mental and physical health

মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব (Importance of Mental and Physical Health)

‘স্বাস্থ্য’  কথাটা শুনলে আমরা সাধারনভাবে শুধু শরীরের কথাই ভেবেথাকি, ঠিক পদ্ধতিতে জীবনযাপনের ক্ষেত্রে শারীরিক স্বাস্থ্যের কথা ভাবলেই চলবেনা । শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্বও বুঝতে হবে । আমাদের বুঝতে হবে যে মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্য (Mental and Physical Health) আমাদের সুস্থ এবং সুন্দর জীবনযাপনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ।

মানসিকএবংশারীরিকস্বাস্থ্য (Mental and Physical Health) – এর মধ্যে সম্পর্ক সাধারনত জটিল এবং একে অপরের পরিপূরক । একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত এবং একে অপরকে বিভিন্নরকমভাবে প্রভাবিত করে থাকে ।

বিষয়টিতে বিষদে যাওয়ার আগে একটা কথা বলে নিই । আমরা এখানে কোনো পরামর্শ বা মতামত দিচ্ছিনা কোনো ব্যক্তি বিশেষের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করার জন্য । মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে আমাদের মধ্যে অনেকেই সচেতন নন । এই ব্লগটি যদি তাদের মধ্যে একটু হলেও সচেতনতা তৈরী করতে পারে, তাহলেই এই ব্লগটির উদ্দেশ্য সফল হবে ।

প্রাচ্যে বিশেষত আমাদের দেশে প্রাচীনকাল থেকেই শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন হওয়ার প্রবনতা দেখা গেছে । যে কারনে প্রাচীনকাল থেকে যোগব্যায়াম, ধ্যান (Meditation) ইত্যাদি অনুশীলনের কথা আমরা জানতে পারি ।

মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের মধ্যে সম্পর্ক (Relation between Mental and Physical Health)

আমাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের মধ্যে সম্পর্ক বোঝার জন্য কোনো গবেষণার প্রয়োজন নেই । আমরা আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে অনেক সময়ই এইধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে থাকি ।

আমরা অনেক সময় বুঝতে পারিনা যে আমাদের অলসতা আমাদের শুধুমাত্র শারীরিকভাবে সমস্যাগ্রস্থ করে তুলছে এমন নয়, অলসতা আমাদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে । প্রাথমিকভাবে হয়তো সেই সমস্যা আমরা বুঝতেও পারি না, কিন্তু দীর্ঘকালীন চলতে থাকলে তা গুরুতর সমস্যার কারন হয়ে দাড়াতে পারে ।

১. শারীরিক কার্যকলাপের (physical activity) ফলে আমাদের মস্তিষ্কে বিভিন্ন হরমোন যেমন ডোপামিন, সেরোটোনিন এবং এন্ডোরফিন  – এর ক্ষরণ বৃদ্ধি করে। যা আমাদের মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে এ ছাড়া উদ্বেগ, মানসিকচাপ এবং বিষন্নতা কমাতে ও সাহায্য করে ।

২. বর্তমান সময়ে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন আমাদের জন্য নানারকম পরিস্থিতি তৈরী করে । যার ফলে ৮ থেকে ৮০ সবাই একটা সাধারন অসুখে ভোগে – মানসিক চাপ বা Stress। নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপের ফলে কর্টিসল হরমোনের ক্ষরণ হ্রাস করে । যার ফলে আমরা অনেক বেশী রিল্যাক্স অনুভব করি, এর ফলে ঘুমের মান উন্নত হয় । গবেষনায় দেখা গেছে ভালো ঘুম আমাদের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে ।

৩. নিয়মিত শরীরচর্চার ফলে শারীরিক গঠন উন্নত হয় এর পাশাপাশি আমাদের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে কার্য সাধন করে । যার ফলে আমাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায় ।

স্বাস্থ্য ও সুস্থতার ক্ষেত্রে মন এবং শরীর দুটোই একান্ত প্রয়োজন, এটা আমাদের বুঝতে হবে । অথচ দেখা যায় সুস্থ থাকার কথা বললেআমরা শারীরিক সুস্থতাকেই অনেক বেশী গুরুত্ব দিই । মন ও শরীর একে অপরের পরিপূরক, তাই শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক সুস্থতার দিকেও আমাদের লক্ষ্য দিতে হবে ।

এতক্ষণ আমরা জেনেছি শারীরিক কার্যকলাপের মাধ্যমে কিভাবে আমরা মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে পারি ।

যখন আমরা কোনো কারনে মানসিক সমস্যায় পড়ি, সেটা সঙ্গে করে নিয়ে আসে মানসিক চাপ, অবসাদ, উদ্বেগ ইত্যাদি । এসবের ফলে আমাদের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয় । যা আমাদের ঘুমের সমস্যা তৈরী করে, এবং দীর্ঘকালীন সেটা আমাদের শারীরিক সমস্যার কারন হয়ে দাঁড়ায় ।

১. মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন অভ্যাসের যে ধরনের উপকারীতা পেয়ে থাকি, সেগুলি হল – মনোযোগ বৃদ্ধি, মানসিক চাপ কমা, মানসিকদিক থেকে শান্ত করে তোলে, বিষন্ন ভাব কেটে যায়, অহেতুক উত্তেজিত হওয়ার প্রবনতা কমে, আত্মনিয়ন্ত্রন বৃদ্ধি ইত্যাদি । মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন অভ্যাসের ক্ষেত্রে উপরোক্ত উপকারীতাগুলির পাশাপাশি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন এবং ঘুমের মান উন্নত করতে সাহায্য করে, যা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্য উন্নতিতে সাহায্য করে ।

Mental Health Matters p.c. – unsplash.com

২. গভীর এবং নিয়ন্ত্রিত শ্বাস প্রশ্বাস যেমন প্রানায়ম অভ্যাসের ফলে আমরা শারীরিকভাবে রিল্যাক্স অনুভাব করি । এছাড়াও এই অভ্যাসের ফলে স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ কমে, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি পায়, এছাড়া শারীরিক কর্মক্ষমতা বাড়ে ।

৩. জার্নাল লেখার অভ্যাস এমন একটি বৈশিষ্ট্য যা নিয়মিত অভ্যাসের ফলে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে, উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে, আত্ম-বিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে এবং নিজের সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব তৈরী করে । এসবের পাশাপাশি দেখা গেছে, জার্নালিং মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করার পাশাপাশি শারীরিক স্বাস্থ্য উন্নত করতেও পরোক্ষভাবে সাহায্য করে ।

কোন ধরনের শারীরিক কার্যকলাপ (physical activities) আমরা অভ্যাস করব?

সুস্থ থাকতে হলে আমাদের সবার উচিৎ সাধ্যমত শারীরিক কার্যকলাপ নিয়মিত অভ্যাস করা । বর্তমান সময়ে আমাদের সকলেরই মানসিক চাপ আছে । ছোট-বড় নির্বিশেষে আমরা সকলেই নানা রকম চাপের মধ্যে দিয়ে দিন কাটাই । তাই যেমনভাবে সম্ভব প্রত্যেকেরই নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করা প্রয়োজন । যে ধরনের কার্যকলাপ (activity) করা যেতে পারে –

  • খোলা জায়গায় যেমন মাঠে বা বাগানে পায়চারি করা (প্রাতকালীন এবং সান্ধ্য ভ্রমণ)।
  • সাঁতার কাটা।
  • দৌড়ানো।
  • যোগব্যায়াম।
  • আউটডোর গেমস যেমন ফুটবল।
  • জিম
  • বাগান পরিচর্যা

সতর্কতা (To be careful)

যেকোনো ধরনের শারীরিক কার্যকলাপ শুরু করার আগে অবশ্যই নিজের শারীরিক পরিস্থিতি এবং সুস্থতা বিচার করে তবেই নির্বাচন করবেন । কারন সবধরনের কার্যকলাপ সকলের জন্য নয় । বয়স এবং শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে তবেই শারীরিক কার্যকলাপ শুরু করা শ্রেয় ।

মানসিক কার্যকলাপ শুরুর ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করা একান্ত প্রয়োজন । মেডিটেশন করার সময় অনেকের মাথা ধরে যায় বা মাথা ঘুরতে শুরু করে । এমতাবস্থায় তখনই সেটা বন্ধ করে দেওয়া প্রয়োজন । পরপর কয়েকদিন প্রচেষ্ঠায় যদি একই ধরনের সমস্যা দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে যে মেডিটেশন আপনার জন্য নয় । প্রানায়ম বা নিয়ন্ত্রিত শ্বাসপ্রশ্বাস অভ্যাসের ক্ষেত্রে তাদের বিশেষ সতর্কতা নিতে হবে যাদের কোনোরকম ফুসফুসজনিত সমস্যা আছে ।

সারমর্ম (Conclusion)

সুস্থ থাকার জন্য আমাদের শরীরের পাশাপাশি মন অর্থাৎ মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও নজর দিতে হবে । এটা নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছি, যে শুধুমাত্র শারীরিক সুস্থতা আমাদের কখনোই নিজের সর্বোত্তম পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে না । খুব ছোট ছোট পদক্ষেপের মাধ্যমে আমরা মানসিক এবং শারীরিক দিক থেকে সুস্থ (Mental and Physical Health) থাকতে পারি ।

সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন এবং অন্যদের সুস্থ থাকতে উৎসাহিত করুন ।  

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

Tell us how we can improve this post?

Leave a Reply

Scroll to Top