Nutrition

কার্বহাইড্রেটের গুরুত্ব (Importance of Carbohydrates)

Nutrition জগতে কার্বহাইড্রেট বা কার্বস –এর গুরুত্ব (importance of carbohydrates) নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে । কারও মতে কম কার্বহাইড্রেট সম্পন্ন খাওয়ার সুস্থ থাকার জন্য উপযোগী, আবার কারও মতে শরীরের জন্য বেশী পরিমানে কার্বহাইড্রেট প্রয়োজন । আবার পরিমিত কার্বহাইড্রেট সবথেকে উপযুক্ত, এটাও অনেকে বিশ্বাস করেন ।

পরিমান যাই হোক এবং তা নিয়ে তর্কবিতর্ক যাই থাকুক, কার্বহাইড্রেট বা শ্বেতসার মানবদেহের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, সেটা আমরা সবাই জানি ।

কার্বহাইড্রেট কি

খাদ্যের মাধ্যমে প্রাপ্ত তিনটি macronutrients এর অন্যতম একটি হল কার্বহাইড্রেট, যা মানবদেহের বিভিন্ন কার্যকলাপের জন্য প্রোটিন এবং ফ্যাটের মতই প্রতিদিন নির্দিস্ট পরিমানে প্রয়োজন হয় । রাসায়নিকভাবে কার্বন, অক্সিজেন এবং হাইড্রোজেন বিভিন্ন অনুপাতে মিশে কার্বহাইড্রেট গঠিত হয় । সাধারনত তিন প্রকারের কার্বহাইড্রেট খাদ্যের মাধ্যমে পাওয়া যায় । সেগুলি হল শর্করা বা সুগার (Sugars), ফাইবার (Fiber) এবং শ্বেতসার বা স্টার্চ (Starches) ।

শর্করা বা সুগার সাধারনত সরল বা সিম্পল কার্বহাইড্রেট (Simple Carbohydrates) হিসেবে পরিচিত, যা প্রাকৃতিকভাবে শাক-সবজি, ফল, দুধে, মধুতে পাওয়া যায় । এছাড়া বাজারজাত খাদ্যবস্তু, শরবত, মিষ্টি এতেও শর্করা বা সুগার পাওয়া যায় ।

ফাইবার এবং শ্বেতসার বা স্টার্চ জটিল বা কমপ্লেক্স কার্বহাইড্রেট (Complex Carbohydrates) নামে পরিচিত, যার মধ্যে ওটস, ভুট্টা, চাল, আলু এগুলিতে প্রচুর পরিমানে স্টার্চ পাওয়া যায় । বিভিন্ন শাক-সবজি, ফল, বাদাম, বিনস এইসব খাদ্যবস্তুতে ফাইবার পাওয়া যায় ।

সিম্পল কার্বহাইড্রেট এবং কমপ্লেক্স কার্বহাইড্রেট

সরল বা সিম্পল কার্বহাইড্রেট – অর্থাৎ একটি বা দুটি শর্করা অনু দিয়ে তৈরী, যা সহজপাচ্য । অন্যদিকে কমপ্লেক্স কার্বহাইড্রেট – বহুসংখ্যক শর্করা অনু দিয়ে তৈরী, তুলনামূলক পাচনে অনেক বেশী সময় নেয় এবং সিম্পল কার্বহাইড্রেটের তুলনায়  অনেক বেশী শক্তি উৎপাদন করে ।

সিম্পল বা কমপ্লেক্স কার্বহাইড্রেট – দুটোর মধ্যে তুলনা করলে দেখা যায়, কমপ্লেক্স কার্বস অনেক বেশী প্রয়োজনীয় আমাদের জন্য । কিন্তু তার মানে এই নয় যে সিম্পল কার্বসের প্রয়োজন একেবারেই নেই । আর তাছাড়া কিছু কিছু খাদ্যবস্তু যেমন দুধ বা ফল এতে সিম্পল কার্বস থাকে, কিন্তু এই ধরনের খাদ্যবস্তুতে অতি প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেল থাকে ।

ফাইবার একটি কমপ্লেক্স কার্বস, আমাদের পাচনতন্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় । কমপ্লেক্স কার্বসের মাধ্যমে অনেক বেশী শক্তি পাওয়া যায়, কিন্তু তার মানে এই নয় যে, কমপ্লেক্স কার্বস সবসময় শরীরের জন্য ভালো । অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যবস্তুতে অনেক বেশী পরিমানে কমপ্লেক্স কার্বস থাকে, যা ভালোর থেকে খারাপ বেশী করে ।

তাই, কোন খাদ্যবস্তুকে শুধু সিম্পল বা কমপ্লেক্স কার্বসের দ্বারা বিচার না করে, অন্য কি কি খাদ্যগুন আছে তা জেনে নেওয়া দরকার । এতে আমাদের সুবিধা হবে নিজেদের সুস্থ থাকার জন্য খাদ্যবস্তু নির্বাচনে ।

কার্বহাইড্রেটের প্রয়োজনীয়তা (Importance of Carbohydrates)

মানবদেহের যেকোন কার্যকলাপের জন্য শক্তি বা এনার্জির প্রয়োজন, যা আমাদের কাছে সাধারনত ক্যালরি (Calorie) হিসেবে পরিচিত । পরিপাকের সময়, শর্করা এবং স্টার্চ ভেঙে গিয়ে সরল শর্করায় পরিণত হয় । এই সরল শর্করা রক্ত প্রবাহে মিশে যায়, তখন একে আমরা রক্তে শর্করা বা গ্লুকোজ (Blood Sugar/Glucose) হিসেবে চিনি । এই গ্লুকোজ, ইনসুলিনের সাহায্যে কোষে প্রবেশ করে শক্তি হিসেবে কাজ করে । প্রতি গ্রাম প্রোটিন এবং কার্বহাইড্রেট থেকে ৪ ক্যালরি এবং প্রতি গ্রাম ফ্যাটের থেকে ৯ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায় ।

শক্তি উৎপাদন ছাড়াও কার্বহাইড্রেট আমাদের শরীরে কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড বিপাক এবং সন্ধানে সাহায্য করে । বেশীরভাগ কার্বহাইড্রেট জাতীয় খাওয়ার পরিপাকের ফলে তা ভেঙে গিয়ে গ্লুকোজে পরিণত হয়, যা পরে শক্তি হিসেবে ব্যাবহৃত হয় এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত গ্লুকোজ, গ্লাইকোজেন্ রুপে যকৃৎ এবং মাংসপেশিতে সঞ্চিত থাকে, যাতে ভবিষ্যতে আমাদের শরীর যথেষ্ট পরিমানে কার্বহাইড্রেট না পায় তখন প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর জন্য ।

স্টার্চ এবং শর্করা জাতীয় কার্বহাইড্রেট পরিপাকের পরে ভেঙে গ্লুকোজে পরিণত হয়, কিন্তু ফাইবার জাতীয় কার্বহাইড্রেটের পরিপাক হয় না । ফাইবার সাধারনত দুইপ্রকারের – দ্রাব্য (soluble) এবং অদ্রাব্য (insoluble) ফাইবার যা বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পাচনতন্ত্রের উন্নতি ঘটিয়ে কোষ্ঠ কাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে ।

কার্বহাইড্রেটের অভাবে মাথাব্যাথা, ক্লান্তি, দুর্বলতা, মনোযোগ ব্যাহত হওয়া, বমি বমি ভাব, কোষ্ঠ কাঠিন্য, মাংসপেশির ক্ষয় এই ধরনের কিছু সমস্যা দেখা যেতে পারে ।

ওজন কমানোর জন্য কমপ্লেক্স কার্বহাইড্রেটযুক্ত কিছু খাদ্যবস্তু

কার্বহাইড্রেট – অনেকের মতে ওজন বৃদ্ধির জন্য উপযোগী একটি খাদ্য উপাদান । কিন্তু বাস্তবিক ব্যাপার হল সঠিক পরিমানে কার্বস সুষম আহারের মাধ্যমে নিলে ওজন বৃদ্ধি হয় না । বরং ওজন কমাতে সাহায্য করে । সম্প্রতি একটি গবেষনায় দেখা গেছে, উপযুক্ত পরিমানে কার্বস সম্বলিত খাওয়ার খেলে ওজন কমাতে এবং ইনসুলিন সঠিক ভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে সাহায্য করে । কিছু সঠিক কার্বস যুক্ত খাওয়ার, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে সেগুলি হল –

ওটস (Oats)

Oats – one of the best grain

ভিটামিন, মিনারেল এবং প্রোটিন সম্বলিত একটি শষ্য, যা শুধু ওজন কমাতে সাহায্য করে এমন নয় । কোলেস্টেরল এবং রক্তে শর্করা কমাতেও ওটস সাহায্য করে । এক কাপ ওটসে প্রায় ৩০ গ্রাম কার্বস থাকে, যার মধ্যে ৫ গ্রাম ফাইবার থাকে ।

দানাশষ্য (Whole Grains)

Whole grains – wheat, rice etc

দানা শষ্য যেমন গম, ব্রাউন রাইস, বার্লি, ওটস, জোয়ার, বাজরা, রাগি এইসব খাওয়ারে উপযুক্ত পরিমানে কার্বসের পাশাপাশি অপরিহার্য nutrients থাকে, যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।

মিষ্টি আলু (Sweet Potato)

Sweet Potatoes

পটাশিয়াম, ভিটামিন – C এবং প্রোভিটামিন- A (Beta-carotene) সমৃদ্ধ একটি ভালো সবজি – মিষ্টি আলু । এছাড়া এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে যা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে । একটি মাঝারি আকারের সেদ্ধ মিষ্টি আলু থেকে প্রায় ২৫ গ্রাম কার্বস পাওয়া যায়, যাতে শর্করা, স্টার্চ এবং ফাইবার সব থাকে ।

কলা (Bananas)

Banana- a popular fruit

ফলের মধ্যে কলা একটি অন্যতম, কারন কলা থেকে শুধু কার্বস পাওয়া যায় এমন নয় । কলাতে বেশ কিছু nutrients যেমন পটাশিয়াম, ভিটামিন-B6 থাকে, যা আমাদের জন্য প্রয়োজনীয় । একটি মাঝারি সাইজের কলায় প্রায় ২৮ গ্রাম কার্বস থাকে, যার মধ্যে প্রায় ৩ গ্রাম ফাইবার পাওয়া যায় ।

আপেল (Apples)

Apple- source of multivitamin and carbs

একটা আপেলে বেশ কিছু nutrients আছে, যেমন ভিটামিন-C, ভিটামিন-B5 B6 B1 B2, ভিটামিন K, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, যদিও এদের পরিমান খুব অল্প । একটি মাঝারি আকারের আপেলে প্রায় ২৫ গ্রাম কার্বস পাওয়া যায়, যার মধ্যে প্রায় ৩ গ্রাম ফাইবার ।

এছাড়াও বিট (Beet root), কমলালেবু (Oranges), শরবতী লেবু (Grapefruit) এবং বাদাম (nuts) ভালো মানের কমপ্লেক্স কার্বসযুক্ত খাওয়ারের উদাহরন ।

সতর্কতা

যাদের ডায়াবেটিস (Diabetes) আছে, তাদের উচিৎ কোনো চিকিৎসক বা ডায়াটেশিয়ানের পরামর্শ মত খাওয়ার খাওয়া উচিৎ । যদিও একজন ডায়াবেটিক মানুষের সম পরিমান কার্বস প্রয়োজন পরে, কিন্তু একবারে অনেকটা কার্বস সম্বলিত খাওয়ার কখনোই খাওয়া উচিৎ না । এবং সেক্ষেত্রে সব থেকে ভালো পরামর্শ একজন বিশেষজ্ঞ দিতে পারেন । এছাড়া কার্বসের নামে অতিরিক্ত শর্করাযুক্ত খাওয়ার বা বাজারজাত প্যাকেট করা খাওয়ার এড়িয়ে চলা ভালো ।

সারমর্ম

কার্বহাইড্রেট নিয়ে যে ভ্রান্ত ধারনা আছে, তার কিছুটা হলেও মিটেছে । একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের দৈনন্দিন কার্যকলাপের জন্য যে শক্তির প্রয়োজন, তার ৪৫% থেকে ৬৫% শক্তি আসে কার্বসের মাধ্যমে । ICMR & NIN প্রকাশিত ২০২০ সালের Nutrition Requirements for Indian রিপোর্ট অনুযায়ী একজন ব্যাক্তির প্রতিদিন  অন্তত ১০০-১৩০ গ্রাম কার্বসের প্রয়োজন । এবং  প্রতি ২০০০ ক্যালরি হিসেবে অন্তত ৩০ গ্রাম করে ফাইবার প্রয়োজন । তাই এরপরে ওজন বেড়ে যাওয়ার কারনে খাওয়ার কমানোর আগে এটা দেখে নেবেন সেটাতে আপনি কতটা লাভবান হচ্ছেন । ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং অন্যদের সুস্থ থাকতে উৎসাহিত করুন ।

How useful was this post?

1
San

Recent Posts

মেডিটেশনের খারাপ প্রভাব (Adverse Effect of Meditation)

আমরা সাধারনত একটা কথা বলে থাকি যে কোনোকিছুই অতিরিক্ত ভালো না । এই একই কথা…

2 months ago

প্রতিদিন যোগাভ্যাসের উপকারীতা (Benefits of Practicing Yoga for Everyday)

শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক উন্নতিসাধনের জন্য প্রাচীনকাল থেকেই একটি বহুল প্রচলিত অভ্যাসের নাম হল “যোগ”…

2 months ago

মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব (Importance of Mental and Physical Health)

‘স্বাস্থ্য’  কথাটা শুনলে আমরা সাধারনভাবে শুধু শরীরের কথাই ভেবেথাকি, ঠিক পদ্ধতিতে জীবনযাপনের ক্ষেত্রে শারীরিক স্বাস্থ্যের…

8 months ago

ডাল – প্রোটিনের উৎস (Lentils – Protein Source)

প্রাচীনকাল থেকে যেসকল কৃষিজ শষ্য মানবজাতির কাছে খাদ্যবস্তু হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে  তার মধ্যে ডাল (Lens…

1 year ago

নিরামিষাশীদের জন্য প্রোটিনের উৎস (Veg Protein Sources)

সূচনা (Introduction) প্রোটিন (Protein) একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাক্রোনিইট্রিয়েন্ট (Macronutrient)  যার উৎস (protein sources) আমাদের প্রতিদিনের গ্রহন…

2 years ago

প্ল্যাঙ্ক (Plank Pose) – পদ্ধতি, উপকারীতা

যোগাভ্যাসের বিভিন্ন ধরনের আসন, যা আমাদের দেহের নীচের অংশ যেমন পা, কোমর পেট এবং পিঠ…

2 years ago