যেকোনো ধরনের শরীরচর্চার আগে সঠিক ভাবে ওয়ার্ম আপ বা গা-গরম করে নেওয়া প্রচন্ড দরকারী (importance of warming up) একটা পদক্ষেপ, যা অনেকেই সময়ের অভাবে বা অজান্তে বাদ দিয়ে থাকেন । ওয়ার্ম আপ সম্বন্ধে বিস্তারে যাওয়ার আগে একটা কথা বলে নেওয়া ভালো । ওয়ার্ম আপ করার ফলে সেরকমভাবে শক্তি-ক্ষরণ বা ক্যালোরি বার্ন হয় না বা মাংসপেশির গঠন বৃদ্ধি হয় না ।
ওয়ার্ম আপ করার ফলে মাংসপেশি এবং শরীরের আভ্যন্তরীন তাপমাত্রা বৃদ্ধি হয় যা শরীরচর্চা করার সময়ে কোনোরকম আঘাত প্রতিহত করে অথবা আঘাত লাগার সম্ভাবনা কমে যায় । এছাড়াও মাংসপেশির তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে পেশি সংকোচন-প্রসারন অনেক সহজ হয় এবং যেকোনোধরনের শরীরচর্চা সফলভাবে করতে সুবিধা হয় । সঠিকপদ্ধতিতে ওয়ার্ম-আপ করার ফলে মানসিকভাবে প্রস্তুতি সম্পন্ন হয় শরীরচর্চা করার জন্য ।
সাধারনত যেসকল কারনে শরীরচর্চার আগে ওয়ার্ম-আপ করা প্রয়োজন (importance of warming up) সেগুলি হল –
Table of Contents
যেকোনো ধরনের শরীরচর্চা (খেলাধুলা, যোগাসন, বডিবিল্ডিং বা অ্যারোবিক) করার আগে সঠিক পদ্ধতিতে এবং যথাযথ পরিমানে ওয়ার্ম আপ করার ফলে কিছু শারীরিক পরিবর্তন ঘটে যার ফলে সফলভাবে শরিরচর্চা করা সম্ভব হয় ।
অন্তত ১০ মিনিট সহজ পদ্ধতিতে ও ইয়ার্ম-আপ করার ফলে মাংসপেশিতে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায় এবং কৈশীক-নাড়ী উন্মুক্ত হয় । এতে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন মাংসপেশিতে পৌছয় এবং পেশি তুলনামূলক অনেক বেশী কর্মক্ষম হয় ।
ঠিক ভাবে ওয়ার্ম-আপ করার ফলে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা পেশির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ । পেশির তাপমাত্রা যত বৃদ্ধি পায়, তত বেশী অক্সিজেন পেশিতে সরবরাহ হয় । এর ফলে মাংসপেশি সংকোচন এবং প্রসারন খুব সহজভাবে হয় এবং তার ফলে কোনো কঠিন ধরনের ব্যায়াম বা যোগাসন সহজভাবে করা সম্ভব হয় ।
শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে পেশির স্থিতিস্থাপকতা বা নমনীয়তা বাড়ে এবং পেশিতে রক্তপ্রবাহ বাড়ে, ফলে শরীরচর্চার সময় পেশিতে আঘাত লাগার সম্ভাবনা কমে যায় । এছাড়া সমগ্র শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে গাঁটের কমনীয়তা এবং গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়, যা ব্যায়াম বা যোগাসন করার ক্ষেত্রে সাহায্য করে ।
ওয়ার্ম-আপ করার সময় শুধু আমাদের শরীর পরবর্তী পর্যায় অর্থাৎ শরীরচর্চার জন্য প্রস্তুত হয় না, আমাদের মস্তিষ্ক এবং শরীরের মধ্যে সাম্যতা তৈরী হয় । এর ফলে কোনো ব্যায়াম বা আসন করার সময় সেটার উপরে মনোযোগ দেওয়া সহজ হয় । যারা বডিবিল্ডিং এর সঙ্গে যুক্ত, তারাও কোনো নির্দিস্ট পেশির উপর নিজের মনোযোগ নিবদ্ধ করার ক্ষেত্রে সুফল পেয়ে থাকেন ।
ওয়ার্ম-আপ করার ফলে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে হৃদস্পন্দনের হার বৃদ্ধি পায় এবং হৃদযন্ত্রে অক্সিজেনের পরিমান বৃদ্ধি পায় । এর ফলে জটিল আসন বা শ্রমসাধ্য কোনো ব্যায়াম করার সময়ে হৃদযন্ত্রের উপর আচমকা কোনো চাপ পড়ে না, কারন ওয়ার্ম-আপের মাধ্যমে হৃদযন্ত্র প্রস্তুত হওয়ার সময় পায় । এছাড়াও সোজাসুজি আসন বা ব্যায়াম শুরু করার আগে ওয়ার্ম-আপ করে নিলে শ্বাস প্রশ্বাসের গতি ভারসাম্য বজায় রেখে বৃদ্ধি পায় । এর ফলে শরীরচর্চার সময়ে প্রয়োজনীয় বাড়তি অক্সিজেনের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয় ।
এছাড়াও যারা বডিবিল্ডিং এর সঙ্গে যুক্ত, জিমে তারা হেভি-ওয়েট মেশিন ব্যাবহার করে । ওয়ার্ম-আপ করার ফলে মস্তিষ্ক এবং শরীরের মধ্যে ভারসাম্য তৈরী হয়, ফলে ব্যায়াম করার সময়ে কোনো নির্দিস্ট পেশির প্রতি মনোযোগ দিতে সুবিধা হয় । এছাড়াও পেশিতে চোট পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় এবং সফলভাবে শরীরচর্চা করতে পারে ।
ওয়ার্ম-আপ করার জন্য অন্তত ১০ মিনিট সময় বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে সময়ের অভাবে যা সম্ভব হয়ে ওঠে না । যার ফলে চোটের সম্ভাবনা বেড়ে যায় যা সহজেই এড়ানো যেতে পারে ।
সাধারনত ওয়ার্ম-আপের ফলে হৃদস্পন্দনের গতি বৃদ্ধি হয়, গাঁটের গতিশীলতা বাড়ে এবং পেশির সচলতা বৃদ্ধি পায় । উদাহরন স্বরুপ যারা কোনো খেলার সঙ্গে যুক্ত তারা সাধারনত খেলা শুরুর আগে সামান্য জগিং করে নিয়ে নিজের মধ্যে সচলতা বৃদ্ধি করে, যা পরে মূল খেলার সময়ে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে ।
গতিশীলতা বজায় রেখে কিছু ব্যায়াম ও ইয়ার্ম-আপ হিসেবে করা যেতে পারে, যেমন – লাফানো (lunges), স্কোয়াট (squats), সাইক্লিং (cycling) বা জগিং (jogging) । এছাড়াও যারা বডিবিল্ডিং এর সঙ্গে যুক্ত তারা নির্দিস্ট কোনো পেশির সচলতার জন্য সেই পেশি ভিত্তিক কোনো ব্যায়াম ওয়ার্ম-আপ হিসেবে অভ্যাস করতে পারেন ।
খেলাধুলো, বডিবিল্ডিং বা যোগাসন যেকোনো অনুশীলনের পূর্বেই ওয়ার্ম-আপ করে নেওয়া বাধ্যতামূলক (importance of warming up), কারন এর ফলে পেশির নমনীয়তা এবং গতিশীলতা বাড়ে । ওয়ার্ম-আপ করার জন্য কোনো নির্দিস্ট ব্যায়াম নেই । প্রশিক্ষকেরা নিজেদের অর্জিত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী প্রশিক্ষার্থীদের জন্য ওয়ার্ম-আপ ঠিক করে থাকেন । যারা বাড়িতে থেকে কোনোধরনের শরীরচর্চা করতে চাইছেন বা করছেন, কিন্তু ওয়ার্ম-আপ সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না, আশা করি তাদের এই নিবন্ধটি সাহায্য করবে ।
এই নিবন্ধ সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে নীচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাতে পারেন । ইমেল বা মেসেজের মাধ্যমেও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন ।
সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন এবং অন্যদের সুস্থ থাকতে উৎসাহিত করুন ।
আমরা সাধারনত একটা কথা বলে থাকি যে কোনোকিছুই অতিরিক্ত ভালো না । এই একই কথা…
শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক উন্নতিসাধনের জন্য প্রাচীনকাল থেকেই একটি বহুল প্রচলিত অভ্যাসের নাম হল “যোগ”…
‘স্বাস্থ্য’ কথাটা শুনলে আমরা সাধারনভাবে শুধু শরীরের কথাই ভেবেথাকি, ঠিক পদ্ধতিতে জীবনযাপনের ক্ষেত্রে শারীরিক স্বাস্থ্যের…
প্রাচীনকাল থেকে যেসকল কৃষিজ শষ্য মানবজাতির কাছে খাদ্যবস্তু হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে তার মধ্যে ডাল (Lens…
সূচনা (Introduction) প্রোটিন (Protein) একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাক্রোনিইট্রিয়েন্ট (Macronutrient) যার উৎস (protein sources) আমাদের প্রতিদিনের গ্রহন…
যোগাভ্যাসের বিভিন্ন ধরনের আসন, যা আমাদের দেহের নীচের অংশ যেমন পা, কোমর পেট এবং পিঠ…