল | RDA (/ day) | উৎস |
---|---|---|---|---|
ক্যালসিয়াম (Calcium) | সুগঠিত এবং মজবুত হাড় ও দাঁতের জন্য প্রয়োজনীয় । আমাদের শরীরের প্রায় ৯৯% ক্যালসিয়াম শুধু দাঁত এবং হাড়েই পাওয়া যায় । মাংস পেশি সংকোচনে সাহায্য করে । এছাড়া রক্ত জমাট বাঁধা একটা জটিল প্রক্রিয়া, যেখানে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । | শিশুদের মধ্যে রিকেট রোগ দেখা যায়, যার ফলে হাড়ের গঠনে সমস্যা দেখা যায় । এছাড়া শিশুদের বৃদ্ধিতে প্রতিবন্ধকতা দেখা যায় । প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে অস্টিওপোরসিস, মাংস পেশিতে খিঁচ ধরা, পায়ে টান ধরার মত সমস্যা দেখা যায় । | ১৯ থেকে ৬০ বছর – ১০০০ mg ৬০ বছরের উর্দ্ধে – ১২০০ mg mg – miligram | দুধ এবং দুগ্ধজাত খাদ্য যেমন দই, চীজ, মাছ (স্যালমন, সার্ডিন), টোফু, সয়াদুধ, ব্রোকলি, ডাল ইত্যাদি । |
ফসফরাস (Phosphorus) | ক্যালসিয়ামের সঙ্গে মিলে মানবদেহের হাড় এবং দাঁতের বিকাশে সাহায্য করে । কার্বহাইড্রেট এবং ফ্যাট শক্তিতে পরিনত হতে সাহায্য করে । এছাড়া ফসফরাস ভিটামিন B এর সঙ্গে মিলে বেশ কিছু শারীরিক কাজ করে । কোষ এবং কলার ক্ষত নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় । | খুবই বিরল ঘটনা কারন প্রায় সব খাওয়ারে এই মিনারেল পাওয়া যায় । দীর্ঘদিনের অভাবের ফলে ক্লান্তি, দুর্বলতার মত লক্ষণ দেখা যায় । ফসফরাসের পাশাপাশি ভিটামিন D এবং ক্যালসিয়ামের অভাবে হাড় এবং দাঁতের গঠন দুর্বল হয়ে পড়ে । | ১৯ থেকে ৬০ বছর – ৬০০ mg | দুধ, মাংস, মাছ, ডিম এবং প্রক্রিয়াজাত খাওয়ার |
ম্যাগনেসিয়াম (Magnesium) | মানবদেহের শতাধিক জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত একটি nutrient, যা আমাদের শরীরে এর গুরুত্ব বোঝানোর জন্য যথেষ্ট । হাড়ের বিকাশে সাহায্য করে । পেশি এবং স্নায়ু সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে । এছাড়া হৃদযন্ত্রের সঠিকভাবে কাজ করার জন্য এই nutrient এর প্রয়োজন হয় । | কিছু ওষুধ দীর্ঘদিন খাওয়ার ফলে, বা অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি দেখা যেতে পারে । যার ফলে খিদে কমে যাওয়া, বমি বমি ভাব, ক্লান্তি বা দুর্বলতা দেখা যায় । অতিরিক্ত ঘাটতির ফলে পেশিতে টান বা অসাড়তা, মেজাজের পরিবর্তন এইধরনের সমস্যা দেখা যায় । | ১৯ থেকে ৬০ বছর – ৪৪০ mg | বাদাম যেমন আলমন্ড, কাজু, চিনাবাদাম ম্যাগনেসিয়ামের ভালো উৎস । এছাড়া বিভিন্ন ডাল, সবুজ সবজি, চকোলেট থেকে ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায় । |
সোডিয়াম (Sodium) | আমাদের শরীরের কোষ এবং তার চারপাশের জলের সাম্যতা বজায় রাখে । মানবদেহে রক্ত চাপ এবং রক্ত পরিমান নিয়ন্ত্রন করার জন্য সোডিয়ামের ব্যাবহার হয় । এছাড়া মাংসপেশি এবং স্নায়ু সঠিকভাবে কাজ করার জন্য এর প্রয়োজন হয় । | সোডিয়ামের ঘাটতি বিভিন্ন মানুষের উপর বিভিন্ন ভাবে প্রভাব ফেলে । খুব অল্প সময়ে হঠাৎ অনেকটা পরিমান ঘাটতি হলে ক্লান্তি, দুর্বলতা, পেশিতে টান, বমি বমি ভাব এইধরনের সমস্যা দেখা যায় । | ১৯ থেকে ৬০ বছর – ২০০০ mg | প্রায় সবধরনের খাওয়ারে সোডিয়াম পাওয়া যায় । তবে সোডিয়ামের সবথেকে ভালো উৎস হল খাওয়ার নুন বা Table Salt । এছাড়া দুধ, শাক সবজি এতেও কিছু পরিমানে সোডিয়াম পাওয়া যায় । |
পটাসিয়াম (Potassium) | আমাদের স্নায়ুকে সঠিকভাবে কাজ করায় এবং মাংসপেশি সংকোচনে সাহায্য করে । এছাড়া তরলের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে । হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় । | মিষ্টি আলু, আলু ,গাজর, অ্যাভোকাডো, পালং, আঙুর, এছাড়া মাংস, দুধ, ডাল এতেও পটাসিয়াম পাওয়া যায় । | ||
ক্লোরাইড (Chloride) | কোষের ভিতরে এবং বাইরের তরলের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখে । | যেকোনো কারনে শরীর থেকে প্রচুর পরিমানে জল বেরোনোর সময় সঙ্গে ক্লোরাইড বেরিয়ে যায় । যার ফলে শরীরে ক্লোরাইডের ঘাটতি দেখা যায় । যাকে Hypochloremia বলা হয় । এর ফলে ক্লান্তি, দুর্বলতা, বমি বমি ভাব এইধরনের সমস্যা দেখা যায় । | ৯ থেকে ৬০ বছর – ২১০০ mg | খাওয়ার নুন, সয়া সস, দুধ, শাক সবজি ইত্যাদি । |
সালফার (Sulphur) | ত্বকের গঠন উন্নতি, ক্ষত নিরাময় অর্থাৎ উন্নত মানের ত্বকের জন্য সালফার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান । এছাড়া অ্যামিনো অ্যাসিড থেকে প্রোটিন তৈরী, DNA গঠন এবং ক্ষতিপূরন এইসকল কাজে সালফারের প্রয়োজন । | সালফারের ঘাটতির ফলে ব্রণ, ত্বকের গঠন নষ্ট হওয়া, নখ ভেঙ্গে যাওয়ার প্রবনতা তৈরী, র্যাশ, আঘাত সারতে দেরী হওয়ার মত সমস্যা দেখা যায় । | প্রোটিন সম্বলিত খাওয়ারের অংশ হিসেবে পাওয়া যায় । সেমন মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল, বাদাম ইত্যাদি । |
RELATED : FUNCTIONS OF VITAMINS
ট্রেস মিনারেল (Trace Minerals)
মিনারেলের নাম | কার্যকারীতা | ঘাটতির ফল | RDA (/ day) | উৎস |
---|---|---|---|---|
আয়রন (Iron) | লোহিত রক্ত কনিকা (হিমোগ্লোবিন) আকারে রক্তে অক্সিজেনের যোগান দেয় যার ফলে রক্তের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশে এবং অঙ্গ প্রত্যঙ্গে অক্সিজেন পৌছায় । | আয়রনের ঘাটতির ফলে অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা দেখা যায় । এছাড়া ক্লান্তি, ঘুম ঘুম ভাব, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়ার মত কিছু সমস্যা দেখা যায় । | প্রাপ্তবয়স্ক – ১৯ থেকে ২৩ mg | মাংস, ডিম, দুধ, দানাশষ্য, বাদাম, ডাল, শাক সবজি । এছাড়া ড্রাই ফ্রুট যেমন আখরোট, কাজু, আলমন্ড, পেস্তা ইত্যাদি । |
ম্যাঙ্গানিজ (Manganese) | অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যোগান, হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে, ক্ষত নিরাময় করার জন্য প্রয়োজন হয় । এছাড়া বেশ কিছু উৎসেচকের অংশ হিসেবে কাজ করে । | যেহেতু প্রায় সবধরনের খাওয়ারে পাওয়া যায়, তাই ঘাটতির সম্ভাবনা কম । ঘাটতির ফলে হাড়ের গঠন এবং বিকাশে ত্রুটি, শারীরিক বৃদ্ধি থেমে যাওয়া, কার্বহাইড্রেট এবং ফ্যাট বিপাকে সমস্যা ইত্যাদি । | প্রাপ্তবয়স্ক – ৪ mg | দানাশষ্য, বাদাম , ডাল, বিভিন্ন শাক-সবজি, চা এইসবে পাওয়া যায় । |
কপার (Copper) | মানবদেহে বিভিন্ন কোষ এবং লোহিত রক্ত কনিকা গঠনে সাহায্য করে । এছাড়া জিঙ্ক এবং ভিটামিন C এর সঙ্গে মিলে ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন তৈরী করে । এছাড়া বিভিন্ন উৎসেচকের অংশ হিসেবে কাজ করে । | ক্লান্তি, দুর্বলতা, হাড়ের দুর্বলতা, বার বার অসুস্থ হয়ে পড়া, চুল পড়া এবং অকালপক্কতা এইধরনের সমস্যা দেখা যায় । | প্রাপ্তবয়স্ক – ১.৭ mg | ডাল, দানাশষ্য, বাদাম, মাশরুম, ডার্ক চকোলেট, পাঠার যকৃৎ ইত্যাদি । |
আয়োডিন (Iodine) | থাইরয়েড গ্রন্থির সঠিকভাবে কাজ নিয়ন্ত্রন করে । | থাইরয়েড গ্রন্থির আকার বেড়ে যায়, যার ফলে গলা ফুলে যায় । থাইরয়েড হরমোনের ক্ষরন কমে যায় যার ফলে অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি, চুল পড়া, শুষ্ক ত্বক এইধরনের সমস্যা দেখা যায় । | প্রাপ্তবয়স্ক – ১৫০ µg | আয়োডিনযুক্ত লবণ, সীফুড, দুগ্ধজাত খাদ্য ইত্যাদি |
জিঙ্ক (Zinc) | কোষ বিভাজন, কোষের বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলা, DNA বিভাজন এবং সঠিক বৃদ্ধিতে ভূমিকা নেয় । | সঠিক বৃদ্ধি না হওয়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, খাওয়ারে স্বাদ না পাওয়া এই ধরনের সমস্যা দেখা যায় । | প্রাপ্তবয়স্ক – ১১ mg | মাছ, মাংস, ডিম, পোলট্রি, শাক-সবজি, বাদাম, মটরশুটি, রাজমা, ইত্যাদি । |
ফ্লোরাইড (Phloride) | দাঁতের ক্ষয় রোধ করতে, দাঁতের মান ভালো করার জন্য প্রয়োজন । এছাড়া দাঁত ও হাড়ের গঠনে ভূমিকা নেয় । | দাঁতের ক্ষয়, এনামেল নষ্ট হওয়ার মত সমস্যা দেখা যায় । | খাওয়ার জল (সাধারনত ফ্লোরাইড মিশ্রিত থাকে), মাছ এবং চা । | |
সেলেনিয়াম (Selenium) | অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে ভিটামিন E এবং ভিটামিন C এর সঙ্গে ফ্রি র্যাডিকাল তৈরী প্রতিরোধ করে । এছাড়া থাইরয়েড গ্রন্থির ক্ষরণে ভূমিকা নেয় । | পেশি দুর্বলতা, কিছু মানসিক সমস্যা যেমন অযাচিত উত্তেজনা, বিভ্রান্ত হওয়া এইধরনের সমস্যা দেখা যায় । | প্রাপ্তবয়স্ক – ৪০ µg | ব্রাজিল নাটস, পাউরুটি, ব্রাউন রাইস, ডিম ইত্যাদি । |
সারমর্ম
মিনারেল (minerals) আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কার্যকলাপের জন্য প্রচন্ড গুরুত্বপূর্ণ একধরনের micronutrient । সঠিক পরিমানে এবং সবধরনের খাওয়ার খেলে সাধারনত আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় মিনারেলের চাহিদা আমরা মেটাতে পারি । সেক্ষেত্রে পরিপূরক নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না । এক্ষেত্রে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে অতিরিক্ত পরিমানে কোনো মিনারেল শরীরের জন্য ঠিক না । তাই সঠিক পরিমান গ্রহন একান্ত প্রয়োজন ।
এই সংক্রান্ত কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাতে পারেন । ইমেল বা মেসেজের মাধ্যমেও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন ।
সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন এবং অন্যদের সুস্থ থাকতে উৎসাহিত করুন ।