‘পতঞ্জলী যোগসূত্র’ অনুযায়ী সাধারনত যে ৮টি প্রানায়ম নিয়মিত অনুশীলন করা হয়, তার মধ্যে উদগীথ প্রানায়াম (Udgeeth Pranayama) সবথেকে সহজ পদ্ধতির প্রানায়ম বা শ্বাসকার্য । এই প্রানায়ম অনুশীলন করার ক্ষেত্রে শ্বাস ছাড়ার সময় ‘অউম’ বা ‘ওম’ উচ্চারন করা হয় । এই কারনে এটি ‘ওমমন্ত্র জপ শ্বাসকার্য’ নামেও পরিচিত ।
এই প্রানায়ম অভ্যাসের সময় একটা নির্দিস্ট ছন্দে ‘অউম’ বা ‘ওম’ মন্ত্রটি শ্বাস ছাড়ার সময় জপ করা হয় । উদগীথ প্রানায়ম অনুশীলনের সময় শ্বাস প্রশ্বাস খুব ধীর গতিতে এবং সূক্ষ্ম ভাবে করতে হয় যাতে শ্বাস প্রশ্বাসের কোনো শব্দ কান অবধি না পৌছয় ।
এই প্রানায়ম অভ্যাসের ফলে মানসিক উৎপীড়ন, উৎকণ্ঠা, উত্তেজনা, বিষন্নতা দূর হয় এবং অপরিসীম মানসিক শান্তি পাওয়া যায় । এছাড়া প্রশ্বাসের সময় ‘অউম’ মন্ত্র জপ করার ফলে এই প্রানায়ম অনুশীলনকারী মেডিটেশন বা ধ্যান পর্যায়ে পৌছতে সক্ষম হয় ।
Table of Contents
প্রানায়ম অভ্যাসের পদ্ধতি জানার আগে প্রানায়ম অভ্যাস সম্বন্ধে কিছু ব্যাপার জেনে রাখা ভালো, যেমন প্রানায়ম অভ্যাসের আদর্শ সময় হল সকাল অথবা সন্ধ্যা । মনে করা হয় ভোরবেলা এই প্রানায়ম অভ্যাসের জন্য সবথেকে উপযুক্ত সময়, তবে দিনের যেকোনো সময় অভ্যাস করা যেতে পারে । প্রানায়ম অভ্যাস কখনোই ভরা পেটে করা উচিৎ নয় । খালিপেটে বা খাওয়ার অন্তত ৩-৪ ঘন্টা পরে করা যেতে পারে ।
যেকোনো প্রানায়ম অভ্যাসের ক্ষেত্রে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং খোলামেলা পরিবেশ প্রয়োজন । উদগীথ প্রানায়ম অভ্যাসের ক্ষেত্রে শান্ত পরিবেশ হলে মন্ত্র জপ করার ক্ষেত্রে সুবিধা হবে । সর্বোপরি নিজের স্বাচ্ছন্দ্য বোধ এই প্রানায়ম অভ্যাসের জন্য প্রয়োজনীয়, যাতে আরামদায়কভাবে কিছুটা সময় অভ্যাস করা যেতে পারে ।
১) পদ্মাসনে, সুখাসনে বা সিদ্ধাসনে বসে এই প্রানায়ম অভ্যাস করা যেতে পারে, তবে বসার সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে মেরুদন্ড, ঘাড় এবং মাথা সোজা অর্থাৎ সরলরেখায় থাকে । এর ফলে শ্বাস প্রশ্বাস অনেক সহজ হয় ।
২) দুই হাতের তালু উর্দ্ধমুখী করে দুই হাঁটুর উপরে রেখে হাতের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ এবং তর্জনী একস্থানে অর্থাৎ জ্ঞানমুদ্রায় রেখে চোখ বন্ধ করে বসতে হবে । চোখ বন্ধ করে মনোযোগ নিজের শ্বাস প্রশ্বাসের উপর নিবদ্ধ করার চেষ্টা করতে হবে ।
৩) এইভাবে আরামদায়কভাবে বসে নাক দিয়ে গভীরভাবে এবং আস্তে আস্তে শ্বাস টানতে হবে যাতে সম্পূর্ণ ফুসফুস প্রসারিত হয় ।
৪) এবারে আস্তে আস্তে নাক দিয়ে শ্বাস ছাড়ার সময় মুখ দিয়ে ‘অউম’ বা ‘ওম’ মন্ত্র জপ করতে হবে । এক্ষেত্রে ‘ওম’ জপ করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে ‘ও’ উচ্চারনের সময় ‘ম’ উচ্চারনের থেকে দীর্ঘ হয় অর্থাৎ জপ করার সময় খানিকটা ‘ওওওম’ উচ্চারনের মত শোনাবে ।
৫) প্রাথমিকভাবে শ্বাস টানা বা ছাড়ার সময়ের উপর জোর দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই । নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী অভ্যাস করতে হবে, তবে অভ্যস্ত হয়ে গেলে সময়সীমা বাড়াতে হবে ।
৬) উপরের পদ্ধতিতে প্রাথমিকভাবে ৫ থেকে ১১ বার অভ্যাস করা যেতে পারে, তবে অভ্যস্ত হয়ে উঠলে সময় বাড়িয়ে ১৫ মিনিট অবধি করা যেতে পারে ।
প্রানায়ম অভ্যাসের সবথেকে সাধারন লাভ হল রক্তে অক্সিজেনের প্রাচুর্য্য, যার ফলে শরীরের প্রতিটি অংশে অক্সিজেনের পরিমান বৃদ্ধি পায় । শরীরে অক্সিজেনের পরিমান বৃদ্ধির ফলে অনেকধরনের সমস্যার নিজে থেকেই সামাধান হয়ে যায় । এছাড়াও উদগীথ প্রানায়ম অভ্যাস –
এছাড়াও ‘ওম’ মন্ত্র জপ একধরনের মেডিটেটিভ শ্বাসকার্য হিসেবেও কাজ করে ।
উদগীথ প্রানায়ম (Udgeeth Pranayama) সবথেকে সহজ এবং কার্যকরী শ্বাস-প্রশ্বাস প্রণালী যা শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই কোনোরকম সমস্যা ছাড়াই অভ্যাস করতে পারে এবং এর উপকারীতাগুলি উপভোগ করতে পারে । তাই আপনিও নির্দিধায় এই প্রানায়ম অভ্যাস শুরু করতে পারেন । কোনো অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের পরামর্শ নিয়ে অভ্যাস করতে পারেন, কিন্তু যদি আপনার কাছে সেরকম কোনো উপায় না থাকে, আপনি আমাদের দেওয়া পদ্ধতি অনুসরণ করেও এই প্রানায়ম অভ্যাস করতে পারেন ।
এই প্রানায়ম সংক্রান্ত কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে নীচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাতে পারেন । ইমেল বা মেসেজের মাধ্যমেও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন ।
সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন এবং অন্যদের সুস্থ থাকতে উৎসাহিত করুন ।
আমরা সাধারনত একটা কথা বলে থাকি যে কোনোকিছুই অতিরিক্ত ভালো না । এই একই কথা…
শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক উন্নতিসাধনের জন্য প্রাচীনকাল থেকেই একটি বহুল প্রচলিত অভ্যাসের নাম হল “যোগ”…
‘স্বাস্থ্য’ কথাটা শুনলে আমরা সাধারনভাবে শুধু শরীরের কথাই ভেবেথাকি, ঠিক পদ্ধতিতে জীবনযাপনের ক্ষেত্রে শারীরিক স্বাস্থ্যের…
প্রাচীনকাল থেকে যেসকল কৃষিজ শষ্য মানবজাতির কাছে খাদ্যবস্তু হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে তার মধ্যে ডাল (Lens…
সূচনা (Introduction) প্রোটিন (Protein) একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাক্রোনিইট্রিয়েন্ট (Macronutrient) যার উৎস (protein sources) আমাদের প্রতিদিনের গ্রহন…
যোগাভ্যাসের বিভিন্ন ধরনের আসন, যা আমাদের দেহের নীচের অংশ যেমন পা, কোমর পেট এবং পিঠ…