রাগ বা anger মানুষের একটা সহজাত প্রবৃত্তি ও স্বাভাবিক আবেগ । আমরা মানসিক বা শারীরিকভাবে যখন আহত হই, তখন রাগের বহিঃপ্রকাশ হয় । যতক্ষণ রাগ নিজের নিয়ন্ত্রনে থাকে, ততক্ষণ সব ঠিক আছে, এবং এটা একদিক থেকে ভালো । এতে যে বিষয়ে রাগ হয়, সেটা তৎক্ষণাৎ মিটে যায় । রাগ যদি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায় তাহলে সেটা বেশ সমস্যার ব্যাপার । সেক্ষেত্রে রাগ নিয়ন্ত্রন (anger management) করা দরকার, এবং নিয়মিত মেডিটেশন অভ্যাসের ফলে আপনার রাগ প্রশমিত হতে পারে ।
রাগ নিয়ন্ত্রন করা একান্ত প্রয়োজন যদি সেটা নিজের আয়ত্তের বাইরে চলে যায়, নাহলে এমন কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় যার রেশ হয়তো সারাজীবন থেকে যায় । রাগ শুধু আমাদের মানসিক শান্তি নষ্ট করে এমন নয় । যারা সবসময় রেগে বা হতাশাগ্রস্থ থাকেন তাদের কর্টিসল (cortisol) স্তর তুলনামূলক বেশী ফলে স্নায়ুর উপর অনেক বেশী চাপ পড়ে । এইধরনের শারীরবৃত্তিয় বিক্রিয়ার ফলে যেধরনের শারীরিক সমস্যা হতে পারে সেগুলি হল – মাথায় যন্ত্রনা, উচ্চ রক্তচাপ, অনিদ্রা, বিষন্নতা, হতাশা ইত্যাদি । এছাড়া অনবরত মানসিক চাপের ফলে নেতিবাচক মনোভাবের প্রবনতাও দেখা যায় ।
Table of Contents
রাগ ভালো কিন্তু অতিরিক্ত রাগ কখনোই ভালো না এবং আমরা সবাই সেটা জানি । ছোট থেকে আমাদের শেখানো হয় ‘রাগ করা উচিৎ নয়’ কিন্তু কখনোই এটা শেখানো হয় না যে রাগ হলে সেটা কিভাবে সামলাতে হয় বা নিয়ন্ত্রন কিভাবে করতে হয় ।
রাগ আসলে আমাদের আবেগ যার সৃষ্টি হয় যখন কোনো কিছু ঘটে যা আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অথবা অপছন্দের । এর মানে কখনোই এটা নয় যে এরকম পরিস্থিতিতে আমরা সর্বদাই ভুল অথবা সর্বদাই ঠিক, কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত রাগের ফলে আমাদের অনেকসময় অপ্রস্তুত হতে হয় ।
রাগ নিয়ন্ত্রনের জন্য মেডিটেশন অভ্যাস একটি কার্যকরী পদ্ধতি । নিয়মিত mindfulness অভ্যাসের ফলে বিরক্তি, হতাশা, উৎকণ্ঠা এইধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় । এর পাশাপাশি আমাদের রাগ হওয়ার কারন সম্পর্কে অবহিত হওয়া এবং সেই কারনের যথার্থতা বিচার করার মত মানসিকতা তৈরী হয় ।
নিয়মিত মেডিটেশন অভ্যাসের আরও একটি ভালো দিক হল মানুষের নেতিবাচক আবেগগুলি গুরুত্ব দিয়ে বিচার করার এবং সেগুলি সম্পর্কে অযাচিতভাবে উত্তেজিত না হয়ে স্থিরমস্তিষ্কে সেগুলিকে বিচার করার মানসিকতা তৈরী হয় ।
Mindfulness meditation নিয়মিত অভ্যাসের ফলে আমাদের গ্রহন করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় । যখন আমরা কোনোকিছু বিপরীতে অবস্থিত ব্যাক্তি বা পরিস্থিতির মত করে গ্রহন করতে শিখি, তখন আমরা মানসিকভাবে অনেক শান্তি অনুভব করি, যার ফলে রাগ করার প্রবনতা কমে যায় ।
নিয়মিত mindfulness অভ্যাসের ফলে আমরা বর্তমানে যা ঘটছে সেগুলিতে মনোযোগ দিই এবং সেগুলির মধ্যে ইতিবাচক দিক বেছে নেওয়ার চেষ্টা করি । অতীত বা ভবিষ্যতের নানারকম চিন্তায় নিজেদের ব্যস্ত রেখে নিজেদেরকে হতাশাগ্রস্থ করে তুলি না ।
নিয়মিত mindfulness এর অভ্যাসের ফলে আমাদের চারিত্রিক এবং মানসিক কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটে, যা আমাদের যেকোনো আবেগ বা অনুভূতির বহিঃপ্রকাশের পদ্ধতিতে তারতম্য ঘটায় ।
কোনো একটা নির্দিস্ট পরিস্থিতির কারনে আমরা বিরক্ত হই, যা ক্রমান্বয়ে রাগে পরিনত হয় । কোনো অযাচিত কারনে আমরা অনেক সময় বিরক্ত হই, কিন্তু সেটাকে প্রশমিত না করে উল্টে সেটা নিয়ে চিন্তা করলে, ভয় পেলে আস্তে আস্তে সেটা রাগের পর্যায়ে চলে যায় । নিয়মিত মেডিটেশন অভ্যাসের ফলে কোনো পরিস্থিতিকে কিভাবে গ্রহনযোগ্য করে তুলতে হয় আমরা সেটা শিখতে পারি ।
মেডিটেশন অভ্যাসের ফলে নিজের উপর নিয়ন্ত্রন তৈরী হয়, যার ফলে যেকোনো অপ্রিয় পরিস্থিতিতে আমরা হঠাৎ করে রেগে না গিয়ে সেটাকে বিচার বিবেচনা করে তারপরে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি । মেডিটেশন আমাদের যেকোনো আবেগ যেমন রাগ নিয়ন্ত্রন (anger management) করতে শেখায় ।
রাগ করে আমরা অনেকসময় নিজেদেরই ক্ষতি করে ফেলি সেটা শারীরিক বা মানসিক যেমনই হোক । তাই রাগ নিয়ন্ত্রন করা একান্ত দরকার । এর জন্য মেডিটেশন অভ্যাস একটা সহজ এবং আকর্ষনীয় উপায় । নিয়মিত মেডিটেশন অভ্যাসের ফলে শুধুমাত্র রাগ নিয়ন্ত্রন হয় এমন নয় । মানসিক শান্তি পাওয়া, চাপ এবং উত্তেজনা কমা এইধরনের বেশকিছু উপকারীতা পাওয়া যায় । প্রতিদিন অন্তত ১৫-২০ মিনিটের অভ্যাস নিজের উপর নিয়ন্ত্রন আনতে সাহায্য করে ।
আশা করি এই নিবন্ধটি আপনাকে বেশ খানিকটা সাহায্য করবে আপনার রাগ সম্পর্কে অবহিত হওয়ার ক্ষেত্রে । কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানান । ইমেল বা মেসেজের মাধ্যমেও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন ।
সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন এবং অন্যদের সুস্থ থাকতে উৎসাহিত করুন ।
আমরা সাধারনত একটা কথা বলে থাকি যে কোনোকিছুই অতিরিক্ত ভালো না । এই একই কথা…
শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক উন্নতিসাধনের জন্য প্রাচীনকাল থেকেই একটি বহুল প্রচলিত অভ্যাসের নাম হল “যোগ”…
‘স্বাস্থ্য’ কথাটা শুনলে আমরা সাধারনভাবে শুধু শরীরের কথাই ভেবেথাকি, ঠিক পদ্ধতিতে জীবনযাপনের ক্ষেত্রে শারীরিক স্বাস্থ্যের…
প্রাচীনকাল থেকে যেসকল কৃষিজ শষ্য মানবজাতির কাছে খাদ্যবস্তু হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে তার মধ্যে ডাল (Lens…
সূচনা (Introduction) প্রোটিন (Protein) একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাক্রোনিইট্রিয়েন্ট (Macronutrient) যার উৎস (protein sources) আমাদের প্রতিদিনের গ্রহন…
যোগাভ্যাসের বিভিন্ন ধরনের আসন, যা আমাদের দেহের নীচের অংশ যেমন পা, কোমর পেট এবং পিঠ…