মেডিটেশন অভ্যাসের অনেক লাভ আছে । মানসিক চাপ থেকে মুক্তি, মনোযোগ বৃদ্ধি, উত্তেজনা নিয়ন্ত্রনের ক্ষমতা এরকম আরও অনেক মানসিক এবং শারীরিক উপকারীতা নিয়মিত মেডিটেশন অভ্যাসের ফলে পাওয়া যেতে পারে । হয়তো আপনি মেডিটেশন শব্দটার সঙ্গে পরিচিত নয় অথবা শুধু শব্দটা শুনেছেন কিন্তু মেডিটেশন সম্পর্কে কোনো সম্যক ধারনা নেই । সেক্ষেত্রে সবার আগে আপনার জানা দরকার মেডিটেশন অভ্যাসের পদ্ধতি সম্পর্কে (how to meditate) ।
আপনারা যারা সবে মেডিটেশন শুরু করতে চলেছেন, অভ্যাসের পদ্ধতি (how to meditate) সম্পর্কে জানার আগে মেডিটেশন কি এবং অভ্যাসের ফলে কি ধরনের উপকার পাওয়া যেতে পারে সেটা জানা দরকার ।
Table of Contents
এটি একধরনের অভ্যাস যার ফলে নিজের সচেতনতা বৃদ্ধি পায় এবং একটা সুস্থ দৃষ্টিভঙ্গি তৈরী হয় । মেডিটেশন অভ্যাসের অর্থ একজন নতুন মানুষ হিসেবে নিজেকে পাওয়া নয় বা একজন আলাদা মানুষে পরিনত হওয়া নয় । আবার অনেকে মনে করেন মেডিটেশন অভ্যাসের ফলে সমস্ত চিন্তা ভাবনা বা অনুভূতি থেকে দূরে সরে যাওয়া । প্রকৃতঅর্থে মেডিটেশন অভ্যাসের ফলে চিন্তা বা অনুভূতিগুলিকে কোনোরকম প্রতিক্রিয়া ছাড়া অনুভব করা সহজ হয় ।
প্রাথমিকভাবে মেডিটেশন শুরু করার ক্ষেত্রে সবথেকে সহজ পদ্ধতি হল নিজের শ্বাস প্রশ্বাসের উপর মনোযোগ দেওয়া, যা Mindfulness Meditation নামে পরিচিত । তাই আমরা এখানে যা আলোচনা করব সব mindfulness meditation এর উপর ভিত্তি করে ।
মেডিটেশন করার কারন যা খুশি হতে পারে । মানসিক শান্তি পাওয়া, সৃজনশীলতা বৃদ্ধি, আধ্যাত্মিক যোগ বৃদ্ধি বা অন্য কিছু আপনার উদ্দেশ্য যেকোনো একটা হতে পারে । অথবা শুধুমাত্র দিনের কয়েকটা মুহুর্ত নিজের সঙ্গে কাটানো যদি আপনার উদ্দেশ্য হয় তাতেও কোনো সমস্যা নেই । একটা ব্যাপার মনে রাখবেন যে মেডিটেশন কোনো যাদু না । তাই হঠাৎ করেই কোনোকিছু পরিবর্তন হয়ে যাবে না । ধৈর্য নিয়ে মেডিটেশন অভ্যাস করতে পারলে আপনি আপনার উদ্দেশ্যে সফল হবেন ।
প্রাথমিকভাবে মেডিটেশন শুরু করার ক্ষেত্রে নিরিবিলি এবং শান্ত পরিবেশ কাম্য । কোনোরকম চেঁচামেচি বা শব্দ, মন বিক্ষিপ্ত করে তোলে যার ফলে সঠিকভাবে অভ্যাস করা সম্ভব হয় না । পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন স্থান মেডিটেশন অভ্যাসের জন্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ । এছাড়া খুব উজ্জ্বল আলো মেডিটেশন অভ্যাসের জন্য প্রতিকূল, তাই মেডিটেশনের স্থানে আলো কমিয়ে রাখাই উচিৎ ।
মেডিটেশন দিনের যেকোনো সময় অভ্যাস করা যেতে পারে । তবে প্রাথমিকভাবে সকাল অথবা সন্ধ্যা মেডিটেশনের জন্য বেছে নেওয়া উচিৎ । কারন প্রথম প্রথম অনেক ধরনের সমস্যা অনুভূত হবে মেডিটেশন অভ্যাসের সময়, তাই সবার আগে একটা নির্দিস্ট সময় ঠিক করা প্রয়োজন যাতে শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে সেই সময়ে অভ্যাস করা যেতে পারে । এছাড়া খালিপেটে অথবা খাওয়ার বেশ খানিকটা পরেই মেডিটেশন অভ্যাস করা উচিৎ, এবং সেইদিক থেকে সকাল বা সন্ধ্যা উপযুক্ত সময় ।
অনেকসময় শুনে থাকবেন যে শুয়েও মেডিটেশন অভ্যাস করা যায় এবং সেটা সর্বতভাবে ঠিক । তবে প্রাথমিকভাবে মেঝেতে অথবা চেয়ারে বসেই অভ্যাস করা উচিৎ । মেঝেতে বসার ক্ষেত্রে দুই পা ভাঁজ করে অর্থাৎ সুখাসনে বসা যেতে পারে । বসবার ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে মেরুদন্ড এবং ঘাড় সোজা অর্থাৎ একরেখায় থাকে । অনেকের মেঝেতে বসায় সমস্যা থাকে, সেক্ষেত্রে তারা চেয়ারেও বসতে পারেন । চেয়ারে বসার সময় একটু সামনের দিকে এগিয়ে বসবেন, যাতে পিঠ সোজা থাকে এবং পায়ের পাতা দুটি মাটি স্পর্শ করে । মেঝেতে বসার ক্ষেত্রে নিজের সুবিধার জন্য কুশন ব্যাবহার করতে পারেন ।
মেডিটেশনের জন্য কোনো নির্দিস্ট ধরনের পোশাক পরার ব্যাপার নেই । যা খুশি পরে অভ্যাস করা যেতে পারে, শুধু একটা ব্যাপার খেয়াল রাখতে হবে যাতে নিজে সেই পোশাকে স্বচ্ছন্দ মনে করেন । আপনার পোশাক যেন মনোযোগ বিক্ষেপের কারন না হয়ে দাঁড়ায় সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন ।
যারা প্রথম প্রথম মেডিটেশন শুরু করবেন, তারা সময়ের হিসেব রাখার জন্য টাইমার বা স্টপ-ওয়াচ ব্যাবহার করতে পারেন । এতে বার বার মনোযোগ সময়ের দিকে যাবে না, এবং যতক্ষন সময় মেডিটেশন অভ্যাসের জন্য টার্গেট করেছেন সেই সময়টা আপনি মেডিটেশনে নিয়োগ করতে পারবেন কোনোরকম বিক্ষেপ ছাড়াই ।
আমরা মেডিটেশনের কোনো ভিডিয়ো বা ছবি দেখি, তাতে দেখা যায় অভ্যাসকারী তার দুই হাত একটি বিশেষ মুদ্রায় দুই হাঁটুর উপর রেখে অভ্যাস করছেন । কিন্তু প্রাথমিকভাবে সেটার দরকার নেই । আপনি আরামদায়কভাবে নিজের কোলের উপর রেখেও অভ্যাস করতে পারেন অথবা দুই হাত দুই হাঁটুর উপর স্বাভাবিকভাবে রেখেও বসতে পারেন ।
চোখ খোলা বা বন্ধ যেটাতে আপনি স্বচ্ছন্দ সেভাবেই মেডিটেশন অভ্যাস করতে পারেন । তবে প্রাথমিকভাবে যারা অভ্যাস শুরু করবেন, তাদের জন্য চোখ বন্ধ রাখাটাই শ্রেয় । এর ফলে বাইরের কোনো কিছুর প্রতি দৃষ্টি যাবে না, তাই কোনোরকম বিক্ষেপ তৈরী হবে না । মাথাটা নীচের দিকে সামান্য ঝুকিয়ে বসুন কিন্তু খেয়াল রাখবেন যাতে ঘাড় মেরুদন্ডের সঙ্গে সরলরেখায় থাকে ।
এতক্ষণ পর্যন্ত আমরা বাহ্যিক বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করলাম । এবার আমরা জানব যেসব পদ্ধতিতে মেডিটেশন করা যায় সেগুলি । মেডিটেশনের অর্থ চিন্তাশূন্য হওয়া না, বরং কোনো একটা নির্দিস্ট বস্তু বা প্রক্রিয়ার উপর নিজের মনোযোগ নিবদ্ধ করা । মেডিটেশন অভ্যাসের অনেক রকম পদ্ধতি আছে । প্রাথমিকভাবে যারা শুরু করতে চলেছেন তাদের জন্য সবথেকে সহজ পদ্ধতি হল নিজের শ্বাস – প্রশ্বাসের উপর মনোযোগ স্থাপন করা । এর ফলে আপনি নিজের প্রতিটা শ্বাস – প্রশ্বাস কে অনুভব করতে পারবেন । নিশ্বাসের উপর মনোযোগ স্থাপনের অনেক রকম পদ্ধতি আছে, তার মধ্যে থেকে আপনাকে বেছে নিতে হবে যেটাতে আপনি স্বচ্ছন্দ মনে করবেন । যেসব সহজ পদ্ধতিতে নিশ্বাসের উপর মনোযোগ দেওয়া যায় সেগুলি হল –
মেডিটেশন অভ্যাসের সময় চোখ বন্ধ করে, কান বন্ধ করে আপনি বাইরের বাধাবিঘ্ন আটকাতে পারেন, কিন্তু আমাদের মস্তিষ্কে সবসময় বিভিন্ন রকম চিন্তা-ভাবনা ঘুরে বেড়ায় সেগুলো বন্ধ করার কোনো উপায় নেই । আপনি যখন মেডিটেশন করবেন, তখনও নানারকম চিন্তা-ভাবনা আপনার মাথায় আসবে এবং এটা খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার । প্রাথমিকভাবে যারা শুরু করেন তারা অনেকসময় বিরক্ত হয়ে পড়েন বা উত্তেজিত হয়ে পড়েন যেটা হওয়া উচিৎ না । চেষ্টা করবেন যেসকল ভাবনা মাথায় আসছে সেগুলোকে বোঝার কিন্তু তাতে কোনো প্রতিক্রিয়া দেওয়ার দরকার নেই, বরং চেষ্টা করুন নিজের সমগ্র চিন্তাকে নিজের নিশ্বাসের উপর নিবদ্ধ করার ।
উপরের পদ্ধতিতে প্রাথমিকভাবে প্রতিদিন অন্তত ৫ থেকে ৭ মিনিট চুপচাপ একটা অপেক্ষাকৃত শান্ত জায়গায় বসে নিজের শ্বাসপ্রশ্বাস অনুভব করার চেষ্টা করুন । মনে রাখবেন মেডিটেশন অভ্যাস যথেষ্ট ধৈর্যের ব্যাপার, তাই মাঝপথে বিরক্ত হয়ে বন্ধ করে দেবেন না । ধৈর্য নিয়ে কিছুদিন অভ্যাসের ফলে আপনার নিজের মানসিক পরিবর্তন আপনি নিজেই অনুভব করতে পারবেন । ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে উঠলে সময় বাড়াতে পারেন, তবে সেটা একান্তই নিজস্ব ব্যাপার ।
মেডিটেশনের ক্ষেত্রে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল নিজে স্বচ্ছন্দ অনুভব করা । তাই বসার সময় বা শ্বাস নেওয়ার সময় অথবা অভ্যাসের সময় আপনি যদি কোনোরকম সমস্যা অনুভব করেন তাহলে তখনি বন্ধ করে একটু বিশ্রাম নিয়ে নিন ।
আশা করি, প্রাথমিকভাবে যারা মেডিটেশন শুরু করতে চান, অভ্যাসের পদ্ধতিগুলি (how to meditate) কিছুটা হলেও ব্যাপারটা সহজ করে তুলতে পেরেছি । যারা প্রাথমিকভাবে মেডিটেশন শুরু করতে চলেছেন তাদের জন্য সবটাই এক নতুন ধরনের অভিজ্ঞতা, তাই প্রশ্নও অনেক । যদি কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাতে পারেন । এছাড়া ইমেল বা মেসেজের মাধ্যমেও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন ।
সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন এবং অন্যদের সুস্থ থাকতে উৎসাহিত করুন ।
আমরা সাধারনত একটা কথা বলে থাকি যে কোনোকিছুই অতিরিক্ত ভালো না । এই একই কথা…
শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক উন্নতিসাধনের জন্য প্রাচীনকাল থেকেই একটি বহুল প্রচলিত অভ্যাসের নাম হল “যোগ”…
‘স্বাস্থ্য’ কথাটা শুনলে আমরা সাধারনভাবে শুধু শরীরের কথাই ভেবেথাকি, ঠিক পদ্ধতিতে জীবনযাপনের ক্ষেত্রে শারীরিক স্বাস্থ্যের…
প্রাচীনকাল থেকে যেসকল কৃষিজ শষ্য মানবজাতির কাছে খাদ্যবস্তু হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে তার মধ্যে ডাল (Lens…
সূচনা (Introduction) প্রোটিন (Protein) একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাক্রোনিইট্রিয়েন্ট (Macronutrient) যার উৎস (protein sources) আমাদের প্রতিদিনের গ্রহন…
যোগাভ্যাসের বিভিন্ন ধরনের আসন, যা আমাদের দেহের নীচের অংশ যেমন পা, কোমর পেট এবং পিঠ…