আজ ৮ই মার্চ । বিশ্ব নারী দিবস (International Women’s Day) ।প্রতিবছর এই দিনটি উদযাপিত হয় বিশ্বের সমস্ত নারীদের সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে । সম্মান জানানো হয় সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক পরিসরে তাদের অনবদ্য কৃতিত্ব এবং অবদানের জন্য । এছাড়াও gender inequality অর্থাৎ লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ এবং women empowerment অর্থাৎ নারী-স্বশক্তিকরণ সম্পর্কে সচতনতা বৃদ্ধি করাও নারী দিবস উদযাপনের একটি বিশেষ অঙ্গ ।
নারী দিবস উদযাপন শুধুমাত্র সমাজমাধ্যমে কিছু পোস্ট বা হোয়াটসঅ্যাপ স্ট্যাটাস নয় । নারী দিবস পালন ততক্ষণ অপ্রাসঙ্গিক যতক্ষণ না আমরা এই দিনটির অপরিসীম গুরুত্ব বুঝতে পারব । নারী দিবসের গুরুত্ব বোঝার জন্য আমাদের জানা দরকার নারী দিবসের ইতিহাস । কেন ৮ই মার্চ দিনটিকে বেছে নেওয়া হয় নারীদের দিবস হিসেবে । এতে নারীদের অবস্থা এবং অবস্থানের কি পরিবর্তন হতে পারে ।
Table of Contents
নারী দিবসের ইতিহাস জানতে হলে আমাদের অনেকটা পিছিয়ে যেতে হবে
নিজেদের অধিকার যেমন মজুরীবৈষম্য, কাজের নির্দিস্ট সময় নির্ধারন এবং কাজের পরিবেশ বজায় রাখার দাবিতে ১৮৫৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে রাস্তায় নেমেছিলেন নারী শ্রমিকেরা ।
১৯০৮ সালে প্রায় ১৫০০০ নারী নিউ ইয়র্ক শহরের রাস্তায় নামে খারাপ কাজের পরিবেশ, শোষণের বিরদ্ধে এবং ভোটাধিকারের দাবীতে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯০৯ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারী সমগ্র আমেরিকা জুড়ে জাতীয় নারী দিবস (National Woman’s Day) পালন করা হয় ।

Photo by https://www.internationalwomensday.com/
১৯১০ সালে নারীদের এই প্রতিবাদ, দাবী বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তে বিশেষত ইউরোপিয়ান দেশগুলিতে ছড়িয়ে পরে, এবং ১৯১১ সালের ৮ই মার্চ প্রথমবারের মত আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়, যেখানে সমগ্র ইউরোপ জুড়ে প্রায় ১০ লক্ষ নারী-পুরুষ মিছিল করে রাস্তায় নামেন নারীদের অধিকারের দাবীতে ।

Photo by https://www.unwomen.org
এরপরে বিভিন্ন সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নারীরা তাদের অধিকারের দাবীতে সরব হন । তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১৯১৭ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীকালীন পরিস্থিতিতে সংগঠিত প্রতিবাদ যা পরবর্তী পর্যায়ে রাশিয়ান বিপ্লব (Russian Revolution) এ রুপান্তরিত হয় ।
ক্রমান্বয়ে ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জ (United Nations) ৮ই মার্চ দিনটিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস (International Women’s Day) হিসেবে চিহ্নিত করে এবং এখনও পর্যন্ত এই দিনটিকেই আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করা হয় ।

By Tirin also known as takver – www.takver.com – Own work, CC BY-SA 3.0
সার্থকতা এবং বাস্তব
আমার একান্ত ব্যক্তিগত মতামত এটাই যে আন্তর্জাতিক নারী দিবস (International Women’s Day) পালন করা হয় আমরা কতটা এগোতে পেরেছি নারীদের সমান অধিকারের লক্ষ্যে, লিং-বৈষম্যতা দূর করতে বা নারী সশক্তিকরনে । এই দিনটি আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে আমাদের আরও কতটা পথ এগোতে হবে ।
আমাদের আরও অনেক পথ এগোনো বাকি । আমরা অনেক ক্ষেত্রেই দেখতে পাই নারীরা পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে । আবার অনেক ক্ষেত্রে এটাও দেখা যায় ব্যক্তিগত কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্যও অন্যের মতামতের উপরে নির্ভর করতে হয় ।
যদি ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখি তাহলে মনে হবে যে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন যথার্থ এবং সার্থক । কিন্তু সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলে মনে হয়, এখনও অনেক পরিবর্তন দরকার । সামাজিক এবং মানসিক পরিবর্তন । পরিবর্তন দরকার শিক্ষাক্ষেত্রে, কর্মক্ষেত্রে এমনকি নিজের বাড়ির ক্ষেত্রেও ।
আমাদের কি করনীয়?
এই পরিবর্তন করার ক্ষমতা আমাদের মধ্যেই আছে । আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে । এই পরিবর্তন আনার জন্য কোনো বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার প্রয়োজন নেই বা বিশেষ ব্যক্তি হওয়ার প্রয়োজন নেই । কথায় আছে “Charity begins at home”, অর্থাৎ নিজের পরিসরেই নিজেরা চেষ্টা করতে পারি পরিবর্তন আনার ।
নারী-পুরুষ প্রত্যেকের ছোটো ছোটো উদ্যোগ পারে সমাজের আমূল পরিবর্তন আনতে । কারন আমাদের বুঝতে হবে শুধুমাত্র পুরুষের কাঁধে ভর করে একটা সংস্থা, একটা সমাজ বা একটা দেশ কোনোকিছুই চলতে পারে না । তাইতো কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন
“বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি, চির-কল্যানকর।
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।“
সমগ্র নারী জাতিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস (International Women’s Day) –র শুভেচ্ছা । এই পৃথিবী এমন একটা সকাল দেখবে যেদিন কোনো মেয়েকে রাতে বেড়োতে হলে তার এবং তার বাড়ির লোকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়বে না । কোনো নারীকে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন ভেঙ্গে অন্যের সংসার সাজানোর খেলায় মেতে উঠতে হবে না । এই পৃথিবীর কোথাও একজন মানুষকে হেয় করা হচ্ছে না শুধুমাত্র সে নারী বলে ।