যথাযথ পরিমানে ঘুম আমাদের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান (importance of sleep for good health) । সুস্থ থাকার জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং শরীরচর্চার পাশাপাশি উপযুক্ত মানের ঘুম একান্ত প্রয়োজন । সঠিক মানের ঘুমের ফলে আমরা অনেক বেশী তরতাজা অনুভব করি যা আমাদের অনেক বেশী কর্মক্ষম করে তোলে । দুর্ভাগ্যবশত আমাদের মধ্যে অনেকেরই সঠিক পরিমান ঘুম হয় না । একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন অন্তত ৭ থেকে ৯ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন, যা অধিকাংশ সময়েই পূরণ হয় না ।
সঠিক পরিমানে ঘুম না হওয়ার অনেক কারন হতে পারে, তবে বর্তমানে সবথেকে বেশী যে কারনে আমাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে তা হল – মোবাইল বা ল্যাপটপের স্ক্রিন । এছাড়া ঘুমের কোনো নির্দিস্ট সময় বা প্যাটার্ন না থাকলেও ঘুমের বিঘ্ন হয় । অত্যাধিক মানসিক চাপ বা শারীরিক সমস্যার কারনেও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে, তবে সেটা সাময়িক সমস্যা । কিন্তু যদি এই ধরনের সমস্যা দীর্ঘকাল ঘরে চলে তবে তা চিরস্থায়ী সমস্যাতেও পরিনত হতে পারে ।
Table of Contents
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বা চিকিৎসকদের মতানুসারে সঠিক পরিমানে ঘুমের ফলে বেশ কিছু শারীরিক এবং মানসিক উপকারীতা দেখা যায়, যেগুলি নীচে আলোচনা করা হয়েছে ।
ঘুমের মান এবং সময়, হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের উপরে গভীরভাবে প্রভাব ফেলে । সঠিক পরিমানে ঘুম না হলে রক্তচাপ বৃদ্ধির সম্ভাবনা বেড়ে যায়, যা ক্রমান্বয়ে হৃদযন্ত্রের সমস্যা সৃষ্টি করে । Sleep Foundation এর তথ্য অনুযায়ী, যথাযথ ঘুমের অভাবে উচ্চরক্তচাপের সমস্যা তৈরী হয় যা হৃদযন্ত্রের জটিল সমস্যা তোইরী করে ।
ভালো খাদ্যাভ্যাস এবং শরীরচর্চার পাশাপাশি সঠিক মানের ঘুম আমাদের হৃদযন্ত্রকে ভালোভাবে কাজ করতে এবং সুস্থ থাকতে সাহায্য করে ।
সঠিক মানের ঘুম না হলে আমাদের শরীরে ইনসুলিন প্রতিরোধ তৈরী হয়, যা ডায়েবেটিসের পুর্বাভাস হিসেবে মানা হয় । ইনসুলিন একধরনের হরমোন যা গ্লুকোজকে শক্তিতে রুপান্তরিত করতে সাহায্য করে । ইনসুলিন প্রতিরোধের ফলে, এই হরমোনের সঠিক পদ্ধতিতে ব্যাবহার প্রতিহত হয়, যা ডায়েবেটিসে পরিণত হতে পারে ।
১৫ জন ব্যক্তির উপরে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এক সপ্তাহ কম পরিমান ঘুমের ফলে তাদের মধ্যে ডায়েবেটিসের পূর্বলক্ষণ দেখা গেছে ।
আমরা যখন ওজন নিয়ন্ত্রনের কথা বলি, সেইসময় মূলত গুরুত্ব পায় সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং শরীরচর্চা । আমরা সবাই জানি যে স্বাস্থ্য কর খাদ্য এবং নিয়মিত শরীরচর্চার ফলে ওজন নিয়ন্ত্রন করতে পারি কিন্তু মজাদার ব্যাপার হল এসবের পাশাপাশি ঘুম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা অনেকসময় আমরা উপেক্ষা করে ফেলি ।
‘সঠিক পরিমানে ঘুম না হওয়ার ফলে ওজন বৃদ্ধি’ – এটি যদিও প্রমাণসাপেক্ষ, তবে কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যথাযথ ঘুম না হলে নানা রকম সমস্যা দেখা যায় যার ফলে স্থুলতা বা ওজন বৃদ্ধি ঘটে ।
সঠিক পরিমাপ এবং সঠিক মানের ঘুম মস্তিষ্ককে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে । যখন আমরা ঘুমাই, আমাদের মস্তিষ্ক পরবর্তী কার্যকলাপের জন্য প্রস্তুতি নেয়, যা পরোক্ষভাবে উৎপাদনশীলতা এবং মনোযোগ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে ।
উপযুক্ত ঘুমের অভাব আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্মের উপরে যথেষ্ট প্রভাব ফেলে, যেমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা, সমস্যার সমাধান করতে পারা, অল্পেতে রেগে যাওয়া বা উত্তেজিত হয়ে পরা ইত্যাদি ।
বিষন্নতা একধরনের মানসিক সমস্যা, যা আমাদের যে কারোরই হতে পারে । এর ফলে হতাশা, অসহায়বোধ, অকারনে মন খারাপ হওয়ার মত সমস্যা দেখা যায় । ঘুম কম হলে বা ঘুমের সমস্যা থাকলে আমরা বিভিন্ন মানসিক ও শারীরিক সমস্যায় ভুগি, যা ক্রমান্বয়ে আমাদের বিষন্নতার দিকে ঠেলে দেয় ।
আবার অপরদিকে বিষন্নতার কারনেও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে, যা ধীরে ধীরে জটিল সমস্যায় পরিনত হয় । তবে আমাদের ভাবার বিষয় হল – ঘুম কম হওয়ার ফলে বিষন্নতা’ । ঘুম কমের সঙ্গে বিষন্নতার সরাসরি কোনো সংযোগ না থাকলেও, ঘুমের সমস্যার ফলে আমাদের বেশ কিছু মানসিক ও শারীরিক সমস্যা দেখা যায় । যা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে একপর্যায়ে Depression বা বিষন্নতায় পরিনত হয় ।
ভালো ঘুম অর্থাৎ সঠিক মান এবং মাপের ঘুম আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রন করতে সাহায্য করে । একইরকমভাবে ঘুমের সমস্যা বা কম পরিমান ঘুমের ফলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে । গবেষনায় দেখা গেছে, যাদের উপযুক্ত পরিমান ঘুমের অভাব থাকে, তারা খুব সহজেই অসুস্থ হয়ে পড়ে । বিশেষত ভাইরাস ঘটিত রোগ যেমন সাধারন সর্দি-কাশি বা ঠান্ডা লাগা ইত্যাদি খুব সহজেই প্রভাব ফেলে ।
উপযুক্ত ঘুমের অভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়, যার ফলে শুধুমাত্র সহজেই অসুস্থ হয়ে পড়ে এমন নয় । এর পাশাপাশি একজন অসুস্থ মানুষ সুস্থ হতে সাধারনের তুলনায় অনেকবেশী সময় নেয় ।
সঠিক পরিমানে ঘুমের উপকারীতা বা কম ঘুমের ফলে যে ধরনের সমস্যা হতে পারে তার মধ্যে কয়েকটি নিয়ে এখানে আলোচনা করা হল । একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের কত ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন বা কোন সময়ে ঘুমানো উচিৎ সবটাই নির্ভর করে তার দৈনন্দিন জীবনযাপনের উপরে । জীবিকার সময়ের উপর নির্ভর কর একজন মানুষ তার ঘুমের সময় ঠিক করতে পারে, অর্থাৎ রাতে ঘুমাবে না দিনের বেলায় । আবার সারাদিনের পরিশ্রমের পরিমানের উপর নির্ভর করে একজন মানুষের কত ঘন্টা ঘুম প্রয়োজন ।
ঘুম যতক্ষণ হোক বা যে সময়েই হোক প্রত্যকের ঘুমের মানের উপরে লক্ষ্য রাখা উচিৎ, কারণ ঘুমের মানের উপর নির্ভর করে ঘুম থেকে ওঠার পরে আমাদের সারাদিন কেমন কাটবে । আপনি যদি ঘুমের সমস্যায় ভোগেন, তাহলে ছোট ব্যাপার বলে অবহেলা করবেন না । মেডিটেশন আমাদের স্নায়ুকে শান্ত করে ঘুমাতে সাহায্য করে, সুতরাং কিছুদিন মেডিটেশন অভ্যাস করতে পারেন । প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নিতে পারে ।
ঘুম সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে আমাদের নীচে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন । আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব উত্তর দিয়ে আপনাকে সাহায্য করার ।
সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন এবং অন্যদের সুস্থ থাকতে উৎসাহিত করুন ।
আমরা সাধারনত একটা কথা বলে থাকি যে কোনোকিছুই অতিরিক্ত ভালো না । এই একই কথা…
শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক উন্নতিসাধনের জন্য প্রাচীনকাল থেকেই একটি বহুল প্রচলিত অভ্যাসের নাম হল “যোগ”…
‘স্বাস্থ্য’ কথাটা শুনলে আমরা সাধারনভাবে শুধু শরীরের কথাই ভেবেথাকি, ঠিক পদ্ধতিতে জীবনযাপনের ক্ষেত্রে শারীরিক স্বাস্থ্যের…
প্রাচীনকাল থেকে যেসকল কৃষিজ শষ্য মানবজাতির কাছে খাদ্যবস্তু হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে তার মধ্যে ডাল (Lens…
সূচনা (Introduction) প্রোটিন (Protein) একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাক্রোনিইট্রিয়েন্ট (Macronutrient) যার উৎস (protein sources) আমাদের প্রতিদিনের গ্রহন…
যোগাভ্যাসের বিভিন্ন ধরনের আসন, যা আমাদের দেহের নীচের অংশ যেমন পা, কোমর পেট এবং পিঠ…