easy-yoga-poses

যোগ অভ্যাস শুরু করার জন্য কিছু সহজ আসন (Easy Yoga Poses for Beginners)

যোগ অভ্যাস শুরু করতে চান, অথচ, বুঝে উঠতে পারছেন না কিভাবে শুরু করবেন বা কোন ধরনের আসন দিয়ে শুরু করা উচিত ।  একজন প্রাথমিকস্তরের যোগ অভ্যাসকারীর সুবিধার্থে কিছু সহজ এবং প্রাথমিক ধাপের যোগ আসন (Easy Yoga Poses for Beginners) সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে । একজন ব্যক্তি যখন প্রথমবারের জন্য কোনোরকম শরীরচর্চা শুরু করেন, তখন তার মানসিক এবং শারীরিক দ্বিধা-দন্দ থাকে, যেগুলি মাথায় রেখেই আসনগুলি নির্বাচন করা হয়েছে ।

যোগাসন সম্পর্কে আলোচনা করার আগে যোগ সম্বন্ধে কিছু সাধারন জ্ঞান থাকা আমাদের একান্ত প্রয়োজন । এর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারব আমাদের কোন ধরনের যোগাসন অভ্যাস করা উচিত বা আমরা যে যোগাসন করছি তা কোন ধরনের আসন ।

সাধারন ভাষায় ‘যোগ’ বলতে আমরা বুঝি শরীর, মন এবং আত্মার মিলন

বহু প্রাচীনকাল থেকে প্রাচ্যে প্রাচীন শাস্ত্র মতে ভিন্ন প্রকারের যোগ অভ্যাস করা হয়ে থাকে, যেমন – হট যোগ, বিন্যাস যোগ, কুণ্ডলিনী যোগ, অষ্ঠাঙ্গ যোগ ইত্যাদি ।  

সহজ যোগ অভ্যাস (Easy Yoga Poses)

প্রাথমিক স্তরের যোগ অভ্যাসকারীদের জন্য ইন্টারনেটে প্রাপ্ত তথ্য বা ভিন্ন প্রকারের মত অনেকসময় বিভ্রান্ত্রি সৃষ্টি করে এবং ফলস্বরূপ অনেকেই যোগ অভ্যাস শুরু করতে দ্বিধাবোধ করেন বা ভীত হয়ে পড়েন ।  এই নিবন্ধে যেসকল আসনগুলি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, তা সকলের জন্য প্রযোজ্য অর্থাৎ যারা প্রথমবারের জন্য কোনোরকম শরীরচর্চা করতে চলেছেন অথবা যোগ অভ্যাস প্রথমবার করতে চলেছেন ।

শবাসন (Shabasana or Corpse Pose)

হট-যোগ অনুসারে শবাসন একধরনের আসন যা বর্তমানে যৌগিক নিদ্রা হিসেবেও পরিচিত । ‘শব’ অর্থাৎ মৃতদেহ এবং ‘আসন’ অর্থাৎ যোগ পদ্ধতি বা ভঙ্গী – এই দুইয়ের সম্মিলিত শব্দ শবাসন । এই আসন অভ্যাসের সময় সমস্ত শরীর আলগা করে ছেড়ে শুয়ে খুব ধীরে ধীরে শ্বাস টানতে এবং ছাড়তে হয় ।

শবাসন অভ্যাসের সময় সমগ্র শরীর আরামদায়ক অবস্থানে থাকে

প্রায় সমস্ত যৌগিক আসন অভ্যাসের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় সেই আসন অভ্যাসের পরে কিছুক্ষণ শবাসন অভ্যাসের মাধ্যমে । শবাসন অভ্যাসের সময় সমস্ত স্নায়ু সতেজ এবং সজাগ রাখতে হয়, কিন্তু সমস্ত শরীর আরামদায়ক অবস্থানে রেখে শুয়ে থাকতে হয় ।

Savasana or Corpse Pose

উপকারীতা – কিছুক্ষণ শবাসন অভ্যাসের ফলে আমাদের শরীরের সমস্ত পেশী শিথিল হয়, এর ফলে এদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায় । এছাড়া, সমগ্র শরীরে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়, তাই খুব সহজে ক্লান্তি দূর করার জন্য শবাসন একটি ভালো উপায় ।

ভুজঙ্গাসন (Bhujangasana or Cobra Pose)

হট-যোগে উল্লিখিত এই আসনটি স্বতন্ত্রভাবে অভ্যাসের পাশাপাশি সূর্য্যনমস্কারের অঙ্গ হিসেবেও অভ্যাস করা হয়ে থাকে । ‘ভুজঙ্গ’ অর্থাৎ সাপ (Sanke) এবং ‘আসন’ অর্থাৎ যোগ পদ্ধতি বা ভঙ্গী – এই দুইয়ের মিলিতভাবে নাম হয় ভুজঙ্গাসন । এই আসন করার সময় অভ্যাসকারীর দেহের উপরিভাগের সঙ্গে সাপের ফণা তুলে রাখার সাদৃশ্য থাকে, তাই এই আসনকে ভুজঙ্গাসন বলা হয় ।

ভুজঙ্গাসন অভ্যাসকারীর সুবিধামত ভিন্ন পদ্ধতিতে যেমন অর্দ্ধ ভুজঙ্গাসন, পুর্ণ ভুজঙ্গাসন করা যেতে পারে, তবে একজন প্রাথমিকস্তরের অভ্যাসকারীর উচিত সহজ পদ্ধতিতে শুরু করা, যাতে আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে । এই আসন অভ্যাসের সময় শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখা প্রয়োজন ।

Bhujangasana or Cobra Pose

উপকারীতা –  এই আসন অভ্যাসের ফলে মেরুদন্ডের কাঠিন্য দূর করে নমনীয় করতে সাহায্য করে, ফলে স্নায়ুমন্ডলী সতেজ হয় । কাঁধের গঠন সঠিক এবং সুদৃঢ় করে ।  এছাড়া এই আসন অভ্যাসের ফলে বুকের গঠন সুন্দর হয় এবং হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ।

শলভাসন (Shalvasana or Locust Pose)

ভুজঙ্গাসন অভ্যাসের পরে শলভাসন অভ্যাস করা খুব উপকারী ।  ‘শলভ’ শব্দের অর্থ পতঙ্গ বা পঙ্গপাল এবং ‘আসন’ অর্থাৎ যোগ পদ্ধতি বা ভঙ্গী, এই দুইটি শব্দ মিলে তৈরী হয় শলভাসন । এই আসন অভ্যাসের সময় পায়ের অবস্থান সাধারনত পতঙ্গের পশ্চাদভাগের অনুরূপ, সেই কারনে এই আসন শলভাসন নামে পরিচিত ।

শলভাসনের উল্লেখ প্রাচীন শাস্ত্র হট-যোগে না থাকলেও বিশিষ্ট যোগীদের মতানুযায়ী এটিও একটি প্রাচীন যোগাসন, যা নিয়মিত অভ্যাসের ফলে বেশকিছু উপকারীতা পাওয়া যায় । শলভাসনের দুটি প্রকরন আছে – ১) পুর্ণ শলভাসন ২) অর্দ্ধ শলভাসন ।

Salvasana or Locust Pose

উপকারীতা – এই আসন অভ্যাসের ফলে মধ্যচ্ছদা (Diaphragm) সুগঠিত হয়, যা হৃদযন্ত্র এবং পরিপাকগ্রন্থিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে । এছাড়া এই আসন অভ্যাসের ফলে তলপেটের এবং নিতম্বের পেশী সুদৃঢ় হয় । অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির ক্ষরণ নিয়ন্ত্রনেও এই আসন সাহায্য করে ।

পদহস্তাসন ( Padahastasana or Hand-to-Foot Pose)

একজন প্রাথমিকস্তরের যোগ অভ্যাসকারীর জন্য প্রথমদিকে যে ধরনের আসনগুলি দেওয়া হয় তার মধ্যে অন্যতম হল পদহস্তাসন । যেহেতু এই আসন অভ্যাসকালীন একজন অভ্যাসকারী হাতের সাহায্যে পায়ের পাতাদুটি স্পর্শ করে, তাই এই আসনের নাম ‘পদহস্তাসন’ যদিও একে অনেকে হস্তপদাসন বলেও উল্লেখ করে থাকে ।

এক্ষেত্রে বলা প্রয়োজন প্রথমদিকে পদহস্তাসন অভ্যাস করার সময় হাঁটু ভাঁজ হয়ে যাওয়ার একটা প্রবণতা দেখা যায় । আপনার ক্ষেত্রেও এরকম হয়ে থাকলে তা নিয়ে চিন্তার কোনো কারন নেই । কিছুদিন অভ্যাসের পরে এটা ঠিক হয়ে যাবে ।  

উপকারীতা – এই আসন অভ্যাসের ফলে তলপেটে সংকোচন সৃষ্টি হয়, ফলে পাকস্থলী, যকৃৎ, পাচনতন্ত্র, মূত্রাশয় এবং অগ্ন্যাশয় প্রভৃতি সুগঠিত হয় যা হজমে গণ্ডগোল, অজীর্নতা, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি দূর করতে সাহায্য করে এবং ক্ষুধা বৃদ্ধি পায় ।  এছাড়া মেরুদন্ডের নমনীয়তা বাড়াতে এবং দেহের অসামঞ্জস্য দূর করতে সাহায্য করে ।

ত্রিকোনাসন (Trikonasana or Triangle Pose)

আপনি যদি যোগ অভ্যাসের জগতে নতুন এবং আগে কখনও কোনো রকম শরীরচর্চার সঙ্গে যুক্ত না থেকে থাকেন, সেক্ষেত্রে ত্রিকোনাসন আপনার জন্য যথেষ্ট লাভজনক ।  এটি যোগাসন চর্চায় একটি গুরুত্বপূর্ণ আসন হিসেবে পরিচিত থাকলেও শরীরচর্চার অন্যান্য শাখায় এটি ওয়ার্ম-আপ হিসেবে খুবই জনপ্রিয় ।

এই আসন অভ্যাসের সময় অভ্যাসকারী পা এবং হাতের সাহায্যে ত্রিকোন বা ত্রিভুজের সৃষ্টি করে, যেকারনে এই আসন ত্রিকোনাসন নামে পরিচিত । এই আসনের অন্য একটি প্রকরন হল – পরিবৃত্ত ত্রিকোনাসন ।

Trikonasana or Triangle Pose

উপকারীতা – পায়ের গঠন সুন্দর এবং সুদৃঢ় করতে সাহায্য করে, এছাড়া কাঁধের হাড়ের গতিশীলতা বৃদ্ধি করে । কাঁধ, বুক, শিরদাঁড়া, পায়ের গুলি এগুলি প্রসারিত করতে এবং এইসকল স্থানের ব্যাথা বেদনা কমাতে সাহায্য করে । এছাড়া এই আসন অভ্যাসের ফলে পাচনশক্তি এবং রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় ।

উত্থিত পদাসন (Utthito Padasana or Raised-Leg Pose)

বর্তমান সময়ে আমরা নিজেদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে একেবারেই সচেতন নই কিন্তু যে বিষয়টি নিয়ে আমরা খুব চিন্তিত থাকি সেটি হল আমাদের পেটের অতিরিক্ত চর্বি বা থলথলে ভাব ।  খুব সহজভাবে এবং প্রতিদিন খুব অল্প সময় নিয়ে যে আসন অভ্যাসের মাধ্যমে আমরা এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারি সেই আসনের নাম ‘উত্থিত পদাসন’ । অনেক ক্ষেত্রে এটি উত্থান পদাসন নামেও পরিচিত ।

উত্থিত পদাসন অভ্যাসের সময় সাধারনত দুটি পা উপরের দিকে তুলতে হয়, কিন্তু প্রাথমিকস্তরের অভ্যাসরকারীদের সুবিধার্থে এই আসনের অন্য প্রকরনটিও অভ্যাস করা যেতে পারে, যেখানে দুটি পায়ের বদলে একটি পা তুলে অভ্যাস করা যেতে পারে ।

উপকারীতা –  এই আসন পেটের চর্বি কমাতে এবং পেটের পেশী সুদৃঢ় করতে সাহায্য করে । এছাড়া কোমর, নিতম্ব এবং ঊরুর মাংসপেশী সগঠিত করতেও সাহায্য করে ।

এখানে পড়ুন : যোগ শুরু করার প্রাথমিক ধাপ

সতর্কতা

সাধারনত কোনো আসন অভ্যাসে কোনোরকম বাধানিষেধ থাকে না, কিন্তু কিছু বিশেষ শারীরিক সমস্যার ক্ষেত্রে সবরকম আসন অভ্যাস করা যায় না । অনেকক্ষেত্রে কোনোরকম আসনই অভ্যাস করা যায় না । সুতরাং আপনাকে নিজের সমস্যাগুলি সম্পর্কে জানতে হবে এবং তারপরেই যোগ অভ্যাস শুরু করতে পারবেন । প্রয়োজনে চিকিৎসকের বা কোনো অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের পরামর্শ নিয়ে তবেই যোগ অভ্যাস শুরু করবেন ।

যোগ অভ্যাসের ক্ষেত্রে সাধারনত কোনো সরঞ্জামের প্রয়োজন পড়ে না, তবে মেঝেতে পাতার জন্য কম্বল বা শতরঞ্চি ব্যাবহার করা যেতে পারে । তবে বর্তমানে যোগ ব্যায়ামের সুবিধার্থে যোগা ম্যাট (Yoga Mats) বাজারে কিনতে পাওয়া যায়, যা আপনার যোগ অভ্যাসকে আরও একটু বেশী সহজ এবং আরামদায়ক করে তুলবে ।

সারমর্ম

আপনি যদি চিন্তিত থাকেন কিভাবে যোগ অভ্যাস শুরু করবেন সেটা নিয়ে তাহলে অনুরোধ করব, বেশী চিন্তা-ভাবনা না করে শুরু করুন, নাহলে জানতে পারবেন না যোগ অভ্যাসের মাধ্যমে কতটা লাভ আপনি পেতে পারেন । একটা বিষয় মনে রাখবেন, অন্যকে দেখে নিজে হীনমন্যতায় ভুগবেন না । প্রথমেই কেউ একদম সঠিক পদ্ধতিতে কোনো আসন অভ্যাস করতে পারে না । সবটাই সময় এবং ধৈর্য নিয়ে অভ্যাসের সুফল ।

এই নিবন্ধটি পড়ার পরে যদি একজনও যোগ অভ্যাস শুরু করে, নিজেকে আরও সুস্থ করে তোলার দিকে একধাপ এগিয়ে আসেন, তাহলে মনে করব এই নিবন্ধটি সার্থক । আসন অভ্যাসের সময় কোনো সমস্যা হলে নীচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাতে পারেন । চেষ্টা করব উত্তর দিয়ে আপনাকে যথাসাধ্য সাহায্য করার ।

সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন এবং অন্যদের সুস্থ থাকতে উৎসাহিত করুন ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

Tell us how we can improve this post?

Leave a Reply

Scroll to Top