যারা প্রাথমিক স্তরে যোগ শুরু করতে চলেছেন (Beginners to Start Yoga), তাদের যোগ সংক্রান্ত কিছু বিষয় যেমন কিভাবে শুরু করা উচিত, প্রাথমিকভাবে কি কি সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন সেগুলো জেনে শুরু করলে সুবিধা হয় । আজকের দিনে যোগ এর বিষয়ে অনেকেই আগ্রহী, কিন্তু সঠিক তথ্য না থাকার ফলে অনেকে যোগ অভ্যাস শুরু করতে পারেন না আবার অনেকে শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই তা বন্ধ করে দেয় ।
যোগ অভ্যাস শুরু করার আগে এর সম্পর্কে জেনে নেওয়া দরকার, অর্থাৎ যোগ কি এবং যোগ আমরা কেন করব ?
Table of Contents
এটি একটি অতি প্রাচীন ভারতীয় অভ্যাস যার মূল আধার আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার মিলন অর্থাৎ যোগের একটি মূল দিক হল এর আধ্যাত্মিকতা । যোগ অভ্যাসের উল্লেখ ঋকবেদ, উপনিষদের মত পুরাতাত্মিক গ্রন্থেও পাওয়া যায়, যেখান থেকে সহজেই এর প্রাচীনত্ব অনুমান করা যেতে পারে ।
মহর্ষি পতঞ্জলির ‘যোগসূত্র’ অনুসারে ‘যোগ’ শব্দটি আসলে একটি সংস্কৃত শব্দ যার অর্থ যুক্ত বা জোড়া, অর্থাৎ মানবাত্মার সঙ্গে পরমাত্মার মেলবন্ধন । যোগের অর্থ নিয়ে এবং এর প্রকারভেদ নিয়ে বিভিন্ন শাস্ত্র যেমন কথা উপনিষদ, ভগবৎ গীতা, লিঙ্গ পুরাণ, বিভিন্ন মত প্রদান করা হয়েছে, যা নিয়ে আলোচনা করে জটিলতা বৃদ্ধি করা অপ্রয়োজনীয় ।
ভিন্ন শাস্ত্র বা মত অনুসারে যোগের অর্থ যাই হয়ে থাকুক, সব মতের মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য একই – ‘মেলবন্ধন’ । আধুনিক গবেষনায় যোগ অভ্যাসের উপকারীতা হিসেবে আধ্যাত্মিক দিক ছাড়াও আরও বেশ কিছু দিক উন্মোচিত হয়েছে, যা প্রাচ্যের সীমা ছাড়িয়ে পাশ্চাত্যেও প্রভাব বিস্তার করেছে । এর ফলে প্রচুর মানুষ যোগ অভ্যাসের প্রতি উৎসাহিত হয়েছেন এবং তার সুফল উপভোগ করছেন ।
সুতরাং আমরা আপাতত যোগ অভ্যাসের আধ্যাত্মিক বিষয়গুলিকে সরিয়ে রেখে এর যেসকল মানসিক ও শারীরিক উপকারীতাগুলি পেতে পারি সেগুলি নিয়েই আলোচনা করব । যোগ অভ্যাস শুরু করার আগে প্রত্যকেরই কিছু প্রশ্ন থাকে, যেমন – কিভাবে শুরু করব, দিনের কোন সময় করব, কি কি সরঞ্জাম প্রয়োজন, কোন জায়গায় করা সুবিধাজনক এবং সর্বোপরি আমার জন্য সঠিক যোগ অভ্যাস কোনগুলি ।
যোগ অভ্যাস শুরু করার আগে অনেকেই বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হন । তাদের মনে প্রচুর প্রশ্ন ঘোরাফেরা করে, যেমন – যোগ অভ্যাস কখন করা উচিৎ, কি ধরনের পরিধান হওয়া দরকার, সরঞ্জাম কি কি প্রয়োজন হয় ইত্যাদি । যদি আপনার মনেও এই ধরনের প্রশ্ন আসে, তাহলে আশা করি এর উত্ত্র আপনি এখানে পেয়ে যাবেন ।
এই প্রশ্নের একটাই উত্তর হয় – “যোগ অভ্যাস সকলের জন্য” । অভিজ্ঞ যোগ প্রশিক্ষকদের মতানুসারে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের যোগ অভ্যাস করা উচিৎ নয় । এছাড়া ৫ বছর থেকে যেকোনো বয়স অবধি মহিলা-পুরুষ যোগ অভ্যাস করতে পারে এবং এক্ষেত্রে কিছু আসনের পার্থক্য ছাড়া অন্য কোনো বিধিনিষেধ নেই । সুতরাং নিশ্চিন্ত হয়ে যোগ অভ্যাস শুরু করুন ।
দিনের যেকোনো সময়ে যোগ অভ্যাস করা যায় যদি আপনি বেশ কিছুক্ষণ আগে (অন্তত ৩-৪ ঘন্টা) খাওয়ার খেয়ে থাকেন, কারন ভরা পেটে যোগ অভ্যাস করা উচিৎ না । সেই কারনে সাধারনভাবে বলা হয় সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে অথবা সন্ধ্যায় যোগ অভ্যাস করার জন্য । ঘুম থেকে ওঠার পরে যোগ অভ্যাসের ফলে সুস্থ থাকার পাশাপাশি সারাদিনের কাজের উদ্দীপনা পাওয়া যায় ।
যোগ অভ্যাসের জন্য কোনো বিশেষ ধরনের পোশাকের প্রয়োজন নেই, তবে আরামদায়ক এবং সমগ্র শরীরের সঞ্চালনের উপযোগী পোশাক পরা প্রয়োজন । খুব চাপা বা খুব ঢিলে পোশাক যোগ অভ্যাসের জন্য প্রতিবন্ধকতার কারন হতে পারে এমন পোশাক পরিহার্য । এছাড়াও খুব বেশী অলঙ্কার যোগ অভ্যাসের ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, তাই সেদিকেও লক্ষ্য রাখা দরকার ।
যোগ অভ্যাসের জন্য তেমন কোন বিশেষ সরঞ্জামের প্রয়োজন নেই, কিন্তু যোগ অভ্যাসের অধিকাংশ আসন বসে অথবা শুয়ে অভ্যাস করতে হয় । সেক্ষেত্রে মেঝেতে বিছানোর জন্য কিছু ব্যাবহার করলে আসন করার সময় সুবিধা হয় । কম্বল বা শতরঞ্চি বাড়িতে থাকলে তা ব্যাবহার করা যেতে পারে । যোগ অভ্যাসের জনপ্রিয়তার কারনে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান বিশেষ ধরনের ম্যাট তৈরী করে, যেগুলি বাজারে যোগা ম্যাট নামে পরিচিত । যদি আপনি যোগ অভ্যাসের ব্যাপারে একান্ত ইচ্ছুক তাহলে অল্প মূল্য ব্যয় করে এই ধরনের একটি ম্যাট কিনতে পারেন ।
আমরা সাধারনত কোনো যোগ প্রশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে অথবা বাড়িতেই ভিডিও বা টিউটোরিয়ালের সাহায্যে যোগ অভ্যাস শুরু করি । অনেকের ক্ষেত্রেই খুব সাধারন সমস্যা যেটা দেখা যায় তা হল অন্যের সঙ্গে নিজের তুলনা । ‘অমুক ব্যক্তি এটা ঠিক ভাবে করতে পারছে, আমি পারছি না’ এই ধরনের ভাবনা চিন্তা করার প্রয়োজন নেই ।
নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত রাখতে হবে যাতে কোনো আসন আপনি যতটা স্বচ্ছন্দ ভাবে করতে পারছেন, ঠিক ততটাই করবেন । নিজের সাধ্যের বাইরে বলপূর্বক সঠিকভাবে কোনো আসন করার চেষ্টা করে অজান্তে নিজের বিপদ ডেকে আনতে পারেন ।
এখন প্রশ্ন হল আমরা যোগ অভ্যাস কেন করব ? গবেষনায় পাওয়া গেছে সঠিকভাবে নিয়মিত যোগ অভ্যাসের ফলে শারীরিক এবং গঠনগত উন্নতির পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যেরও প্রভূত উন্নতি ঘটে, যার প্রভাব আমাদের দৈনন্দিন জীবনের উপরেও দেখা যায় । যোগ অভ্যাসের ফলে যেমন ঘুমের মান উন্নত হয়, আবার স্মরন করার ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায় ।
যোগ অভ্যাসের শুরুতেই কোনো আসন নির্ভুলভাবে করা প্রায় সকলের পক্ষেই অসম্ভব, সুতরাং যোগ অভ্যাসের সম্পুর্ন উপকারীতা উপভোগের জন্য নির্ভুলভাবে প্রতিটা আসন করা প্রয়োজন । এবং এর জন্য প্রয়োজন অনুশীলনকারীর ধৈর্য, সহনশীলতা এবং একই কাজ বারবার করার মানসিকতা রাখা ।
কোনো বিশেষ অসুস্থতা যেমন হৃদযন্ত্রের সমস্যা, ফুসফুস জনিত সমস্যা বা সাম্প্রতিককালের কোনো আঘাতজনিত সমস্যা থাকলে যোগ অভ্যাস শুরু করার আগে চিকিৎসকের বা অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের পরামর্শ নেওয়া দরকার ।
যোগ অভ্যাস হল নিয়িন্ত্রিত শ্বাস প্রশ্বাস (প্রানায়ম), কতগুলি আসন বা মুদ্রা এবং ধ্যান (Meditation) এর সমন্বয়, তাই যোগ অভ্যাসের ফলে একাধারে যেমন শরীরচর্চা হয় তেমনই মানসিক বিকাশে সাহায্য করে । যখন কেউ বাড়িতে যোগ অভ্যাসের ক্ষেত্রে ইচ্ছুক কিন্তু কিভাবে শুরু করবে বুঝতে পারছে না, আশা করি তাদের এই নিবন্ধটি কাজে লাগবে ।
নিয়মিত যোগ অভ্যাস করে নিজেকে সুস্থ রাখুন, কারন আপনি যখন মানসিক ও শারীরিক দিক থেকে সুস্থ থাকবেন, তার সুফল আপনি আপনার কর্মক্ষেত্রে, পারিবারিক এবং সামাজিক জীবন সর্বত্র দেখতে পাবেন । যোগ অভ্যাস নিয়ে কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানান ।
সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন এবং অন্যদের সুস্থ থাকতে উৎসাহিত করুন ।
আমরা সাধারনত একটা কথা বলে থাকি যে কোনোকিছুই অতিরিক্ত ভালো না । এই একই কথা…
শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক উন্নতিসাধনের জন্য প্রাচীনকাল থেকেই একটি বহুল প্রচলিত অভ্যাসের নাম হল “যোগ”…
‘স্বাস্থ্য’ কথাটা শুনলে আমরা সাধারনভাবে শুধু শরীরের কথাই ভেবেথাকি, ঠিক পদ্ধতিতে জীবনযাপনের ক্ষেত্রে শারীরিক স্বাস্থ্যের…
প্রাচীনকাল থেকে যেসকল কৃষিজ শষ্য মানবজাতির কাছে খাদ্যবস্তু হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে তার মধ্যে ডাল (Lens…
সূচনা (Introduction) প্রোটিন (Protein) একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাক্রোনিইট্রিয়েন্ট (Macronutrient) যার উৎস (protein sources) আমাদের প্রতিদিনের গ্রহন…
যোগাভ্যাসের বিভিন্ন ধরনের আসন, যা আমাদের দেহের নীচের অংশ যেমন পা, কোমর পেট এবং পিঠ…