dietary-fats

ফ্যাটযুক্ত খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা (Importance of Dietary Fats)

ফ্যাটযুক্ত খাওয়ার (Dietary Fats) নিয়ে বিভিন্ন রকম সময়ে বিভিন্ন রকম মত পাওয়া গেছে, এবং অনেকের মতে ফ্যাটযুক্ত খাওয়ার স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক । এখানে একটা বিষয় বুঝতে হবে যে, খাদ্যের মাধ্যমে প্রাপ্ত ৩টি macronutrients এর মধ্যে একটি হল ফ্যাট, অর্থাৎ খাদ্যোপাদান অনুসারে ফ্যাটের প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব যথেষ্ট ।

সুস্থ থাকার জন্য প্রোটিন এবং কার্বহাইড্রেটের পাশাপাশি ফ্যাটজাতীয় খাদ্যেরও যথেষ্ট প্রয়োজন আছে । সমস্যার বিষয় হল, কোন ধরনের ফ্যাট আমাদের জন্য প্রয়োজন বা উপকারী সেটা না জেনেই অনেক সময় আমরা সেটা খেয়ে নিই । দীর্ঘদিন ক্ষতিকর ফ্যাটযুক্ত খাওয়ার গ্রহনের ফলে শুধু স্থুলতার শিকার হই না, আরও অন্যান্য অনেক সমস্যা আমরা অজান্তেই নিজেদের জন্য তৈরী করে ফেলি ।

আমাদের শরীরের জন্য ফ্যাটজাতীয় খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা জানার আগে ফ্যাট কি এবং কোন ধরনের ফ্যাট আমাদের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিৎ বা কোনটা নয় সেগুলো জানা দরকার ।

ফ্যাট কি (What are Fats)

একধরনের nutrient যা আমরা খাদ্যের মাধ্যমে পেয়ে থাকি । আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য কিছু পরিমান ফ্যাট প্রয়োজন কিন্তু অতিরিক্ত পরিমানে ফ্যাটযুক্ত খাওয়ার (dietary fats) স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে উঠতে পারে ।

মানবদেহে ফ্যাট নিজে থেকে তৈরী হয় না, তাই খাদ্যের মাধ্যমেই প্রয়োজনীয় ফ্যাটের চাহিদা মেটাতে হয় ।   আমাদের শরীরে যে মেদ বা চর্বি থাকে যা আমরা সাধারনত body fat হিসেবে জানি সেটা আসলে অতিরিক্ত শক্তি বা ক্যালরি জমা হয়ে তৈরী হয় । যা প্রয়োজনে শক্তির যোগান দেয়, বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে রক্ষা করতে এবং দেহের তাপমাত্রার সাম্যতা বজায় রাখতে সাহায্য করে ।

ফ্যাটের প্রকারভেদ (Types of Fats)

ফ্যাটজাতীয় খাওয়ার (dietary fats) বা ফ্যাট সাধারনত দুই ধরনের – সম্পৃক্ত (Saturated)  এবং অসম্পৃক্ত (Unsaturated) ফ্যাট । ফ্যাটি অ্যাসিডের (Fatty Acid) পরিমানের উপর নির্ভর করে সাধারনত এই দুই ভাগ করা হয় । এছাড়াও আর একধরনের ফ্যাট হল ট্রান্স ফ্যাট (Trans Fat)  যা খুব অল্প সংখ্যক খাদ্যে অল্প পরিমানে পাওয়া যায় ।

অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট

সম্পৃক্ত (Saturated) ফ্যাট

এই ধরনের ফ্যাট সাধারনত খারাপ কোলেস্টেরল স্তর (LDL or Low Density Lipoproteins) বাড়িয়ে দেয় যা হৃদযন্ত্রের সমস্যার কারন হয়ে দাঁড়ায় । তাই নিজের খাদ্যতালিকায় সম্পৃক্ত বা  saturated ফ্যাটজাতীয় খাদ্যের পরিমান কমানো একান্ত প্রয়োজন ।

প্রাণীজ ফ্যাট, সম্পৃক্ত বা saturated ফ্যাটের প্রধান উৎস । যেসব খাওয়ারে এইধরনের ফ্যাট পাওয়া যায় সেগুলি হল –

১) গরু, শুয়োর, ছাগল এবং ভেড়ার মাংস ।

২) পোলট্রি এবং তার ছাল

৩) সম্পুর্ণ ফ্যাটযুক্ত দুধ এবং দুগ্ধজাত পদার্থ ।

৪) ঘরের তাপমাত্রায় জমে যেতে পারে এমন তেল যেমন নারকেল তেল, পাম তেল ইত্যাদি ।

RELATED : IMPORTANCE OF PROTEINS

ট্রান্স ফ্যাট (Trans Fat)

এই ধরনের ফ্যাট সাধারনত খুব অল্প সংখ্যক খাদ্যে অল্প পরিমানে পাওয়া যায় । তবে হাইড্রোজেনেশন (Hydrogenetion) পদ্ধতিতে বিভিন্ন উদ্ভিজ তেলের প্রক্রিয়াকরনের ফলে ট্রান্স ফ্যাট তৈরী হয় । এই ধরনের ফ্যাট অনেকসময় বাজারজাত খাদ্যবস্তু অনেকদিন ভালো রাখার জন্য ব্যাবহার করা হয় ।

ট্রান্স ফ্যাট খারাপ (LDL) কোলেস্টেরলের স্তর বাড়ায় আবার অন্যদিকে ভালো (HDL) কোলেস্টেরল স্তর কমিয়ে হৃদযন্ত্রের সমস্যার প্রবনতা বাড়িয়ে দেয় ।

হাইড্রোজেনেশন পদ্ধতি বা আংশিক হাইড্রোজেনেশন পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যবস্তু ট্রান্স-ফ্যাটি অ্যাসিড বা ট্রান্স ফ্যাটের উৎস । যেমন – মার্জারিন, বাজারজাত কুকি, ফাস্ট ফুড ইত্যাদি ।

স্বাস্থ্যকর ফ্যাট

অসম্পৃক্ত  (Unsaturated) ফ্যাট

এই ধরনের ফ্যাট খারাপ (LDL) কোলেস্টেরল স্তর কমিয়ে হৃদযন্ত্রের সমস্যার প্রবনতা কমায় । যেসব উদ্ভিজ্জ তেল ঘরের তাপমাত্রায় তরল আকারে থাকে সেগুলি অসম্পৃক্ত ফ্যাটের ভালো উৎস । আমাদের উচিৎ খাদ্যতালিকা থেকে সম্পৃক্ত ফ্যাটের পরিমান কমিয়ে অসম্পৃক্ত ফ্যাটের পরিমান বৃদ্ধি করা যাতে আমাদের হৃদযন্ত্র ভালো থাকে । এই ধরনের ফ্যাট সাধারনত দুই প্রকারের –

১) মনোস্যাচুরেটেড (Monounsaturated) ফ্যাট – এই ধরনের ফ্যাট সাধারনত বাদাম, অলিভ তেল, বাদাম তেল, পিনাট বাটার এতে পাওয়া যায় ।

২) পলিস্যাচুরেটেড (Polyunsaturated) ফ্যাট – সাধারনত সুর্যমুখী তেল, তিল তেল, সুর্যমুখী দানা, কুমড়োর দানা, সয়াবিন এতে পাওয়া যায় ।

ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড (Omega 3 Fatty Acid)

এটি একধরনের অসম্পৃক্ত ফ্যাট যার কিছু প্রাণীজ এবং কিছু উদ্ভিজ্জ উৎসের মাধ্যমে পাওয়া যায়, যা হৃদযন্ত্রের বিকাশে সাহায্য করে । ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের কিছু উৎস হল –

১) মাছ – স্যালমন, ট্রাউট, সার্ডিন

২) ফ্লেক্স সিড, চিয়া সিড, আখরোট ইত্যাদি ।

খাদ্যের মাধ্যমে আমরা কি কি ধরনের ফ্যাট পেতে পারি সেগুলো জানলাম । এবারে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আমরা কোন ধরনের ফ্যাটযুক্ত খাওয়ার নিজেদের জন্য বেছে নেব ।

ফ্যাটযুক্ত খাদ্যের (Dietary Fats) প্রয়োজনীয়তা

ফ্যাটযুক্ত খাওয়ার শুধুমাত্র আমাদের কোলেস্টেরল স্তরের সাম্যতা বজায় রাখে তা নয় । বিভিন্ন কাজকর্মের জন্য যে শারীরিক শক্তির প্রয়োজন হয়, ফ্যাট থেকে আমরা সেই শক্তি পেয়ে থাকি । সাধারনত ১গ্রাম ফ্যাট থেকে প্রায় ৯ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়, যা কার্বহাইড্রেট এবং প্রোটিনের দ্বিগুনের বেশী । এছাড়া বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ রক্ষা করা, কোষ গঠনে সাহায্য করা, ফ্যাট দ্রবনীয় ভিটামিন (ভিটামিন A, D, E এবং K) শোষনে, দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন এগুলো ফ্যাটের সাহায্যে হয় ।

সারমর্ম

সুস্থ থাকার জন্য পরিমিত পরিমানে স্বাস্থ্যকর অর্থাৎ অসম্পৃক্ত ফ্যাটজাতীয় খাওয়ার খাওয়া উচিৎ । যেহেতু ফ্যাট একটি উচ্চমানের ক্যালরি প্রদানকারী খাদ্যোপাদান, সেক্ষেত্রে পরিমানের ব্যাপারে সতর্ক থাকা প্রয়োজন । অতিরিক্ত পরিমানে ফ্যাটযুক্ত খাওয়ার খেলে ওজন বৃদ্ধি, স্থুলতা, কোলেস্টেরলের সমস্যা দেখা দিতে পারে ।

সবসময় মনে রাখবেন আহার তখনই সুষম হয়, যখন তাতে সঠিক পরিমানে nutrients অর্থাৎ macronutrients (ফ্যাট, প্রোটিন এবং কার্বহাইড্রেট) এবং micronutrients (ভিটামিন এবং মিনারেল) থাকে । তাই সঠিক খাদ্য সঠিক পরিমানে খাওয়া সুস্থ থাকার জন্য একান্ত প্রয়োজন ।

আশা করি লেখাটি পড়ার পরে ফ্যাট নিয়ে অযথা ভয় থাকবে না এবং সঠিক ফ্যাটযুক্ত খাওয়ার বেছে নিতেও অসুবিধা হবে না । তবে কোনোকিছুই অতিরিক্ত আমাদের শরীরের জন্য ভালো না, তা যতই উপকারী হোক । আপনাদের মতামত বা কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানান । ইমেল বা মেসেজের মাধ্যমেও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন । সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন এবং অন্যদের সুস্থ থাকতে উৎসাহিত করুন ।    

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

Tell us how we can improve this post?

Leave a Reply

Scroll to Top