Meditation

প্রতিদিন হাঁটার উপকার (Benefits of Daily Walk)

প্রতিদিন নিয়ম করে হাঁটা সকলের জন্য উপকারী (benefits of walk) এটা আমরা সবাই জানি। নিয়মিত হাটার ফলে আমরা শুধুমাত্র শারীরিক নয়, তার সঙ্গে মানসিক দিক থেকেও উপকার পেতে পারি । হাঁটার ফলে সব বয়সের মানুষ প্রচুর উপকার পেতে পারেন এটা যেমন ঠিক তেমনই বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন সেটাও আমাদের জানতে হবে ।

প্রতিদিন হাঁটার উপকারিতা (benefits of daily walk)

১. হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে সাহায্য করে

প্রতিদিন হাঁটা সবথেকে সহজ একটা ব্যায়াম যার ফলে আমাদের  শরীরের রক্তচলাচল উন্নত করে, ফলে হৃদযন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়ে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

২. ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে

নিয়মিত হাঁটা বেশকিছু শারীরিক উপকারের পাশাপাশি ওজন নিয়ন্ত্রন করতেও সাহায্য করে। যারা অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চিন্তিত, তাদের জন্য প্রতিদিন হাঁটা একটি কার্যকর অভ্যাস। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত হাঁটা মাত্রাতিরিক্ত চর্বি গলাতে এবং স্থূলতা হ্রাস করতে সাহায্য করে ।

৩. মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে

প্রতিদিন হাঁটার ফলে আমাদের শরীর এবং মস্তিষ্কে রক্ত-চলাচল বৃদ্ধি পায়, যা আমাদের মানসিক উত্তেজনা এবং চাপ কমিয়ে মন ভালো রাখতে সাহায্য করে । যেকোনো ধরনের শরীরচর্চার ফলে শারীরিক উপকারের পাশাপাশি একধরনের রাসায়নিক তরল ক্ষরণ হয় যা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে ।

৪. জয়েন্টে ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে

নিয়মিত হাঁটার ফলে আমাদের শরীরের নিম্নাংশ মূলত হাটু বা বিভিন্ন জয়েন্টের সচলতা বৃদ্ধি পায় । ফলে জয়েন্টে ব্যাথা কমে এবং কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে যারা বাতের ব্যাথায় ভোগেন, নিয়মিত হাঁটার ফলে তাদের কষ্ট অনেকটা কম হয় ।   

৫. পেশি ও হাড় মজবুত করে

হাঁটার ফলে শরীরের নিম্নাংশের অর্থাৎ পায়ের পেশি ও হাড় শক্তিশালী হয়। বিশেষ করে যারা সমতলে না হেটে একটু উচু-নীচু পথে বা পাহাড়ি রাস্তায় হাটা-চলা করে তাদের পায়ের পেশি মজবুত হয়।

৬. ঘুমের মান উন্নত করে

যারা নিয়মিত হাঁটেন, দেখা গেছে তাদের ঘুম খুব ভালো হয় । যেকোনো ধরনের শরীরচর্চা মেলাটোনিন (Sleep Hormone) ক্ষরণ বৃদ্ধি করে, তাই নিয়মিত হাঁটা ঘুমের মান উন্নত করতে সাহায্য করে ।

এইরকম বেশকিছু শারীরিক উপকারীতার (benefits of walk) পাশাপাশি আরও কিছু উপকারীতা পাওয়া যায় যেগুলি কোনো গবেষণার মাধ্যমে হয়তো প্রমান করা যাবে না ।

সৃজনশীলতার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা যখন বাইরে কোথাও হাটতে যায়, তাদের মন অনেক বেশী সতেজ হয় ফলে সৃজনশীল চিন্তাভাবনা আরও প্রখরভাবে কাজ করে । এছাড়া চারপাশের পরিবেশ থেকে অনেক সময় বিভিন্ন রকমের আইডিয়া তৈরী হয় যা তাদের শিল্পের কাজে ব্যবহার করতে পারেন । যেমন একজন চিত্রশিল্পী অনেকসময়ই তার চিত্রের অনুপ্রেরণা তার চারপাশের পরিবেশ থেকেই পেয়ে থাকেন ।

কিভাবে শুরু করবেন

আমরা জানি হাঁটার জন্য তেমন কোনো সরঞ্জামের প্রয়োজন নেই। একটা সঠিক জুতো এবং সময়োপযোগী পোশাক আপনার হাঁটার রুটিনের জন্য যথেষ্ট । প্রাথমিকভাবে বাড়ির কাছে কোনো মাঠ বা পার্ক ব্যবহার করা যেতে পারে ।

হাটার সময়ে কোনো পোষ্য থাকলে সঙ্গে নিতে পারেন, অথবা বাড়ির কোনো সদস্য আপনার সঙ্গী হলে হাঁটা আপনার জন্য বোরিং হবে না।

যারা সময়ের অভাবে প্রতিদিন সকালে হাটতে পারেন না, যদি পাবলিক পরিবহন যেমন বাস, অটো বা ট্যাক্সি ব্যবহার করেন, তারা বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে নেমে যেতে পারেন । এরপরে বাকি পথ পায়ে হেটে বাড়ি ফিরিতে পারেন ।

সতর্কতা

হাঁটার ফলে আমাদের শারীরিক উন্নতি (benefits of walk) হয় এটা আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি । কিন্তু হাঁটার সময় কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।

  • হাঁটার জন্য আরামদায়ক এবং মাপসই জুতো পরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক জুতো কোনোরকম আঘাত থেকে রক্ষা করার সঙ্গে পায়ের উপরে অযাচিত চাপ পড়া থেকেও রক্ষা করবে ।
  • হাঁটার সময় বিশেষত গ্রীষ্মকালে প্রচুর ঘাম হয়ে শরীরে জলাভাব ঘটতে পারে । সুতরাং জলের অভাব দূর করার জন্য হাঁটার আগে এবং পরে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করুন।
  • আবহাওয়ার উপযোগী পোশাক পরুন। গরমের সময় হালকা সুতির কাপড় এবং শীতকালে উষ্ণ পোশাক পরা জরুরি। তবে হাঁটার সময় একটু ঢিলেঢালা পোশাক শ্রেয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিজের সুরক্ষার কথা ভেবে বাইরে না বেড়িয়ে বাড়ির মধ্যেই হাল্কা কিছু ব্যায়াম করুন ।
  • যদি আপনি রাস্তায় হাঁটেন, তবে যানবাহনের দিকে নজর রাখুন। খুব ভোরে বা সন্ধ্যায় হাঁটার সময় অবশ্যই গাড়ি চলাচলের রাস্তা ব্যবহার করবেন না । ব্যস্ত রাস্তায় কানে হেডফোন ব্যবহার না করাই ভালো, এতে বিপদের ঝুঁকি এড়ানো যায় ।
  • যদি কোনো দীর্ঘস্থায়ী বা ক্রিটিকাল শারীরিক সমস্যা থাকে, তাহলে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া একান্ত প্রয়োজন ।

সারমর্ম

প্রতিদিন হাঁটা আপনার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাসে পরিণত করতে পারেন। এটি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন করে দীর্ঘমেয়াদে আপনার জীবনযাত্রার মান উন্নত করে। তবে হাঁটার সময় প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বন করলে এই অভ্যাসটি আরও উপকারী হয়ে উঠবে এবং সম্ভব হলে নিজের শারীরিক ও মানসিক উন্নতি পর্যবেক্ষন করুন । এটি আপনাকে নিয়মিত হাটতে উৎসাহ প্রদান করবে ।

তাই আর দেরি না করে আজ থেকেই হাঁটার অভ্যাস শুরু করুন এবং সুস্থ জীবনযাত্রার দিকে এক ধাপ এগিয়ে যান।

How useful was this post?

San

Recent Posts

মেডিটেশনের খারাপ প্রভাব (Adverse Effect of Meditation)

আমরা সাধারনত একটা কথা বলে থাকি যে কোনোকিছুই অতিরিক্ত ভালো না । এই একই কথা…

4 months ago

প্রতিদিন যোগাভ্যাসের উপকারীতা (Benefits of Practicing Yoga for Everyday)

শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক উন্নতিসাধনের জন্য প্রাচীনকাল থেকেই একটি বহুল প্রচলিত অভ্যাসের নাম হল “যোগ”…

4 months ago

মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব (Importance of Mental and Physical Health)

‘স্বাস্থ্য’  কথাটা শুনলে আমরা সাধারনভাবে শুধু শরীরের কথাই ভেবেথাকি, ঠিক পদ্ধতিতে জীবনযাপনের ক্ষেত্রে শারীরিক স্বাস্থ্যের…

10 months ago

ডাল – প্রোটিনের উৎস (Lentils – Protein Source)

প্রাচীনকাল থেকে যেসকল কৃষিজ শষ্য মানবজাতির কাছে খাদ্যবস্তু হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে  তার মধ্যে ডাল (Lens…

1 year ago

নিরামিষাশীদের জন্য প্রোটিনের উৎস (Veg Protein Sources)

সূচনা (Introduction) প্রোটিন (Protein) একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাক্রোনিইট্রিয়েন্ট (Macronutrient)  যার উৎস (protein sources) আমাদের প্রতিদিনের গ্রহন…

2 years ago

প্ল্যাঙ্ক (Plank Pose) – পদ্ধতি, উপকারীতা

যোগাভ্যাসের বিভিন্ন ধরনের আসন, যা আমাদের দেহের নীচের অংশ যেমন পা, কোমর পেট এবং পিঠ…

2 years ago