Pranayama

Pranayama কি এবং তার উপকারীতাগুলো কি কি

সারা জীবন একটা মানুষ যে কাজটা করে তা হল নিঃশ্বাস নেওয়া । মানব দেহের অন্যান্য প্রক্রিয়ার মত এটাও একটা জটিল প্রক্রিয়া যা নাক, মুখ, শ্বাসনালী ও ফুসফুসের মাধ্যমে হয় । কিন্তু দূষিত বাতাস, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস প্রনালী নষ্ট করে, যার ফলে আমরা বিভিন্ন ধরনের সমস্যা অনুভব করি । কিন্তু এর থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কি নেই? নিশ্চই আছে । এবং সেটা হল ‘প্রানায়ম (pranayama)’।

সাধারণত একজন মানুষ গড়ে প্রতি মিনিটে ১২ থেকে ২০ বার শ্বাস নেয় বা ছাড়ে । কিন্তু এর জন্য আমাদের আলাদা করে কোন পরিশ্রম করতে হয়না । স্বাভাবিকভাবে নিজস্ব ছন্দে এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে ।  কিন্তু প্রানায়ম করার ক্ষেত্রে শ্বাস প্রশ্বাসের কিছু নির্দিস্ট পদ্ধতি আছে যেগুলো অনুসরণ করতে হয় । এক্ষেত্রে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে নিশ্বাস নেওয়া, ছাড়া বা নিঃশ্বাস ধরে রাখা হল সেই নির্দিস্ট পদ্ধতি ।

প্রানায়মের (pranayama) সঙ্গে সাধারণত যোগব্যায়ামের বা meditation  এর যোগসুত্র আছে , কিন্তু যোগব্যায়াম বা meditation  এর মত এর নিজস্ব কিছু উপকারীতা আছে । উপকারীতা জানার আগে জেনে নিই প্রানায়ম আসলে কি এবং এটির প্রয়োজনীয়তা কি ।

প্রকৃত অর্থে প্রানায়ম (pranayama) বলতে আমরা কি বুঝি

‘প্রানায়ম (pranayama)’ একটি বহুপ্রাচীন এবং বহু চর্চিত নাম, যা মূলত নিয়ন্ত্রিত নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের অভ্যাস করা । প্রানায়ম দুটি সংস্কৃত শব্দের মেলন্ধন যেখানে ‘প্রানা (prana)’ অর্থাৎ জীবনী শক্তি এবং ‘য়ম (yama)’ অর্থাৎ নিয়ন্ত্রন । অতিপ্রাচীনকাল থেকেই মনে করা হয়, দীর্ঘকাল ধরে নিয়মিত প্রানায়ম অভ্যাসের ফলে শরীর ও মনের সংযোগের ফলে সমগ্র শরীরে অফুরন্ত শক্তির সঞ্চার হয় ।

আমরা বিভিন্ন পদ্ধতিতে প্রানায়ম (pranayama) অভ্যাস করতে পারি । যেমন –

  • নাড়ি শোধন
  • ভ্রামরী
  • ভসত্রিকা
  • অনুলোম-বিলোম

প্রতিটা পদ্ধতির নিজস্ব কিছু উপকারীতা এবং সীমাবদ্ধতা আছে । তাই ভালো করে নিজের সম্পর্কে এবং কোন প্রানায়ম কার জন্য প্রযোজ্য না জেনে প্রানায়ম (pranayama) অভ্যাস না করাই ভালো ।

প্রাথমিকভাবে প্রানায়ম (pranayama) সম্বন্ধে একটা ধারনা আমরা পেলাম । কিন্তু সময় খুব মূল্যবান, আর সেই মূল্যবান সময়ের কিছুটা আমরা প্রতিদিন দিতে চলেছি প্রানায়ম (pranayama) অভ্যাসের জন্য । তাহলে আমাদের জেনে নেওয়া দরকার প্রানায়মের উপকারীতা গুলো কি কি, যা আমাদের খানিকটা উৎসাহ যোগাবে প্রতিদিন অভ্যাস করার জন্য ।

উপকারীতা

আধুনিক বিজ্ঞানের মত অনুযায়ী, প্রানায়মের বেশ কিছু শারীরিক এবং মানসিক উপকারীতা আছে । কিন্তু উপকারীতাগুলো আলোচনা করার আগে একটা বিষয় আপনাদের মনে রাখতে হবে যে প্রানায়ম কিন্তু চিকিৎসা ব্যাবস্থার বিকল্প নয় । তাই কোন শারীরিক সমস্যার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া একান্ত বাঞ্ছনীয় ।

এবারে চলুন সংক্ষেপে জেনে নিই উপকারীতাগুলো কি কি ।

১) ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি –  নিয়মিত প্রানায়ম অভ্যাসের ফলে ফুসফুসের স্বাস্থ্য এবং ক্ষমতার উন্নতি হয় । প্রানায়ম অভ্যাসের মাধ্যমে আমরা নিয়ন্ত্রিতভাবে ফুসফুসের ব্যাবহার করে থাকি এবং এটা আমাদের ফুসফুসের জন্য ব্যায়াম হিসেবে কাজ করে । বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসকেরা স্টাডি করে দেখেছেন চিকিৎসার পাশাপাশি নিয়মিত প্রানায়ম অভ্যাসের ফলে COPD (Chronic Obstructive Pulmonary Disease) র মত অসুখের ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলে ।

Respiratory Function

২০১৯ সালের একটি স্টাডিতে দেখা গেছে, চিকিৎসার পাশাপাশি নিয়মিত প্রানায়ম অভ্যাসের ফলে বিভিন্ন ধরনের ফুসফুসজনিত অসুখ যেমন – asthma, bronchitis, pneumonia থেকে তুলনামূলক দ্রুত সেরে ওঠা যায় ।

২) Mindfulness  এর বৃদ্ধি – সাধারণত শ্বাসকার্য করার জন্য আমাদের নিজেদের মস্তিষ্কর প্রয়োজন পরে না । এটা একটা খুবই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া যা নিজের মত চলতে থাকে, তা সে আমাদের পরিস্থিতি যেমনই হোক । অর্থাৎ আমাদের ঘুমন্ত বা জাগ্রত, যেই অবস্থা হোক না কেন আমাদের শ্বাসকার্য তার স্বাভাবিক ছন্দে চলতে থাকে । কিন্তু প্রানায়মের সময় আমরা সচেতনভাবে শ্বাসকার্য করি । আমরা ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে অনুভব করতে পারি আমাদের নিঃশ্বাস প্রশ্বাস । একেই বলে mindfulness ।

২০১৭ সালে কিছু ছাত্রের উপর স্টাডি করে দেখা গেছে, যারা নিয়মিত প্রানায়ম অভ্যাস করে তাদের mindfulness বাকিদের তুলনায় বেশী । যা তাদের শিক্ষাক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলেছে । ঐ গবেষনায় দেখা গেছে প্রানায়ম অভ্যাসের ফলে শরীরে অক্সিজেনের পরিমান কার্বন-ডাই-অক্সাইডের তুলনায় বৃদ্ধি পায়, যা মস্তিষ্কের কোষগুলিকে উদ্দীপ্ত করে । এর ফলে আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধি পায়, মনোযোগ বাড়ে ।    

৩) মানসিক চাপ কমায় – ২০১৩ সালের একটি গবেষনায় দেখা গেছে প্রানায়ম অভ্যাস আমাদের স্নায়ুতন্ত্র কে ঠান্ডা রাখে, যার ফলে অভ্যাসকারী কিছুটা কম মানসিক চাপ অনুভব করে । মানসিক চাপ কমে যাওয়ার একটা গুরুত্বপুর্ন দিক হল আমরা মানসিক ভাবে অনেক বেশী নিরুদ্বিগ্ন থাকি । এর অর্থ টেনশন  বা চিন্তা না করা নয় । এর অর্থ হল যখন উদ্বেগ ঘটানোর মত কোন ব্যাপার আমাদের সাথে হয় আমরা অযথা চিন্তা করে নিজেদের বিব্রত করে ফেলি না । বরং তার সমাধান খোজার চেষ্টা করি ।

অতিরিক্ত চিন্তা বা মানসিক চাপের ফলে hypertension  বা উচ্চ রক্ত চাপের মত অসুখ হতে পারে । নিয়মিত প্রানায়ম অভ্যাস এই ধরনের অসুখ থেকে আমাদের দূরে রাখতে পারে, বা অন্তত রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করতে পারে ।

৪) অনিদ্রা দূর করে –  নিয়মিত প্রানায়ম অভ্যাসের ফলে মানসিক চাপ কমে যার ফলে ঘুমের মান উন্নত হয় । প্রতিদিন ৫ মিনিট ভ্রামরী প্রানায়ম অভ্যাসের ফলে নিঃশ্বাস প্রশ্বাস অনেক ধীর গতিতে হয় এবং হৃদস্পন্দনের গতিও কমে, যা আমাদের ঘুমের মান উন্নত করে ।

২০১৯ এর একটি গবেষনায় দেখা গেছে প্রানায়ম অভ্যাসকারীর দিবানিদ্রা বা নাক ডাকার প্রবনতা কমে যায় ।

৫) ধূমপানের চাহিদা কমায় – গবেষনার মাধ্যমে দেখা গেছে, যারা ধূমপান ছাড়তে ইচ্ছুক, নিয়মিত প্রানায়ম অভ্যাস কিছুটা হলেও তাদের ধূমপানের ইচ্ছা কমিয়ে দেয় । 

প্রানায়ম করার জন্য কোন অসুখের বা কারনের প্রয়োজন নেই । প্রতিদিন ১০মিনিট প্রানায়ম অভ্যাস আপনাকে আরো ভালো থাকতে সাহায্য করবে । কারন সর্বোপরি নিয়মিত প্রানায়ম অভ্যাস আমাদের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বাড়ায় ।

সাধারনভাবে প্রানায়ম করার কোন বিধিনিষেধ নেই । কিন্তু কিছু বিশেষ ক্ষেত্র যেমন অতিরিক্ত শ্বাসকস্ট বা অন্য কোন জটিল শারীরিক সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অভ্যাস করা উচিৎ । এছাড়া যারা আগে থেকেই asthma, bronchitis বা pneumonia র মত অসুখে ভুগছেন তারা অবশ্যই প্রানায়ম শুরু করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নেবেন ।

উপরের লেখাটির মাধ্যমে প্রানায়ম সম্বন্ধিত কিছু তথ্য তুলে ধরা হল । লেখাটি পড়ে আপনাদের কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন এবং আপনাদের কোন মতামত থাকলে তা জানাতেও ভুলবেন না । আপনার শরীরকে সুস্থ রাখার দায়িত্ব আপনার । তাই চেস্টা করুন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রানায়ম শুরু করে নিজেকে আরও ভালো রাখার লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যেতে । তবে একটা কথা অবশ্যই খেয়াল রাখবেন, যে প্রানায়ম বা অন্য কোন যোগব্যায়াম চিকিৎসার বিকল্প না । নিয়মিত অভ্যাসের ফলে আপনার অসুস্থ হওয়ার প্রবনতা কমে বা অসুস্থতা থাকলে, সেরে ওঠা ত্বরান্বিত করে ।

How useful was this post?

1
San

View Comments

Recent Posts

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ইতিহাস (History of International Women’s Day)

আজ ৮ই মার্চ । বিশ্ব নারী দিবস (International Women's Day) ।প্রতিবছর এই দিনটি উদযাপিত হয়…

2 days ago

প্রতিদিন হাঁটার উপকার (Benefits of Daily Walk)

প্রতিদিন নিয়ম করে হাঁটা সকলের জন্য উপকারী (benefits of walk) এটা আমরা সবাই জানি। নিয়মিত…

1 month ago

মেডিটেশনের খারাপ প্রভাব (Adverse Effect of Meditation)

আমরা সাধারনত একটা কথা বলে থাকি যে কোনোকিছুই অতিরিক্ত ভালো না । এই একই কথা…

5 months ago

প্রতিদিন যোগাভ্যাসের উপকারীতা (Benefits of Practicing Yoga for Everyday)

শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক উন্নতিসাধনের জন্য প্রাচীনকাল থেকেই একটি বহুল প্রচলিত অভ্যাসের নাম হল “যোগ”…

6 months ago

মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব (Importance of Mental and Physical Health)

‘স্বাস্থ্য’  কথাটা শুনলে আমরা সাধারনভাবে শুধু শরীরের কথাই ভেবেথাকি, ঠিক পদ্ধতিতে জীবনযাপনের ক্ষেত্রে শারীরিক স্বাস্থ্যের…

12 months ago

ডাল – প্রোটিনের উৎস (Lentils – Protein Source)

প্রাচীনকাল থেকে যেসকল কৃষিজ শষ্য মানবজাতির কাছে খাদ্যবস্তু হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে  তার মধ্যে ডাল (Lens…

2 years ago